Ajker Patrika

অস্ত্রসংকটে ইউক্রেন, সঙ্গে পশ্চিমা সমর্থন হারানোর শঙ্কা

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ০৯
অস্ত্রসংকটে ইউক্রেন, সঙ্গে পশ্চিমা সমর্থন হারানোর শঙ্কা

এক বছর আগেও ইউক্রেন কমান্ডার ভলোদিমিরের সেনারা বিএম-২১ গ্রাদ রকেট লাঞ্চার থেকে ৪০ ব্যারেল গোলা একসঙ্গে রুশ সেনাদের অভিমুখে ছুড়তে পারতেন। কিন্তু এখন ছুড়তে পারছেন মাত্র একটি। ভলোদিমির বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই।’

ভলোদিমিরের ইউনিটের নাম ট্যাংক ব্যাটালিয়ন-১৭। তাঁরা এখন বাখমুতের প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যেতে গোলাবারুদের সহায়তা চাচ্ছেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর বাখমুত দখলের জন্য রুশ সেনারা কয়েক মাস ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। রুশ সেনারা ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হলেও খোয়াতে হচ্ছে অনেক কিছুই।

ইউক্রেনের বাখমুতে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি কভার করছেন বিবিসির প্রতিরক্ষা বিটের প্রতিনিধি জোনাথন বিয়াল। তাঁর মুখেই শোনা যাক ইউক্রেন কমান্ডারে বর্তমান সংকট।

‘আমরা যখন গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম তখন ভলোদিমির ১৫ কিলোমিটার দূরে রুশ মর্টার শেল লক্ষ্য করে রকেট ফায়ার করার একটি বার্তা পান। বার্তা পাওয়ার পর তাঁরা নিজেদের যানবাহনটি লতাপাতার আচ্ছাদন খুলে ফেলে সামনের ফাঁকা মাঠের দিকে এগোতে থাকেন। এক কিলোমিটার যাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তুর অভিমুখে গোলা ছোড়েন। এ সময় ইউক্রেনীয় একটি ড্রোন আমাদের মাথার ওপর চক্রাকারে ঘুরছিল। পরে তাঁরা জানান, প্রথম গোলাটি ৫০ মিটারের হেরফেরের জন্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। তাই তাঁরা যানবাহন সঠিক স্থানে নিয়ে আরও দুটি গোলা ছুড়ে জঙ্গলে ফিরে আসেন। এই দুটি গোলা শত্রুপক্ষের যথাস্থানে আঘাত করেছে বলেও জানান তাঁরা।

নিরাশার কণ্ঠে ভলোদিমির বিবিসির সাংবাদিকে বলেন, ‘আমাদের হাতে যথেষ্ট গোলাবারুদ থাকলে বাখমুতের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া সহযোগীদের আরও সাহায্য করতে পারতাম। আমাদের হাতে থাকা গ্রাদ অ্যামুনিশন শেষ হয়ে আসছে। এখন আমরা অন্য দেশের রকেটের ওপর নির্ভর করছি। চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া ও পাকিস্তান থেকে এসব সহায়তা পাচ্ছি। এসবের গুণমান ভালো না।’

যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেন সেনাদের ততই অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট বাড়ছে। হাঁকডাক করলেও শক্তিধরদের সাড়া মিলছে না। ফলে তারা এখন আক্রমণাত্মক নীতির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু ইউক্রেনকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে বিপুল সম্পদ ব্যয় করতে হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আধুনিক ট্যাংক ও অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছালেও ইউক্রেন সেনারা এখনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের ওপরই নির্ভরশীল। 

ইউক্রেন সেনা ঘাঁটিতে রাশিয়ার তৈরি বাক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চাহিদা এখনো সবচেয়ে বেশি। এটি আকাশসীমার মধ্যে নিচু বা উঁচুতে উড়ে আসা রকেট, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে সহজেই। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই অস্ত্রটি রুশ আক্রমণকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি ইউক্রেনীয় সম্মুখ সমরের সেনা বা জঙ্গলের মধ্যেও আর তেমন চোখে পড়ছে না। 

বাক পরিচালনার কমান্ডার জোসেফ বলেন, ‘এই ব্যবস্থা রাশিয়ার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আমরা এসব অস্ত্র রক্ষার জন্য অনেক সতর্কতা অবলম্বন করছি।’ জোসেফ এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তাঁদের হাতে থাকা বাকের মাথায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যেখানে সাধারণত চারটি থাকে। 

চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালার গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। এসব নথির সত্যতা ও ইউক্রেনে বাক ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের বিষয়ে জোসেফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এটি সত্য নয়।’ তবে তিনি জানান, ইউক্রেনের আরও বাক মিসাইল দরকার।

সোভিয়েত আমলের গ্রাদ রকেট লাঞ্চারই ইউক্রেনের ভরসা। চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া ও পাকিস্তান থেকে এই অস্ত্র আসছেজোসেফ আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বাক ক্ষেপণাস্ত্র নেই। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশও আমাদের কাছে নেই। কারণ, ইউক্রেনে এসবের কারখানা নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হওয়ার কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জোসেফ বলেন, ‘এসব নথি ফাঁস হয়ে আসলে কি কোনো গোপন তথ্য বেরিয়ে পড়েছে? আমাদের আমেরিকার সঙ্গে বিরোধের কোনো কারণ আছে কি? ওই সব নথিতে আমাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য ছিল, সেসব রাশিয়া ২০ বছর আগে থেকেই জানত। এসব আসলেই হাস্যকর।’ 
 
এদিকে রাশিয়া এখনো জানে না ইউক্রেনের আক্রমণাত্মক নীতি কখন বা কোথা থেকে শুরু হবে। ইউক্রেন এখন শুধু হারানো ৮০০ মাইল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। এর জন্য তারা আক্রমণাত্মক নীতিতে যাওয়ার আগে অস্ত্র সরঞ্জাম সংগ্রহ ও নতুন ইউনিট তৈরি করছে। যখনই ইউক্রেন আক্রমণাত্মক নীতিতে যাবে রাশিয়াকেও কিছু নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন দুই পক্ষই রণক্ষেত্রের সম্মুখভাগকে শক্তিশালী করছে। 

বাখমুতের পাশের একটি অঞ্চলে ইউক্রেন সেনাদের ৮০ নম্বর ব্রিগেডকে শত শত কামান প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। তারা রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে আগেভাগেই প্রস্তুত হচ্ছেন। তারা পশ্চিম থেকে আসা বিভিন্ন অস্ত্রও ব্যবহার করছে। 

এই ব্রিগেডের সেনাপতি সেরহি ও তাঁর সেনারা ব্রিটিশদের তৈরি এল-১১৯ কামানের গোলা ব্যবহার করছেন। সেহরি বলেন, ‘আমরা এসব পাচ্ছি রেশনের মতো। দিনে মাত্র ৩০টি গোলা ছুড়তে পারি। আমাদের যথেষ্ট সৈন্য রয়েছে এখন। কিন্তু সংকট গোলাবারুদের।’

এ বছর ইউক্রেনের জন্য জয় বা পরাজয় নির্ধারণের বছর কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যদি আক্রমণাত্মক নীতিতে যাই এবং হারানো অঞ্চল দখলে নিতে পারি, তাহলে এ বছরেই আমরা যুদ্ধে জিতে যাব। কিন্তু এমনটি যদি না হয় তাহলে কী হবে জানি না। কেননা, ৫ বা ১০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অস্ত্রশস্ত্র আমাদের কাছে নেই।’

গ্রাদ কমান্ডার ভলোদিমিরের বক্তব্য আরও হতাশাজনক। তিনি বলেন, ‘দেশবাসী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিও অচল হয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধনীতি এ বছরই নির্ধারণ করা না হলে পশ্চিমা সমর্থন কমতে পারে। পশ্চিমারাও সাহায্য করতে করতে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটি নিয়ে আমরা আরও উদ্বিগ্ন।’ 

ইউক্রেনের বাখমুত থেকে বিবিসির জোনাথন বিয়াল। অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কানাডা ‘বাজে আচরণ’ করায় বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করে দিলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রতিবেশী কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি কানাডার ‘বাজে আচরণ’কে তুলে ধরেছেন। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক আলোচনাকে অবিলম্বে বন্ধ করে দিচ্ছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেন, কানাডা এমন একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে যেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে শুল্কনীতির সমালোচনা করতে শোনা গেছে।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তাদের চরম বাজে আচরণের কারণে কানাডার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা এখানেই সমাপ্ত।’ বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সরকার কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো–কানাডা চুক্তি (ইউএসএসসিএ)—এর আওতায় পড়া পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড় রাখা হয়েছে। এই চুক্তিটি ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।

ট্রাম্প বলেছেন, কানাডার অন্টারিও রাজ্যের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি ওই ভিডিওর উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টকে প্রভাবিত করা। আগামী নভেম্বরে আদালত বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে রায় দেবে। এই রায়কে ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও তাঁর অর্থনৈতিক নীতির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালত যদি তাঁর বিপক্ষে রায় দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক বাবদ সংগৃহীত কয়েক বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হতে পারে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক মিনিটের ওই বিজ্ঞাপনে রিগ্যানের কণ্ঠ শোনা যায়। যেখানে তিনি ১৯৮৭ সালের এক রেডিও ভাষণে বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছেন। দৃশ্যে দেখা যায় নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পতাকাবাহী ক্রেনসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল। রিগ্যানের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘যখন কেউ বলে ‘বিদেশি পণ্যে শুল্ক আরোপ করছি’—তখন সেটা দেশপ্রেমিক কাজ বলে মনে হয়। আর কিছু সময়ের জন্য হয়তো তা কার্যকরও হয়, কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য। ”

ভিডিও রিগ্যানকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘দীর্ঘমেয়াদে এসব বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা প্রতিটি আমেরিকানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে—কর্মী ও ভোক্তা উভয়কেই। উচ্চ শুল্কের ফলে বিদেশি দেশগুলো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়, যার পরিণতিতে ভয়াবহ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়...বাজার সংকুচিত হয়, ব্যবসা ও শিল্প বন্ধ হয়ে যায়, আর কোটি মানুষ চাকরি হারায়।’

রোনাল্ড রিগ্যান ফাউন্ডেশন এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, অন্টারিও সরকার রিগ্যানের বক্তব্যের ‘নির্বাচিত অংশ’ ব্যবহার করেছে এবং ভিডিও-অডিও সম্পাদনা করে বিজ্ঞাপন বানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্টারিও সরকার রিগ্যানের বক্তব্য ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়নি এবং সম্পাদনার অনুমতিও পায়নি।’ ফাউন্ডেশন আরও জানিয়েছে, বিজ্ঞাপনটিতে ‘সাবেক প্রেসিডেন্টের বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।’ ফাউন্ডেশন আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।

অন্টারিও প্রিমিয়ার (মুখ্যমন্ত্রী সমতুল্য) ডগ ফোর্ড বিজ্ঞাপনটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমেরিকান শুল্কের বিরুদ্ধে আমরা কখনোই লড়াই থামাব না।’ কানাডার সবচেয়ে জনবহুল ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য অন্টারিও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বিশেষ করে গাড়ি ও ইস্পাত শিল্পে ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ।

ট্রাম্পের আগের শুল্ক হুমকির পর ফোর্ড পাল্টা বলেন, প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটনের বাণিজ্যনীতি ‘আমাদের পিঠে ছুরি মেরে আবার সেটি ঘুরিয়ে দিয়েছে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর এখনো ফোর্ড বা কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি কোনো মন্তব্য করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ওই বিজ্ঞাপন প্রচারণার মোট ব্যয় ৭ কোটি ৫০ লাখ কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘স্থল অভিযানের’ ইঙ্গিত ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রণক্ষেত্র কি ভেনেজুয়েলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত মাদকের স্রোত থামাতে এবার দেশটিতে প্রয়োজনে স্থল অভিযান পরিচালনার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এরপর ভেনেজুয়েলার ‘ভূখণ্ডই হবে পরবর্তী’ অভিযানের ‘লক্ষ্য'।

এর আগে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মার্কিন হুমকি অগ্রাহ্য করে বলেছিলেন, ‘এই ভূমিকে কেউ ছুঁতে পারবে না।’ ফলে, এই আশঙ্কা দানা বাঁধছে যে, ভেনেজুয়েলা কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রণক্ষেত্র হতে যাচ্ছে!

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলা থেকে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে চলমান অভিযানে এবার দেশটির স্থলভাগে হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এবার ভূখণ্ডই হবে পরের লক্ষ্য।’ সাগরে সীমিত থাকা হামলাকে এবার স্থলভাগে বিস্তৃত করতে চলেছেন ট্রাম্প— এই বিষয়টিরই স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই বক্তব্যকে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে নির্দেশ দেন কংগ্রেসকে আসন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে কিছু না বললেও তিনি ইঙ্গিত দেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ভেনেজুয়েলাভিত্তিক তথাকথিত মাদকচক্রের স্থলভাগের অবকাঠামোতেও আঘাত হানতে নির্দেশ দিতে পারেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘এবার ভূখণ্ডই হবে পরের লক্ষ্য।’ এরপর হেগসেথের দিকে ফিরে তিনি যোগ করেন, ‘পিট, তুমি কংগ্রেসে যাও, তাদের এটা জানাও। তারা কী করবে? বলবে—আমরা চাই না যে আমাদের দেশে মাদক ঢোকা বন্ধ হোক?’

ট্রাম্প বলেন, ‘স্থলভাগের মাদকচক্রের জন্য এটা হবে আরও বিপজ্জনক। খুব শিগগিরই আপনারা সেটা দেখবেন। এভাবেই ব্যাপারটা এগোচ্ছে।’

স্থলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার উত্তেজনা আরও বাড়বে। গত সেপ্টেম্বরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ১৫ হাজার সেনা মোতায়েনের পর আরও পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে অনির্দিষ্টকাল মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নৌ-হামলার প্রতিক্রিয়া।

ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি মাদকচক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটার প্রয়োজন দেখছি না। আমরা শুধু তাদের মেরে ফেলব যারা আমাদের দেশে মাদক আনছে—ঠিক আছে? আমরা তাদের মেরে ফেলব, তারা লাশ হবে, একেবারে লাশ।’

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে দুই দশক যুদ্ধ চালিয়েছে। ইরাকে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ আছে—এই অভিযোগে হামলা চালিয়েছিল। এবার ভেনেজুয়েলার তথাকথিত মাদকচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নামে দেশটিতে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক মাদুরোকে প্রশ্ন করেন, মার্কিন ‘মেরিন বাহিনী এসে আপনার সরকার পতন ঘটাবে’–এমন শঙ্কা নিয়ে তাঁর মত কী। জবাবে মাদুরো বলেন, ভেনেজুয়েলার ৯০ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হুমকি প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেনেজুয়েলাবাসী আমাদের আইন মেনে চলি, এই ভূমিকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।’

মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদক পাচারের অভিযোগও নাকচ করেন। তিনি দাবি করেন, প্রতিবেশী কলম্বিয়ার মতো ভেনেজুয়েলায় কোকো চাষ বা কোকেন উৎপাদন নেই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা এখন ধ্বংস করতে চাওয়া দেশগুলোকে আর কমিউনিস্ট বলে না। সোভিয়েত আমলে সেটাই ছিল অভিযোগ। পরে তারা ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়াকে সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করেছিল। এখন নতুন অদ্ভুত অভিযোগ হলো— মাদক পাচার।’

এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে প্রায় ছয়টি নৌকায় হামলা চালিয়েছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে। এসব হামলার পর ওয়াশিংটন ভেনেজুয়েলার স্থলভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমন জল্পনাও বাড়ছে।

কিছুদিন আগে, যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকায় আঘাত হানে। এর ফলে, বিমান হামলার ক্ষেত্র ক্যারিবীয় সাগর ছাড়িয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। তাঁর দাবি, মাদুরো সরকার তাদের কারাগার খালি করে বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে এবং উত্তরমুখী মাদক চোরাচালানকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে দু-তিন মিনিটে পুড়ে ছাই এসি বাস, প্রাণহানি ১১

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৯
ভারতে এসি বাসে আগুন ধরে পুড়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে এসি বাসে আগুন ধরে পুড়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কুরনুলে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১১ জনের। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোরে একটি ভলভো বাসে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কায় আগুন ধরে মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায়। হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী ওই বাসে তখন প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে কুরনুল জেলার উল্লিন্দাকোন্ডা এলাকার কাছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বাসটি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে রওনা হয়। জাতীয় সড়ক ৪৪ (এনএইচ-৪৪) ধরে ভোররাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে কুরনুলের কাছে পৌঁছালে সেটি একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়।

পুলিশের ধারণা, ধাক্কার পর মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে আটকে যায় এবং সেখান থেকে স্ফুলিঙ্গ ছিটকে আগুন লাগে। দুর্ঘটনার পর বাসচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাসটিতে আগুন লাগার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো বাসটিকে গ্রাস করে।

কুরনুলের পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাতিল এনডিটিভিকে বলেন, ‘ভোররাত ৩টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল কাভেরি ট্রাভেলসের একটি ভলভো বাস। এটি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়, যা বাসের নিচে আটকে যায়। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে আমরা ধারণা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল) দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন লাগার সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে। বাসটি যেহেতু এসি, তাই অনেক যাত্রী জানালা ভেঙে বের হতে বাধ্য হয়। যারা জানালা ভাঙতে পেরেছে, তারাই বেঁচে আছে।’

যাত্রী তালিকা অনুযায়ী বাসে ৪০ জন যাত্রী ছাড়াও চালক ও সহকারী ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিল, তাই বের হতে দেরি হয়ে যায়। এফএসএল দল এখনো অনুসন্ধান চালাচ্ছে, কেউ বাসের ভেতরে আটকে আছে কি না তা জানতে। পুলিশ সুপার আরও জানান, ‘১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

সরকারি হাসপাতালে ১১ জন যাত্রী চিকিৎসা নিচ্ছে, আর তিনজনকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে এবং নিহত ব্যক্তিদের শনাক্তে অভিযান চলছে।

নান্দিয়ালের সংসদ সদস্য বাইরেড্ডি শাবরী বলেন, ‘বাসটি দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের জানিয়েছেন, তিনি বিপরীত দিক থেকে আসছিলেন এবং উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাসে বিস্ফোরণ ঘটে। আমরা ১৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মরদেহ এতটা দগ্ধ হয়েছে যে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

অন্ধ্র প্রদেশের পরিবহনমন্ত্রী রামপ্রসাদ রেড্ডি বলেন, ‘বাসটির নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। গত দুই মাসে এই বাস সংক্রান্ত নিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণ কতটা মানা হয়েছে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে।’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘কুরনুল জেলার চিনা টেকুর গ্রামের কাছে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি মর্মাহত। যেসব পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ‘কিছু ক্ষতি অনিবার্য’ হলেও মাথা নত করবে না রাশিয়া: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৬
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় হয়তো কিছু ক্ষতি হবে, তবে তাঁর দেশ মাথানত করবে না। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় হয়তো কিছু ক্ষতি হবে, তবে তাঁর দেশ মাথানত করবে না। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে রাশিয়া কখনো মাথা নত করবে না। তবে তিনি স্বীকার করেন, ওয়াশিংটনের নতুন নিষেধাজ্ঞা অর্থনীতিতে কিছুটা ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যে খবর এসেছে, চীন ও ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর দুই বৃহৎ তেল উৎপাদক কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এই খবর সামনে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র রসনেফট, লুকঅয়েলসহ তাদের অন্তর্ভুক্ত প্রায় তিন ডজন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয়। অপর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিতে সম্মত হয়েছে।

রসনেফট ও লুকঅয়েল রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার পর এই দুটি কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে ট্রাম্পের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মস্কোর বিরুদ্ধে প্রথম বড় পদক্ষেপ। মূল লক্ষ্য হলো—ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে চালাতে তেল যে আয়ের জোগান দেয়, তা বন্ধ করে দেওয়া।

ওয়াশিংটন আশা করছে, এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিতে আঘাত হানবে এবং পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ফিরতে বাধ্য করবে। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নিষেধাজ্ঞাকে বলেছেন, ‘অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ’, যা ‘রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্ককে শক্তিশালী করে না’। তাঁর ভাষায়, এটি ‘রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা’, তবে এটি ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ উদ্যোগ’ বলে মনে করেন তিনি।

পুতিন বলেন, ‘আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন কোনো দেশ কখনো চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।’ তিনি দাবি করেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না, তবে ‘কিছু ক্ষতি অনিবার্য।’ এ সময় তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাঁর উচিত ভেবে দেখা—তাঁর প্রশাসন আসলে কার স্বার্থে কাজ করছে।’ তিনি সতর্ক করেন, এই নিষেধাজ্ঞা তেলের দাম আরও বাড়াবে।

পুতিন আরও হুঁশিয়ারি দেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ‘টমাহক ক্রুজ মিসাইল’ দেয় এবং তা দিয়ে রাশিয়ার ওপর হামলা চালানো হয়, তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া হবে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী, এমনকি ধ্বংসাত্মক’।

নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অন্যান্য দেশ ও কোম্পানিগুলোকে রাশিয়ার বড় তেল উৎপাদকদের সঙ্গে ব্যবসা করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে তারা আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বৃহৎ অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবারই এর প্রাথমিক প্রভাব দেখা গেছে। রাশিয়ার দুই প্রধান ক্রেতা দেশ চীন ও ভারত তেল আমদানি স্থগিতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভারতের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানায়, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রক্রিয়া ‘পুনর্মূল্যায়ন’ করছে। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, ‘রিলায়েন্স সম্পূর্ণভাবে ভারতের সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাশিয়ান তেল আমদানিতে সামঞ্জস্য আনছে।’ রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো আপাতত সমুদ্রপথে রুশ তেল কেনা স্থগিত করেছে। তারা আশঙ্কা করছে, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জটিলতায় না জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশই তেল ও গ্যাস খাত থেকে আসে। চীন ও ভারতের মতো প্রধান ক্রেতারা যদি হঠাৎ তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তা ক্রেমলিনের অর্থনীতিতে ভয়াবহ আঘাত হানবে, আর বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে। রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন এবং ভারত ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে এবং দুই দেশই এত দিন পশ্চিমা চাপকে ‘ফাঁপা হুমকি’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার তারা বাস্তবিকই নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিষেধাজ্ঞা মানতে হলে তাদের রাশিয়ার সস্তা তেল ত্যাগ করতে হবে, যা তাদের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট থেকে রক্ষা করেছিল।

এদিকে ট্রাম্প বুদাপেস্টে বৈঠকের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা বাতিলের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, বৈঠকটি ‘সম্ভবত পিছিয়ে যাবে’ এবং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া তা আয়োজন করা ‘ভুল হবে’। তবে তিনি জানান, তিনি এখনো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, কারণ ‘সংলাপ সর্বদা যুদ্ধের চেয়ে ভালো’।

রুশ কর্মকর্তারা অবশ্য অনেক কঠোর সুরে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ‘যুদ্ধের ঘোষণা’। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শত্রু। তাদের বাচাল “শান্তিদূত” এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে পা রেখেছে।’

ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ কিছু বিশেষজ্ঞও স্বীকার করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতিতে আঘাত আনতে পারে। রাশিয়া সরকারের অধীন ফিন্যান্সিয়াল ইউনিভার্সিটির জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইগর ইউশকভ কমেরসান্ত পত্রিকাকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে এশীয় ক্রেতারা সরাসরি রুশ তেল কিনতে দ্বিধা করবে। এতে কোম্পানিগুলোকে মধ্যস্বত্বভোগী ও জটিল লজিস্টিক চেইনের ওপর নির্ভর করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে।

তবে এই নিষেধাজ্ঞার প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করবে তা কতটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় তার ওপর; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কি সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’ দেবে, যারা রুশ তেল কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাবে। রাশিয়ার হাতে এখনো এক মাস সময় আছে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে। মস্কো সম্ভবত সেই সময়টা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যবহার করবে।

আগেও রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গেছে বিভিন্ন গোপন বাণিজ্যিক কৌশল ও তাদের তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয় পুরোনো জাহাজ, যেগুলো অচেনা পতাকা নিয়ে চলে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অজানা কোম্পানির নামে নিবন্ধিত। এই পদ্ধতিতেই রাশিয়া এখনো ভারত ও চীনের মতো ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে, জি-৭-এর দামের সীমা ও ইইউ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও।

মস্কোর অনেকে আবার আত্মবিশ্বাসী যে রাশিয়া এবারও টিকে যাবে। রুশ সামরিক ঘনিষ্ঠ ব্লগার মিখাইল জভিঞ্চুক বলেন, ‘নতুন বিক্রয় কাঠামো গড়ে উঠবে। এতে পরিবহন জটিলতা ও খরচ বাড়বে ঠিকই, কিন্তু তেল ব্যবসা তিন বছর ধরে এসব সামলে নিয়েছে, এখনো পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত