Ajker Patrika

এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার

রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা একরেম ইমামোগলু। ছবি: এএফপি
রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা একরেম ইমামোগলু। ছবি: এএফপি

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) এই নেতা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। কয়েক দিন পরে সিএইচপির পক্ষ থেকে একরেম ইমামোগলুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর গ্রেপ্তার দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর একরেম ইমামোগলুকে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে প্রসিকিউটরেরা তাঁকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন এবং ‘অপরাধী সংগঠনের সন্দেহভাজন নেতা’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এ ছাড়া এই তদন্তের অংশ হিসেবে আরও ১০০ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের গভর্নর কার্যালয় শহরের আশপাশে চার দিনের জন্য সাধারণ মানুষের চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর এক ভিডিওবার্তায় ইমামোগলু বলেছেন, জনগণের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি আরও জানান, তিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন।

গত বছর অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ইমামোগলু দ্বিতীয়বারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর দল সিএইচপি সেই নির্বাচনে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় বড় জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে এটি এরদোয়ানের ২২ বছরের শাসনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী পরাজয় ছিল।

কিন্তু একরেম ইমামোগলুর হঠাৎ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন করেছেন, এ ধরনের ঘটনা বিরোধীদের দমন নাকি আইনগত পদক্ষেপ?

অনেকে বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। তবে এরদোয়ান ও তাঁর দল একে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ বলে দাবি করেছে। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুঞ্চ বলেছেন, এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলা ‘ভুল ও বিপজ্জনক’। কারণ, দেশে আইনের শাসন বজায় রয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের ঠিক এক দিন আগে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল করে তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, তুর্কি সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। ইমামোগলু এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনবহির্ভূত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সিএইচপি একে ‘কূটনৈতিক অভ্যুত্থান’ বলে উল্লেখ করে অভিযোগ করেছে, এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা। দলের চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেছেন, জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা গণতন্ত্রের ওপর আঘাতের শামিল।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুর্কি মুদ্রা লিরার মান রেকর্ড পরিমাণে কমে যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর হুমকি হিসেবে দেখছে। জার্মানি একে ‘রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ’ বলে অভিহিত করেছে। ফ্রান্স বলেছে, এই গ্রেপ্তার তুরস্কের গণতন্ত্রের ওপর ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলতে পারে।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন এলাকায় গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, তুরস্কে এক্স (টুইটার), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে।

ইমামোগলুর বিরুদ্ধে এর আগেও মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের অবমাননা করার অভিযোগে আড়াই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

২০২৮ সালে তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এরদোয়ান যদি সংবিধান পরিবর্তন করেন বা আগাম নির্বাচন ডাকেন, তাহলে তিনি আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। ইমামোগলুর গ্রেপ্তার তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, এটি সরকার কর্তৃক বিরোধীদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাশুড়িকে রাখতে আপত্তি স্ত্রীর, যুবকের আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্ত্রী। এ কারণে এক যুবক আবাসিক ভবনের ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বৃহত্তর ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

িহত ব্যক্তির নাম যোগেশ কুমার। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। ৯ বছর আগে নেহা রাওয়াত নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।

যোগেশের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচা প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, যোগেশকে তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়রানি করছিলেন। তারা চাইতেন না যোগেশের মা তাদের সঙ্গে থাকুক।

প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন, যোগেশ ও নেহা আগে নয়ডাতে থাকতেন। নেহা সেখানে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মরত থাকায় সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলে যোগেশ তাঁর মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। নেহা এতে রাজি হননি।

ছয় মাস আগে যোগেশ সন্তানকে নিয়ে ফরিদাবাদের সেক্টর ৮৭-এর পার্ল সোসাইটিতে চলে আসেন। নেহা নয়ডাতে থেকে যান। এ সময় যোগেশ সন্তানের দেখভাল করতে তাঁর মাকে নিয়ে আসেন।

যোগেশের চাচা অভিযোগে আরও বলেন, এক মাস আগে ওই বাসায় এসে যোগেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নেহা। সে সময় যোগেশের মায়ের সেখানে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।

পরে নেহার দুই ভাই আশীষ রাওয়াত ও অমিত রাওয়াত এসে যোগেশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে যোগেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর চাচা প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন।

চাচার অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যোগেশ নেহাকে নিয়ে গোয়ালিয়রে যান। ফেরার পথে নেহাকে নয়ডায় নামিয়ে দিয়ে একাই পার্ল সোসাইটির ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার রাতে পার্ল সোসাইটির ১৫ তলা থেকে লাফ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এ ঘটনায় ভুপানি থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যোগেশের স্ত্রী নেহা রাওয়াত, তাঁর বাবা-মা বীর সিং রাওয়াত ও শান্তি রাওয়াত এবং দুই ভাই আশীষ ও অমিত রাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভুপানি থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সংগ্রাম দাহিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর বেতন দিতে ট্রাম্পকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান, রহস্যময় দাতাটি কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন যাতে, মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া যায়। কারণ, মার্কিন সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে, সরকার রাষ্ট্রীয় কোনো কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। তবে কে এই অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ১৩ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্যের বেতন প্রদানে ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তর দাতার পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ওই দাতা ‘আমার বড় সমর্থক’ এবং ‘মার্কিন নাগরিক।’ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, কারণ কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে প্রশাসন সাময়িকভাবে সেনাদের বেতন দিয়েছে, সামরিক গবেষণার বাজেট থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে এনে। তবে মাসের শেষের বেতন দিবসে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোববার অচলাবস্থার ২৫ তম দিন পার হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দান এমন শর্তে দেওয়া হয়েছে যে তা সেনাসদস্যদের বেতন ও ভাতার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি জানান, দপ্তরের ‘সাধারণ উপহার গ্রহণের নীতিমালা’ অনুযায়ী এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবারই দানের বিষয়টি আভাস দিয়েছিলেন, তবে তখনো দাতার নাম গোপন রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি স্বীকৃতি চান না।’ শনিবার এশিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এক অসাধারণ ভদ্রলোক, এক দেশপ্রেমিক, এক মহান পৃষ্ঠপোষক। তিনি প্রচারবিমুখ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি চান না তাঁর নাম বলা হোক—যা আমার পরিচিত রাজনীতির জগতে বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে তো সবাই চায় তাদের নাম উচ্চারিত হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন যেন সেনারা বেতন পায়। এটা বিশাল অঙ্কের অর্থ। তিনি আমার বড় সমর্থকও বটে।’

এই অর্থ সেনাপ্রতি প্রায় ১০০ ডলারের সমান। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস করে বেতন দিতে পেরেছিল, কিন্তু ৩১ অক্টোবরের পরবর্তী বেতন দিবসে কী হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেস এমন কোনো বিল পাস করতে পারেনি যা সেনাদের বেতন নিশ্চিত রাখবে।

অচলাবস্থার কারণে অধিকাংশ সরকারি কর্মী ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ হাজার ডলারের বেশি দান নৈতিকতা পর্যালোচনার আওতায় আসে, যাতে নিশ্চিত করা যায় দাতার কোনো ব্যবসায়িক দাবি, মামলা, বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কোনো স্বার্থ সংঘাত নেই।

বিদেশি নাগরিকের দান হলে তা আরও কঠোর যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও পেন্টাগন মাঝে মাঝে দান গ্রহণ করে, সাধারণত সেই অর্থ স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, জাদুঘর বা সমাধিক্ষেত্রের মতো নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় হয়। তবে এবার সেনাবাহিনীকে বেতন দিতে নাম-গোপন দান গ্রহণে সমালোচনা উঠেছে।

সিনেটের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য, ডেলাওয়্যারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নাম-গোপন দানের অর্থে চালানো এক ভয়াবহ নজির। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে আমাদের সৈন্যরা বিদেশি শক্তির হাতে ‘কেনা সৈন্যে’ পরিণত হচ্ছে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বাতিল করল মাদাগাস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত মাদাগাস্কারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। এবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকার।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হেরিনৎসালামা রাজাওনারিভেলো স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, স্থানীয় আইন অনুযায়ী, যারা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাদাগাস্কারের নাগরিকত্ব হারাবেন।

প্রায় এক দশক আগে ফরাসি নাগরিকত্ব লাভ করেন ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা। এ কারণে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি ফরাসি নাগরিকত্বের কথা প্রকাশ করেন। সন্তানদের ফ্রান্সে পড়াশোনার সুবিধার জন্য এই নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন বলে যুক্তি দেখান তিনি। সে সময় নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সেই দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি এবং জয়ী হন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে ‘জেন জি মাদা’ নামে তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজোয়েলিনা প্রথমে তাঁর জ্বালানি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেন, পরে পুরো মন্ত্রিসভাকেই ভেঙে দেন। কিন্তু তাতেও তাঁর পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন থামেনি।

বিক্ষোভকারীরা আশা করেছিলেন, রাজোয়েলিনা পদত্যাগ করবেন, যাতে দেশটি একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগোতে পারে।

কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। শেষ পর্যন্ত কর্নেল মাইকেল রান্ড্রিয়ানিরিনার নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করা হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান রাজোয়েলিনা।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজোয়েলিনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।

এই ভিডিওর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।

বর্তমানে রান্ড্রিয়ানিরিনা শপথ গ্রহণ করেছেন এবং নতুন সরকার গঠন করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত