Ajker Patrika

ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফ্রান্সের নয়া প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু। ছবি: সংগৃহীত
ফ্রান্সের নয়া প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সেবাস্তিয়েন লেকোর্নু। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী লেকোর্নুকে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে অনাস্থা ভোটে ফ্রাঁসোয়া বাইরু প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ৩৯ বছর বয়সী লেকোর্নু এই দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ পছন্দদের একজন ছিলেন। গত তিন বছর তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের জবাব দিতে ফ্রান্সের ভূমিকা সামলেছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মাখোঁ প্রেসিডেন্টের মেয়াদে সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেকোর্নুর দায়িত্ব হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ফ্রান্সের পরবর্তী বাজেট পাস করানো। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই বাজেট পাস করাতে গিয়ে বাইরুর সরকার পড়ে যায়। বামপন্থী ও চরম ডানপন্থী বিরোধীরা লেকোর্নুর নিয়োগের সমালোচনা করেছে।

বাইরু কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র দেন। এরপরই মাখোঁর দ্বিতীয় মেয়াদে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন লেকোর্নু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় লেকোর্নু লিখেছেন, তাঁকে এমন একটি সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যার লক্ষ্য স্পষ্ট—ফ্রান্সের স্বাধীনতা ও শক্তি রক্ষা করা, জনগণের সেবা করা এবং দেশের ঐক্যের জন্য রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

লেকোর্নুর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফ্রান্সের বাড়তে থাকা ঋণ সামলানো। চলতি বছর ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ইউরো, যা দেশের মোট জিডিপির ১১৪ শতাংশ। বাইরু ৪৪ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু বাজেট পরিকল্পনা সংসদে আস্থা ভোটে তোলায় সেটি ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদে ৩৬৪ ভোটে তাঁর সরকার অনাস্থা পায়, পক্ষে ভোট পড়ে ১৯৪।

লেকোর্নুর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন মধ্যপন্থী মিত্ররা। বাইরুর দল মোদেমের মন্ত্রী মার্ক ফেনো বলেছেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ করে বাজেট নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তিকে সমঝোতায় আসতে হবে। তবে বামপন্থী দল ‘ফ্রান্স আনবাউড’-এর নেতা জ্যঁ-লুক মেলঁশো বলেছেন, কিছুই বদলায়নি। তাঁর মতে, এখন সময় হয়েছে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বিদায়ের।

মাখোঁ মধ্য বামের দিকে হাত বাড়াতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। এমনকি সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ে ফোর আগের রাতেই সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ডাক পাননি। ফোর মজা করে বলেন, তিনি ভালো ঘুমিয়েছেন, তাই ফোন বেজে থাকলেও শোনেননি। অন্যদিকে চরম ডানপন্থী নেতা মারি ল পেন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এখন তাঁর ঘনিষ্ঠদের নিয়ে ‘বাংকার থেকে মাখোঁবাদকে শেষবারের মতো বাঁচানোর চেষ্টা করছেন’।

গত বছর ইউরোপীয় নির্বাচনে বাজে ফলাফলের পর মাখোঁ আকস্মিকভাবে জাতীয় নির্বাচন ডাকেন। সেই ভোটে ঝুলন্ত সংসদ গড়ে ওঠে। এখন ফ্রান্সের রাজনীতিতে মূলত তিনটি বড় শক্তি—বামপন্থী, চরম ডান ও কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মাখোঁর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এদুয়ার ফিলিপ। তিনি মনে করেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে অভিজ্ঞতার কারণে লেকোর্নু ভালো পছন্দ। ফিলিপ বলেন, ‘তাঁকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তিনি জানেন কীভাবে বিতর্ক করতে হয়। আর এই পরিস্থিতিতে তাঁর সেই দক্ষতা খুব প্রয়োজন হবে।’ তাঁর মতে, লেকোর্নুকে অবশ্যই সমাজতান্ত্রিকদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। কারণ বাজেট নিয়ে সমঝোতা না হলে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে, যা নতুন নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেবে।

আরও তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। বুধবার ‘ব্লোকোঁ তু’ (সবকিছু বন্ধ করো) নামে তৃণমূল আন্দোলন ব্যাপক বিক্ষোভ ডাকার পরিকল্পনা করেছে। এ জন্য ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত