Ajker Patrika

জেলেনস্কিকে সরাতেই কি ইউক্রেনে নির্বাচন চান ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তলানির কোঠায় উল্লেখ করে ইউক্রেনে নির্বাচন চেয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তলানির কোঠায় উল্লেখ করে ইউক্রেনে নির্বাচন চেয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাঁর এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর সঙ্গে রিয়াদে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে এবং সেই বৈঠকের পর এটিই ট্রাম্পের প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্য। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধ পরিচালনার কৌশলের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইউক্রেনে অনেক দিন ধরে নির্বাচন হয়নি। এটি রাশিয়ার বিষয় নয়। এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আরও অনেক দেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।’

ফ্লোরিডার পাম বিচে অবস্থিত নিজ বাসভবন মার-এ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা এখন এমন এক নেতৃত্ব পেয়েছেন (ইউক্রেনে) যারা এমন একটি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দিয়েছে, যা আসলে কখনই হওয়া উচিত ছিল না।’

ট্রাম্প ইউক্রেনের শহরগুলোর অবস্থা তুলনা করে বলেন, ‘এই শহরগুলো এখন গাজার মতো দেখাচ্ছে। বেশির ভাগ শহর যেন একপাশে পড়ে আছে। ভবনগুলো ধসে পড়েছে।’ তবে ট্রাম্প ইউক্রেনের শহর ও নগর ধ্বংসে রাশিয়ার ভূমিকার কথা একবারও উল্লেখ করেননি, যদিও এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম সশস্ত্র সংঘাত।

জেলেনস্কির মেয়াদ গত বছর শেষ হয়েছে, তবে কিয়েভ বলছে, নির্বাচন কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন যুদ্ধ শেষ হবে এবং সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে। জেলেনস্কির দলের পার্লামেন্টারি নেতা দাভিদ আরাখামিয়া এ মাসের শুরুর দিকে বলেন, সামরিক আইন প্রত্যাহারের অন্তত ছয় মাস পরের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়।

ইউক্রেনে নির্বাচন আয়োজন করা হবে অত্যন্ত কঠিন। কারণ, লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকেই বিদেশে আছেন অথবা রুশ দখলকৃত অঞ্চলে বসবাস করছেন। কিয়েভ নিরাপত্তা উদ্বেগও প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে যে, যেকোনো নির্বাচন পরিচালনার জন্য পশ্চিমা শান্তিরক্ষী বাহিনী বা একটি নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজন হবে যাতে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ ইউক্রেনীয় যুদ্ধকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে। একইভাবে, ৫২ শতাংশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলছে।

কিয়েভ ও ইউরোপজুড়ে ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে, ট্রাম্প এমন একটি শান্তিচুক্তি চাইছেন যা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শর্তে নির্ধারিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ও রুশ দখল থেকে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের চাওয়াকে উপেক্ষা করে পুতিনের প্রতি উল্লেখযোগ্য ছাড় দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প বলেন, মঙ্গলবার রিয়াদে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকের পর তিনি ইউক্রেনে একটি শান্তিচুক্তি অর্জন করার বিষয়ে ‘আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।’ তিনি ওই বৈঠককে ‘খুবই চমৎকার’ বলে অভিহিত করেন। সৌদি আরবের রাজধানীতে হওয়া সাড়ে চার ঘণ্টার ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকের পর তাঁরা ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য সম্মত হন এবং দ্রুত সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা নেন। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিনের আগ্রাসনের পর সংঘাত নিয়ে তাদের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের আলোচনা।

জেলেনস্কি জানান, এই বৈঠকের বিষয়ে তাঁকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি এবং তিনি বলেছেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি করা হলে তা প্রত্যাখ্যান করবে কিয়েভ। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো শান্তি চাই না যা গোপনে কারও মধ্যস্থতায় নির্ধারিত হবে এবং যেখানে আমাদের অংশগ্রহণ থাকবে না। ইউক্রেন ছাড়া শান্তি অর্জন সম্ভব নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ‘খুবই হতাশ’ যে ইউক্রেন রিয়াদ বৈঠকে নিজেদের প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়েছে। তিনি কিয়েভকে তিরস্কার করে বলেন, ‘ওরা তিন বছর ধরে আলোচনার টেবিলে ছিল, তারও অনেক আগে থেকে ছিল। এটি খুব সহজেই মীমাংসা করা যেত।’

ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পক্ষে মত দেন। যদিও লাভরভ মঙ্গলবার বলেন, ইউক্রেনে কোনো ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েন ‘অগ্রহণযোগ্য’। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি তারা তা করতে চায়, তাহলে দারুণ। আমি এতে কোনো আপত্তি করব না।’

তিনি আরও বলেন, কোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে তিনি ইউরোপ থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে চান না। ‘কেউ এটা চাইছে না, তাই আমার মনে হয় না আমাদের তা করতে হবে। আমি তা করতে চাই না। তবে এই প্রশ্নটি কখনোই প্রকৃতভাবে ওঠেনি।’

জেলেনস্কির নেতৃত্বের সমালোচনা করতে গিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, তার জনপ্রিয়তা মাত্র ৪ শতাংশ। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজি এক জরিপে দেখা গেছে, ৫২ শতাংশ ইউক্রেনীয় এখনো জেলেনস্কির ওপর আস্থা রাখেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁকে পছন্দ করি। তিনি ঠিকই আছেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়ে চিন্তা করি না, আমি কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে চিন্তা করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত