Ajker Patrika

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বন্দুক ব্যবহারের অনুমতি দেবে আসাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৪৭
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ছবি: এএনআই
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ছবি: এএনআই

ভারতের আসাম রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ‘আদিবাসী’ বাসিন্দাদের জন্য বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়ার একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই ঘোষণা দিয়েছেন, যা আসামের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ঘোষণা করেন, একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হচ্ছে, যেখানে ‘আদিবাসী মানুষ, যাঁরা নিজেদের জীবনের জন্য হুমকি অনুভব করেন এবং সংবেদনশীল এলাকায় থাকেন, তাঁরা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন’।

হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, এই লাইসেন্সগুলো বহু স্তরের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে নিরাপত্তা মূল্যায়ন, যাচাইকরণ, আইন মানা, লাইসেন্স হস্তান্তর না করার শর্ত এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করার মতো বিষয়। জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত বা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দ্বারা অনিরাপদ বলে বিবেচিত এলাকার বাসিন্দারা এই লাইসেন্সের জন্য যোগ্য হবেন।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বাধীন রাজ্য মন্ত্রিসভা সীমান্তবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত ‘মূল বা আদিম ভারতীয় নাগরিকদের’ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার এই পদক্ষেপকে পুলিশ স্টেশন থেকে দূরে থাকা ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকার মানুষদের নিরাপত্তা জোরদার করার একটি উপায় বলে ব্যাখ্যা করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বারপেটা, ধিং, ধুবরি, জানিয়া, মরিগাঁও, নগাঁও, রুপাহি ও দক্ষিণ সালমারা-মানকাচরের মতো জেলাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। এই এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের শিকড় থাকা মুসলিমদের সংখ্যা বেশি।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্যে মুসলিমরা প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, অসমীয়াভাষী জনগণ বাংলাদেশের দিক থেকে, এমনকি তাঁদের নিজেদের গ্রামেও হুমকির সম্মুখীন।

ভারতের অন্যান্য অংশে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের আইন বেশ কঠোর। তাই শর্মার এই সিদ্ধান্ত সমালোচিত হচ্ছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি গৌরব গগৈ বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন একটি কৌশলকে উৎসাহিত করছে, যা জনগণের মৌলিক চাহিদার চেয়ে অস্ত্রের ওপর বেশি জোর দেয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই নীতি রাজ্যে সংঘর্ষ ও চাঁদাবাজি বাড়াতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সমর্থকদের অস্ত্র দেওয়ার জন্য এই বন্দুকের অপব্যবহার করা হতে পারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী শর্মার এই উদ্যোগ তাঁর বিজেপি সরকারের একটি বৃহত্তর প্রচারণার অংশ। তাঁর সরকার অসমীয়াভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে ‘অবৈধ বিদেশি বা সন্দেহজনক নাগরিক’ আখ্যা দিয়ে বড় আকারের উচ্ছেদ অভিযানও অন্তর্ভুক্ত। এই অভিযানগুলো মূলত বাংলাভাষী মুসলিমদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়, যাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিক এবং আসামে তাদের দীর্ঘদিনের শিকড় রয়েছে।

২০১৯ সালে আসামই প্রথম রাজ্য হিসেবে একটি বিতর্কিত নাগরিকত্ব যাচাইপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে, যা থেকে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাদ পড়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। গত বছর বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে আসামে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে সীমান্তবর্তী জেলার আদিবাসী মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট সংকটে ভাড়া বেঁধে দিল সরকার, ৫০০ কিমি রুটে সর্বোচ্চ ৭,৫০০ রুপি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন ইন্ডিগো টানা পাঁচ দিন ৩৮৫টি ফ্লাইট বাতিল করায় আজ শনিবার বিমান ভাড়ায় সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে ভারত সরকার। বলা হয়েছে, ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বের একমুখী যাত্রার ভাড়া সাড়ে সাত হাজার রুপির বেশি হতে পারবে না। আর এক থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বের যাত্রার জন্য (যেমন—দিল্লি-মুম্বাই রুট) বিমান ভাড়া ১৫ হাজার রুপির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্ডিগোর ফ্লাইট বাতিলে বেঙ্গালুরু ও মুম্বাই বিমানবন্দরের বাইরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। এতে দেশজুড়ে বিমান যোগাযোগ কার্যত ভেঙে পড়েছে।

মূলত পাইলট সংকটের কারণে চলতি সপ্তাহে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করে ইন্ডিগো। পাইলটদের কর্মঘণ্টা সীমিত করার নতুন নিয়মের জন্য আগাম পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ভারত সরকার গতকাল শুক্রবার চলমান পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় এয়ারলাইনটির জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেয় এবং বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভিড় কমাতে অতিরিক্ত ট্রেন চালুর ব্যবস্থা করে।

দিল্লি বিমানবন্দর আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানায়, ধীরে ধীরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে ফ্লাইট বাতিলের হার এখনো বেশি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্ডিগোর ফ্লাইট বাতিলের কারণে ভারতের অন্যান্য এয়ারলাইনের জনপ্রিয় রুটের ভাড়া বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ তাই বিমান ভাড়ায় সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হলো।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রিয়েল-টাইম ডেটা ও এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ভাড়ার মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বিমান ভাড়া বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের চাটুকারিতায় নষ্ট যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক: সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি

সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন দাবি করেছেন, পাকিস্তানের ‘চাটুকারিতা’ ও ‘ঘুষে’ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘চরম অযোগ্যতার’ কারণেই ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুবিন জানান, ট্রাম্পের আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা ‘হতবাক’। কারণ তাঁর নীতির ফলে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এর পেছনে কী ‘পাকিস্তানের চাটুকারিতা, নাকি ঘুষ’ কাজ করেছে?

রুবিন বলেন, ‘আমাদের অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে নষ্ট করে দিলেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন, তিনি আসলে কিসে প্ররোচিত হলেন। হয়তো পাকিস্তানের তোষামোদ। অথবা পাকিস্তান বা তাদের পৃষ্ঠপোষক তুরস্ক ও কাতারের ঘুষ ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে... কিন্তু এটি এমনই এক ভয়াবহ ঘুষ, যার বোঝা আমেরিকাকে দশকের পর দশক কৌশলগত ঘাটতির মুখে ফেলবে।’

রুবিন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রুশ তেল কেনা নিয়ে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ চেষ্টা করছে। অথচ ওয়াশিংটন নিজেই মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে—এটা ‘ভন্ডামি’। তিনি জানান, ভারতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নয়াদিল্লির অবস্থান যৌক্তিক।

রুবিন বলেন, ‘আমেরিকানরা কী বোঝেন না, যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই তাঁরা নির্বাচিত করেছেন। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। খুব শিগগিরই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়া ছাড়া আমাদের বিকল্প বাজার নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য। এই অবস্থায় ভারতকে রুশ পণ্য কিনতে বাধা দেওয়া এক ধরনের ভন্ডামি।’

তিনি বলেন, ‘ভারতকে উপদেশ দেওয়ার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করা। যদি আমরা তা দিতে না পারি, তবে সবচেয়ে ভালো চুপ থাকা। কারণ ভারতকে সবার আগে তার নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হয়।’

উল্লেখ্য, ট্রাম্প চলতি বছরের আগস্টে ভারতের বেশির ভাগ পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, নয়াদিল্লির রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখা।’

এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৪ ডিসেম্বর ভারত পৌঁছান ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ বৈঠকে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি পুতিনকে ভারতের প্রতি তাঁর ‘অটল অঙ্গীকারের’ জন্য ধন্যবাদ জানান।

পুতিন মোদিকে বলেন, ‘রাশিয়া ভারতের জ্বালানি খাত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তেল, গ্যাস, কয়লা এবং সব ধরনের সম্পদের নির্ভরযোগ্য জোগানদাতা। দ্রুতবর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আমরা অবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।’ শুক্রবার রাতে পুতিন ভারতের সফর শেষ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ইমরান খান ‘গাদ্দার’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত—পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিবৃতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ১৯
শেখ মুজিবুর রহমান ও ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত
শেখ মুজিবুর রহমান ও ইমরান খান। ছবি: সংগৃহীত

কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি’ আখ্যা দিয়েছেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এক উত্তপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইমরান খানের ‘সশস্ত্র বাহিনীবিরোধী প্রচার’ নিয়ে কঠোর বক্তব্য দেন। অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘গাদ্দার’ বলেন এই পাক সেনা কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল চৌধুরী দাবি করেন, ‘ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছেন, বিদেশি শক্তির সঙ্গে সমন্বয় করছেন এবং নানা ভুল তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন।’ তাঁর ভাষ্য, পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতেই’ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তিনি। এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রের ওপরে কেউ নয়।’

ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করে আইএসপিআর মহাপরিচালক বলেন, একজন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব—যাঁর নাম না নিলেও সবার জানা—নিজের অহংকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে তিনি মনে করেন, ‘আমিই কিছু।’ এই বিভ্রান্তিকর মানসিকতার কারণেই তাঁর বয়ান ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে’ পরিণত হয়েছে।

জেনারেল চৌধুরী অভিযোগ করেন, ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে বৈঠকের পরপরই বারবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর বার্তা পাঠান এবং এসব বার্তা পরে বিদেশি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘সমন্বিত প্রচারাভিযান’ হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও দাবি করেন, ইমরান খান নিজের তত্ত্বাবধানে একটি ‘বৈজ্ঞানিক ও সমন্বিত ট্রোল নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছিলেন, যেটি নিয়মিতভাবে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানায়।

শেখ মুজিবুর রহমানকে জড়িয়ে বক্তব্য

সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল চৌধুরী বলেন, ইমরান খান নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বারবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিজের তুলনা করেন এবং অতীতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘বিকৃত ব্যাখ্যা’ দেন।

আইএসপিআর ডিজি বলেন, ‘আপনাদের আরও একটা উদাহরণ দিই। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া টুইট দেখলে বুঝবেন, তিনি গাদ্দার শেখ মুজিব রহমানের কত ভক্ত, তাঁর কারণে কত দুঃখ তাঁর! বারবার তাঁকে কোট করে এবং তাঁর উদাহরণ দেয়। কারণ, তিনি মনে করেন, তিনিই সব বোঝেন, বাকিরা সব ভুল।’

আইএসপিআর মহাপরিচালক অভিযোগ করেন, ইমরান খানের প্রচারের সঙ্গে ভারত, আফগানিস্তান এবং বিদেশে থাকা ট্রোল নেটওয়ার্কগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘একটি টুইটের পরপরই বিদেশি অ্যাকাউন্টগুলো যেভাবে ক্রমান্বয়ে সাড়া দেয়, তাতে বোঝা যায়—এটি সংগঠিত প্রচারণা।’ তাঁর দাবি, সাম্প্রতিক এক পোস্টে ইমরান খান তাঁর অনুসারীদের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে বলেছেন, যা সরাসরি নিরাপত্তার ওপর আঘাত।

জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘যে কেউ সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করবে, সেনাবাহিনীও তার জবাব দেবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের বাহিনী নয়—এটি কেবল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে নরম হতে পারে না এবং ‘খারেজি’ জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ইমরান খানের পক্ষ থেকে ‘জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার’ ইঙ্গিতকে তিনি ‘রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান’ বলে উল্লেখ করেন।

পরিশেষে পাকিস্তানের গণমাধ্যমকে ‘তথ্যভিত্তিক’ সংবাদ পরিবেশন এবং ‘মিথ্যা প্রচারে পা না দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে জেনারেল চৌধুরী বলেন, দেশের পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্যনিরাপত্তা, জনসংখ্যা সংকট—এসব প্রকৃত সমস্যা নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব ঠেকাতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ বৈধ কি না, সিদ্ধান্ত দেবেন সুপ্রিম কোর্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে,ন দেশটিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনা বৈধ কি না, তা তাঁরা পর্যালোচনা করবেন। অভিবাসন সীমিত করার তাঁর উদ্যোগের একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ এটি, যা কার্যকর হলে ঊনবিংশ শতাব্দীর সংবিধান সংশোধনী এত দিন যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সে ধারণাই পাল্টে যাবে।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, বিচার মন্ত্রণালয়ের করা আপিল গতকাল গ্রহণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। ওই আপিলটি নিম্ন আদালতের এক রায়ের বিরুদ্ধে—যে রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ স্থগিত করা হয়েছিল। সেই আদেশে মার্কিন সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যদি কোনো শিশুর মা-বাবা কেউই মার্কিন নাগরিক না হন বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী) না হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো সেই শিশুকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিতে।

নিম্ন আদালত রায় দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করা ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন।

সুপ্রিম কোর্ট চলতি মেয়াদেই যুক্তিতর্ক শুনবেন এবং আগামী জুনের শেষ নাগাদ রায় দিতে পারেন। যুক্তিতর্কের জন্য এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি এই আদেশে স্বাক্ষর করেন। বৈধ ও অবৈধ—দুই ধরনের অভিবাসন দমনে তিনি যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন, তার অংশই ছিল এটি।

অভিবাসন নিয়ে তাঁর অবস্থান দুই মেয়াদেই মার্কিন রাজনীতির সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি; যেখানে সমালোচকেরা তাঁকে বর্ণ ও ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের অভিযোগ এনে সমালোচনা করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীকে দেশটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দিচ্ছে, এই সংশোধনী অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান বা দেশে বৈধভাবে থাকলেও অস্থায়ীভাবে থাকা ব্যক্তি, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা কর্মভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন বলেন, এই মামলার পরিণতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের পবিত্রতা—দুইয়ের ওপরই গভীর প্রভাব ফেলবে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে আমেরিকান জনগণের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ট্রাম্প প্রশাসন প্রস্তুত।

অন্যদিকে মামলার বাদীদের পক্ষে লড়াইরত আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) জাতীয় আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেন, ‘সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে নাগরিকত্বের মৌলিক নিশ্চয়তা কোনো প্রেসিডেন্ট বদলে দিতে পারেন না। চলতি মেয়াদেই সুপ্রিম কোর্টে এই বিতর্কের স্থায়ী নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

মুর্শিদাবাদে ‘বাবরি মসজিদ’: সৌদি আলেমদের আমন্ত্রণ, ৪০ হাজার মানুষের জন্য রান্না হচ্ছে বিরিয়ানি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত