Ajker Patrika

মহারাষ্ট্রে ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৬

আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১৪: ৫৬
মহারাষ্ট্রে ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৬

টানা বৃষ্টিতে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে ভূমিধসের পর নিহত বেড়ে অন্তত ১৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে তথ্যটি জানানো হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃষ্টিতে শত শত গ্রাম প্লাবিত ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভূমিধসের পর এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

এরই মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটির পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ৫৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিধস ও বন্যায় মহারাষ্ট্রের দুটি গ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মুম্বাই থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি গ্রামে ভূমিধসের ঘটনায় অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় ভূমিধস হচ্ছে এবং নদীগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। এ নিয়ে গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) জরুরি বৈঠকও করেছেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভূমিধসে প্রাণহানির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বেশ কয়েক দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, ভারী বৃষ্টিপাত মুম্বাইয়ে একটি সাধারণ ঘটনা। প্রতিবছরই বর্ষাকালে শহরটিতে ভারী বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম’ যুগে মালদ্বীপ, ২০০৭ থেকে জন্ম নেওয়াদের ধূমপান নিষিদ্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৩২
মালদ্বীপে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তি এখন থেকে আর ধূমপান করতে পারবেন না। ছবি: এএফপি
মালদ্বীপে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তি এখন থেকে আর ধূমপান করতে পারবেন না। ছবি: এএফপি

বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে ধূমপানের ওপর ‘প্রজন্মগত নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে মালদ্বীপ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তি এখন থেকে আর ধূমপান করতে পারবেন না।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা আজ (১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও একটি তামাকমুক্ত প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে।’

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নতুন বিধান অনুযায়ী, মালদ্বীপের অভ্যন্তরে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তির তামাকজাত পণ্য কেনা, ব্যবহার করা বা তাদের কাছে বিক্রি করা নিষিদ্ধ।

এই নিষেধাজ্ঞা সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং বিক্রেতাদের বিক্রির আগে অবশ্যই বয়স যাচাই করতে হবে।

ভারত মহাসাগরের প্রায় ৮০০ কিলোমিটারজুড়ে (৫০০ মাইল) ছড়িয়ে থাকা ১ হাজার ১৯১টি ছোট প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দেশটির পর্যটকদের জন্যও এই আইন প্রযোজ্য হবে।

মালদ্বীপের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক সিগারেট এবং ভেপিং পণ্যের আমদানি, বিক্রি, বিতরণ, মজুত এবং ব্যবহারও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

নতুন এই আইন অমান্য করলে কঠোর জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে। কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করলে ৫০ হাজার রুফিয়া (প্রায় ৩,২০০ ডলার) জরিমানা দিতে হবে। ভেপ ডিভাইস বা ই-সিগারেট ব্যবহার করলে ৫ হাজার রুফিয়া (প্রায় ৩২০ ডলার) জরিমানা ধার্য করা হবে।

একই ধরনের প্রজন্মগত নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবিত হয়েছিল যুক্তরাজ্যেও, যা এখনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে, এই ধরনের আইন চালু করা প্রথম দেশ নিউজিল্যান্ড এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘এপস্টেইন কেলেঙ্কারির’ প্রথম অভিযুক্ত প্রিন্স অ্যান্ড্রু, পরেরজন কি ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০০ সালে মার-এ-লাগোতে (বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া নাউস (বর্তমানে মেলানিয়া ট্রাম্প), জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি
২০০০ সালে মার-এ-লাগোতে (বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া নাউস (বর্তমানে মেলানিয়া ট্রাম্প), জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি

জেফরি এপস্টেইন কেলেঙ্কারির প্রথম শিকার হলেন ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স অ্যান্ড্রু। একসময় মনে করা হতো, অর্থ ও ক্ষমতার নৈকট্যে যাঁদের বাস, তাঁরা হাজার অপরাধ করেও পার পেয়ে যান। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সেই সুরক্ষা ব্যবস্থা মনে হয় ভেঙে পড়ছে। এপস্টেইনের জঘন্য কেলেঙ্কারি সেই সত্যকেই তুলে ধরেছে। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পতন সেই সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রথম বড় ধাক্কা। এখন প্রশ্ন—পরেরজন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প?

বছরের পর বছর প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও অনেকে তা ‘দুর্ভাগ্যজনক বন্ধুত্ব’ বলে এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ই-মেইলে দেখা যায়, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতেও প্রিন্স অ্যান্ড্রু এপস্টেইনকে লিখেছিলেন, ‘যোগাযোগ রাখো, আমরা আবার একসঙ্গে খেলব।’ অথচ প্রিন্স অ্যান্ড্রু সে সময় দাবি করেছিলেন, তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

তবে এবার সেই যৌন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিযোগে সাজা হয়েছে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রু হারিয়েছেন তাঁর ‘প্রিন্স’ উপাধি। রাজা তৃতীয় চার্লস এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। অ্যান্ড্রুকে তাঁকে উইন্ডসরে বরাদ্দ দেওয়া রাজকীয় বাসভবনও ছাড়তে হবে। এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে আছেন অ্যান্ড্রু। আর এ অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

এপস্টেইনের জগৎ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ক্ষমতা ও যৌন বিকৃতির এক নোংরা নেটওয়ার্ক। ব্যক্তিগত বিমান ‘ললিতা এক্সপ্রেসে’ রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, ধনকুবের ও রাজপুত্রদের নিয়ে এপস্টেইন তাঁর ব্যক্তিগত দ্বীপে যেতেন। ওই দ্বীপ ছিল এক নিস্তব্ধ অপরাধের রাজ্য।

এপস্টেইনের কক্ষপথে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে বিল ক্লিনটন, অ্যালান ডারশোভিটস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা রয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বিস্ফোরক সংযোগটি হলো ট্রাম্পের সঙ্গে। ২০০২ সালের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি জেফকে ১৫ বছর ধরে চিনি। দারুণ লোক। তাঁর সঙ্গে থাকাটা খুব মজার। আমার মতো সেও কম বয়সী সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ করে।’

এতে প্রমাণিত হয়, ট্রাম্পের সঙ্গেও এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এ ছাড়া এই সম্পর্ক প্রমাণের জন্য আরও যথেষ্ট প্রমাণ ও ছবি আছে। ফলে ২৩ বছর আগে ট্রাম্পের বক্তব্যটি এখন এপস্টেইনের অপরাধ জগৎ নিয়ে আলোচনার আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো।

একসময় ধনসম্পদ ও পদমর্যাদা ছিল আইনের হাত থেকে রক্ষার ঢাল। এখন তাই হয়ে উঠছে সবচেয়ে বড় দায়। মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞ মারসি হ্যামিলটন সম্প্রতি তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি আর গোপন রাখা সম্ভব নয়।’

সাংবাদিক ক্যারোল ক্যাডওয়ালাডার বলেন, ‘প্রিন্স অ্যান্ড্রু প্রথম, তবে শেষ নন। এপস্টেইনের বিশাল নেটওয়ার্কে আরও অনেকেই জড়িত।’

লেখক ও সাংবাদিক মাইকেল উলফ বলেন, ‘আমি চাই, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এপস্টেইনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের সমস্ত বিবরণ জানতে চাই।’

যদিও এখন পর্যন্ত এপস্টেইন কেলেঙ্কারির কোনো মামলায় সরাসরি ট্রাম্পকে জড়ানো হয়নি। তবে এপস্টেইন-সম্পর্কিত নথি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ধীরে ধীরে সেই আচ্ছাদন সরিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতার আভা যত ক্ষীণ হচ্ছে, তত বাড়ছে বিচারের চাপ।

এখন প্রশ্ন শুধু পরেরজন কে এটা জানাই নয়, মার্কিন বিচার বিভাগ কি একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সাহস দেখাবে? সংবাদমাধ্যম কি প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মতো একইভাবে ট্রাম্পকেও প্রশ্ন করবে?

এপস্টেইন কেলেঙ্কারি এখনো শেষ হয়নি, বরং আরও ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন করে প্রকাশিত প্রতিটি নথি, প্রতিটি নাম, সেই পুরোনো প্রভাবশালী শ্রেণির নৈতিক অবক্ষয়েরই উন্মোচন করছে। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পতন যেন তারই সতর্কবার্তা।

দ্য মিডল ইস্ট মনিটর থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিন আনলেন নতুন পারমাণবিক অস্ত্র ‘পসাইডন’, ইইউর ঘুম হারাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

মস্কোর একটি হাসপাতালে গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) ইউক্রেন যুদ্ধে আহত রুশ সৈন্যদের দেখতে গিয়েছিলেন পুতিন। এ সময় তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পসাইডন’ নামের একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্ত্র বিশাল তেজস্ক্রিয় সমুদ্রঢেউ তৈরি করে উপকূলীয় অঞ্চলকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

পুতিন বলেন, ‘এর মতো অস্ত্র বিশ্বের আর কোথাও নেই।’ প্রাচীন গ্রিক পুরাণের সমুদ্রদেবতা পসাইডনের নামে নামকরণ করা এই টর্পেডো সম্পর্কে খুব বেশি বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে এটি মূলত একটি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন টর্পেডো এবং ড্রোনের সংমিশ্রণ। রুশ পার্লামেন্টের এক জ্যেষ্ঠ সদস্যের ভাষায়, ‘পুরো একটি রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে সক্ষম এই অস্ত্র।’

২০১৮ সালে প্রথমবার এই অস্ত্রের কথা প্রকাশ্যে আসে। সে সময় রুশ গণমাধ্যমের দাবি ছিল, পসাইডন প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং এটি এমনভাবে রুট পরিবর্তন করতে পারে যে তাকে আটকানো ‘অসম্ভব’।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর ‘বুরেভেস্তনিক’ নামের নতুন এক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না। পুতিনের ভাষায়, ‘এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।’

তবে রাশিয়ার জন্য নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করা বা সেগুলোকে প্রচার করা নতুন কিছু নয়। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃতপক্ষে এসব অস্ত্রের সামরিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন আছে।

রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বিবিসিকে বলেন, এসব মূলত পৃথিবী ধ্বংসকারী ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’। এসব অস্ত্র কেবল তখনই ব্যবহার করা যায়, যখন আপনি পুরো বিশ্বকে ধ্বংস করতে চাইবেন।’

প্রসঙ্গত, ‘আর্মাগেডন’ একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ ‘পৃথিবীর শেষ সময়ে একটি ভয়ংকর যুদ্ধ’। অর্থাৎ ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’ বলতে সেই অস্ত্রগুলোকে বোঝায়, যার ব্যবহারে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

গ্যালিওটি জানান, পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক দুটি এই ধরনের অস্ত্র। সেই সঙ্গে এগুলো ‘সেকেন্ড-স্ট্রাইক’ অস্ত্র, যা শুধু প্রতিশোধমূলক ব্যবহারের জন্য তৈরি।

তবে এই অস্ত্রগুলো আদৌ কার্যকর কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ২০১৯ সালে একটি রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচজন রুশ পারমাণবিক প্রকৌশলী মারা গিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এই রকেট ইঞ্জিন বুরেভেস্তনিকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) তথ্যমতে, এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পারমাণবিক প্রোপালশন ইউনিটের কর্মক্ষমতা নিয়ে নানান ধরনের ‘প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ’ আছে। আইআইএসএসের তথ্যমতে, এই জায়গায় রাশিয়ার এখনো ‘অনেক ঘাটতি’।

২০১৮ সালে পুতিন ‘অজেয়’ অস্ত্রের তালিকায় পসাইডন ও বুরেভেস্তনিকের নাম ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় সাত বছর পর, আবারও এসব অস্ত্র নিয়ে নতুন করে আলোচনায় পুতিন। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ কেন আবার এসব অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? এত দিন পর কি তবে রাশিয়া সফল হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুটি অস্ত্র নিয়ে পুতিনের ঘোষণা যতটা না নতুন, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।

কয়েক মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংলাপের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এখন সেই কূটনৈতিক উদ্যোগ কার্যত ভেস্তে গেছে।

এরপর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক হঠাৎ বাতিল করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, মস্কো ও ওয়াশিংটনের অবস্থান এতটাই ভিন্ন যে এই বৈঠকে কোনো কার্যত কোনো ফল আসত না। এর পরপরই ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে পুতিন হয়তো ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই নতুন অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল, আবার কখনো রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এমন দোলাচালে পুতিনের কাছে এই অস্ত্রগুলো দেখানো হলো শক্তির প্রদর্শন।’

এদিকে, ইউক্রেন আক্রমণের সাড়ে তিন বছরেও বড় কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি রুশ বাহিনী। বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও যুদ্ধ স্থবির।

ম্যাকেঞ্জি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেসের গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড হিথকোট বিবিসিকে বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন যুদ্ধ মৌসুমের শেষের দিকে এসে রাশিয়ার পরিস্থিতি ভালো নয়। তাই এই ধরনের অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণাকে তাদের প্রচলিত সেনাশক্তির দুর্বলতার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা উচিত।’

তাঁর মতে, ‘রাশিয়া যখনই সংকটে পড়ে, তখনই অপ্রয়োজনীয় ও অতিরঞ্জিত সামরিক হুমকি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।’

অবশ্য পুতিনের এমন হুমকিতে কাজ হয়েছে। ৩৩ বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেনাবাহিনীকে আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু অন্যরাও পরীক্ষা চালাচ্ছে, আমাদেরও করা উচিত।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পরীক্ষা শুরু হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আবার ট্রাম্প কী ধরনের অস্ত্র পরীক্ষার কথা বলেছেন, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানাননি।

ট্রাম্পের নির্দেশের পর ক্রেমলিন দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, রাশিয়ার এই পরীক্ষাগুলো ‘কোনোভাবেই পারমাণবিক পরীক্ষা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় না’, বরং এগুলো ছিল পারমাণবিক ওয়্যারহেড বহনে সক্ষম ডেলিভারি সিস্টেমের পরীক্ষা।

তবে আইআইএসএসের কৌশল ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান ড. আলেকজান্ডার বোলফ্রাস বলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত সরাসরি রাশিয়ার বুরেভেস্তনিক পরীক্ষার প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রও এখন একই ধরনের আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, মস্কোর ঘোষণা ট্রাম্পকে উসকে দিয়েছে। এদিকে, পুতিনের হুমকিতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে ইউরোপের। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে তটস্থ ইউরোপ এখন এক নতুন সংকটে।

কিন্তু আসলেই কি পুতিনের রাশিয়া পসাইডন বা বুরভেস্তনিকের মতো বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে? নাকি পুতিন শুধু হুমকি দিয়েই পুরো বিশ্বকে জানান দিয়েছেন, ‘আমাদের এগুলো আছে, আমরা এটা করতে পারি’? সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক দর-কষাকষির প্রেক্ষাপটে মস্কোর সামরিক সক্ষমতা দেখানো একটি রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ল্যুভরের পর এবার ফ্রান্সের সোনার কারখানায় চুরি, ৬ জন আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লিওঁ শহরে এক সোনার কারখানায় এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ছবি: এএফপি
লিওঁ শহরে এক সোনার কারখানায় এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ছবি: এএফপি

ল্যুভর মিউজিয়ামে দুঃসাহসী চুরির পর আবারও ফ্রান্সে ঘটল চুরির ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার দেশটির লিওঁ শহরে এক মূল্যবান ধাতুর কারখানায় এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার চোরেরা বিস্ফোরক ব্যবহার করে পুরকুয়ের ল্যাবরেটরিজ নামে ওই কারখানায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে তারা ১২ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৭ কোটি টাকা) মূল্যের জিনিসপত্র চুরি করে।

লিওঁতে ডাকাতির ঘটনাটির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, ওই কারখানার কাছে দুটি লোক একটি সাদা ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একজনকে কারখানাটির সীমানার ওপর একটি মই রাখতে এবং তা বেয়ে উঠতে দেখা যায়।

অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং ভ্যানটির পিছনের দরজা খুলছে। আরেকজন গাড়িতে কিছু ব্যাগ তুলে রাখছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানান, তিনি বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই ভয়াবহ ছিল।’

কর্মকর্তারা এএফপিকে জানান, পুরকুয়ের ল্যাবরেটরিজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কর্মী বিস্ফোরণে সামান্য আহত হয়েছেন।

কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনার পরপরই পুলিশ ধাওয়া করে চোরদের ধরে ফেলে এবং চুরি হওয়া মালামাল জব্দ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটকদের একজন নারীও রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে অ্যাসাল্ট রাইফেল এবং বিস্ফোরকও জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, প্যারিসের ল্যুভরের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে।

গত ১৯ অক্টোবর, চারজন সন্দেহভাজন যান্ত্রিক লিফট ব্যবহার করে মিউজিয়ামের গ্যালারি অব অ্যাপোলোতে প্রবেশ করে। তারা ডিস্ক কাটার ব্যবহার করে রাজকীয় অলঙ্কার রাখা ডিসপ্লে কেসগুলো ভেঙে ৮৮ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৮৫৭ কোটি টাকা) মূল্যের জিনিস নিয়ে পালিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

এবার তেলের খনি নাইজেরিয়াতে নজর ট্রাম্পের, অজুহাত—খ্রিষ্টানরা ভালো নেই

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত