Ajker Patrika

ইউক্রেনে এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফ্রান্স-ব্রিটেনের

অনলাইন ডেস্ক
লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। ছবি: এএফপি
লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের ‘আকাশে ও সমুদ্রে’ এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। গতকাল রোববার লন্ডনে সংকট বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ কথা জানান। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ফ্রান্সের দৈনিক লে ফিগারোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি করা উচিত, কারণ ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হচ্ছে।

মাখোঁ আরও বলেন, ‘তিন বছর ধরে রাশিয়া তাদের জিডিপির ১০ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করছে। তাই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ লন্ডনে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্যারিসে ফেরার পথে মাখো এই সাক্ষাৎকার দেন। সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের প্রতি তাদের সমর্থন সুসংহত করেন, নিরাপত্তার জন্য আরও ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন এবং ইউক্রেনে যেকোনো যুদ্ধবিরতি রক্ষায় একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেন।

ইউরোপের ১৮টি মিত্র দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা এমন এক সময়ে হলো, যার কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ বন্ধের একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে, যা তারা পরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করবে। লন্ডনের এই বৈঠক এমন এক সংবেদনশীল মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হলো, যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ট্রাম্পের অনিশ্চিত সমর্থনের মুখে পড়েছে এবং রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে লড়াই করছে।

জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন ও ন্যাটোর প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। স্টারমার বলেন, ‘ইউরোপ ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এটি আর আলোচনার সময় নয়—এখন কাজের সময়। নেতৃত্ব দেওয়ার, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং একটি ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তির নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।’

স্টারমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাই ‘ভার ইউরোপকেই নিতে হবে’। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি, কোন কোন দেশ যুদ্ধবিরতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। সম্মেলনে জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। স্টারমার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটে তাঁকে সমর্থন জানান।

স্টারমার জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিশ্বস্ত মিত্র নয়।’ তিনি বলেন, যেকোনো চুক্তির ‘শক্তিশালী মার্কিন সমর্থন’ থাকতে হবে। এদিকে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়ন সম্মেলনের পর সতর্ক করে বলেন, ইউরোপকে জরুরি ভিত্তিতে পুনরায় সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে এবং ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে।’

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দোনাল্দ তুস্ক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের উচিত পুতিনকে দেখানো যে, ‘পশ্চিমা বিশ্ব তাঁর ব্ল্যাকমেল ও আগ্রাসনের কাছে মাথা নত করবে না।’ স্টারমার ও মাখোঁ বলেছেন, যুদ্ধবিরতি রক্ষায় ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনাদের ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য তারা প্রস্তুত।

তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইতালি সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এটিকে এমন একটি সমাধান হিসেবে দেখি যা অত্যন্ত জটিল হতে পারে এবং সম্ভবত অন্য কিছু উপায়ের তুলনায় কম কার্যকর হবে।’

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, আরও ইউরোপীয় দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শুক্রবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া বিরোধের ঘটনা জেলেনস্কির জন্য এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল, কারণ আগের মার্কিন প্রশাসন তাঁকে ‘উইনস্টন চার্চিলের মতো’ নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছিল। তবে বৈঠকে ট্রাম্প ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রাগান্বিত হয়ে জেলেনস্কির বিরুদ্ধে কৃতজ্ঞতার অভাবের অভিযোগ তোলেন এবং তাদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নিতে অস্বীকার করার জন্য তাকে দোষারোপ করেন।

এদিকে, রোববার ওয়াশিংটনের শীর্ষ রিপাবলিকানরা নেতারা তাদের ইউক্রেনবিরোধী অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন এবং ইঙ্গিত দেন যে, জেলেনস্কিকে হয় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মেনে নিতে হবে, অথবা পদত্যাগ করতে হতে পারে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের এমন একজন নেতা দরকার, যে আমাদের সঙ্গে, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করতে পারবে এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবে।’

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন বলেন, ‘হয় তাঁকে (জেলেনস্কিকে) বাস্তবতা মেনে নিতে হবে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে আলোচনায় ফিরতে হবে, নয়তো অন্য কাউকে নেতৃত্ব নিতে হবে।’

ট্রাম্প নিজেকে পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরছেন, ইউক্রেন ও ইউরোপকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে হোয়াইট হাউসে বিতর্কিত ঘটনার পরও জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেননি যে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে তিনি প্রস্তুত—যা ট্রাম্পের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

অপরদিকে, রোববার ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অপর একটি পোস্টে বলেন, খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিটিই ইউক্রেনের চাওয়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ‘শেষ পর্যন্ত, জেলেনস্কির অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না।’ তবে মস্কো দাবি করেছে, জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফর ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ এবং ট্রাম্পের পরিবর্তিত অবস্থান ‘রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত