Ajker Patrika

নামিবিয়া গণহত্যার দায় স্বীকার করল জার্মানি

আপডেট : ২৮ মে ২০২১, ২১: ০৮
নামিবিয়া গণহত্যার দায় স্বীকার করল জার্মানি

ঢাকা: উপনিবেশ থাকাকালে নামিবিয়ায় গণহত্যা চালানোর দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে জার্মানি। আজ শুক্রবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস দায় স্বীকারের পাশাপাশি জার্মানির পক্ষ থেকে নামিবিয়াকে একটি আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ শতকের গোড়ার দিকে নামিবিয়ার হেরেরো ও নামা সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোককে হত্যা করে জার্মানি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এ হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জার্মানির ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্বের আলোকে আমরা নামিবিয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বংশধরদের কাছে ক্ষমা চাইব।

ক্ষতিগ্রস্তদের যে বিরাট দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তার জন্য একটি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশটির উন্নয়নে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণাও দেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ৩০ বছরে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

বিবৃতিতে মাস বলেন, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা ওই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে দেখছি। ঔপনিবেশিক যুগের এ কর্মকাণ্ডগুলোকে না ঢেকে রেখে এ নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করি।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নামিবিয়ার সরকারের একজন মুখপাত্র এ স্বীকৃতিকে ‘সঠিক পথে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ারও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ভবিষ্যতে নামিবিয়ায় ভ্রমণ করবেন।

কী ঘটেছিল?
নামিবিয়ার সঙ্গে পাঁচ বছরের আলোচনার পর শুক্রবারের এ বিবৃতি দিল জার্মানি। উপনিবেশ থাকাকালে বর্তমান নামিবিয়া পরিচিত ছিল জার্মান দক্ষিণ–পশ্চিম আফ্রিকা নামে।

১৯০৪ সালে জার্মানরা হেরেরো ও নামা সম্প্রদায়ের লোকদের জমি ও গবাদিপশু দখল করতে চাইলে এই দুই গোষ্ঠীর মানুষেরা প্রতিবাদ করেন। এতে সেখানকার সামরিক প্রশাসনের কর্ণধার লোথার ভন ট্রোথা নির্বিচারে হত্যার নির্দেশ দেন।

হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়াদের জোর করে মরুভূমিতে পাঠায় জার্মানি। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের কাজ করানো হয়। যৌন নির্যাতন, রোগ, ক্লান্তি এবং অনাহারেও অনেকে মারা যায়। ধারণা করা হয়, এ সময় হেরেরো ও নামা জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ লোক গণহত্যার শিকার হয়।

জাতিসংঘ এ গণহত্যাকে ‘লোকজনকে জড়ো করে হত্যা; জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত হত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তবে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি বলে ইতিহাসবিদরা একে ‘ভুলে যাওয়া গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

জার্মানির সিদ্ধান্তে নামিবিয়াবাসীর প্রতিক্রিয়া
নামিবিয়া সরকার জার্মানির এ ঘোষণাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তবে দেশটির অনেক নেতা এতে খুব একটা সন্তুষ্ট নন।

২০১৮ সালেও জার্মানি একবার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছিল। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে তাঁরা রাজি হননি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জার্মানির বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করেছেন হেরোরো প্যারামাউন্টের প্রধান ভেকুইই রুকোরো। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে যে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়েছে তাতে এই চুক্তি যথেষ্ট নয়।

নামিবিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, আলোচনায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা এই চুক্তির অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছেন।

হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইতিহাসের অধ্যাপক জার্গেন জিম্মেরার মতে, পুরো প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে পুনর্মিলন হবে? তাঁর প্রত্যাশা ছিল, চুক্তিতে হেরেরো ও নামা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো এবং তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত