Ajker Patrika

মা হওয়া নিয়ে কঠিন দ্বিধায় ইউক্রেনের নারীরা

মা হওয়া নিয়ে কঠিন দ্বিধায় ইউক্রেনের নারীরা

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সন্তান গ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন নারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির জন্মহার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় এক–তৃতীয়াংশ কমে গেছে। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের প্রথমার্ধে ৩৮ হাজার কম শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। ইউক্রেনের বিচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে দেশটির তথ্য বিশ্লেষক সংস্থা ওপেনডেটাবট। 

অবশ্য যুদ্ধের আগে থেকেই ইউক্রেনে জন্মহার কমছিল। কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনের পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে তাঁরা সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা বিলম্বিত করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে জনসংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পাশের শহর বুচার বাসিন্দা ইউলিয়া বালাহুরা। তিনি বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি প্রতি রাত ২টার দিকে উঠে আমার মেয়ে মিয়াকে বুকের দুধ খাওয়াই। এরপর বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বন্ধ হয়।’ 

 ৩৮ বছর বয়সী ইউলিয়া এখন তাঁর বাড়িতে থাকছেন। কিন্তু তাঁকে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কিয়েভের একটি হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। কারণ বুচায় মা ও শিশু হাসপাতাল নেই। 

রাশিয়া যখন ইউক্রেনের রাজধানীতে প্রায় প্রতি রাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল তখনই ইউলিয়ার প্রসব বেদনা শুরু হয়। শিশু মিয়ার জীবনের প্রথম রাত কেটেছিল হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ডের আশ্রয়কেন্দ্রে। তার কয়েক মিটার দূরেই আরেক নারী সন্তান জন্ম দিচ্ছিলেন। রাতের আঁধার চিড়ে চারদিকের গগনবিদারী সাইরেন ও বিস্ফোরণের শব্দের মধ্যে নার্সেরা নারীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা রোগীদের সহায়তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। 

রাশিয়ার আক্রমণের কারণে প্রায়ই দেশজুড়ে লোডশেডিং হয় এবং পানি ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা বিকল। ফলে পর্যাপ্ত মাতৃত্বকালীন যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। 

দুই মেয়ের জননী ইউলিয়া বলেন, তিনি জানতেন যুদ্ধের সময় আরেক সন্তান নিয়ে কী কী ঝুঁকি থাকতে পারে। ‘আপনি মানসিকভাবে আরও শক্ত হয়ে উঠবেন। আক্রমণ ও অবিরত বিমান হামলায় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।’ 

গত আগস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেন আরও কয়েকটি সেনা সংগ্রহ করবে। তখন হয়তো ইউলিয়ার স্বামী ভ্লাদিস্লাভও ডাক পাবেন। 

হাজার হাজার পুরুষকে যুদ্ধের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে মারাও গেছেন। কিছু তরুণী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন। বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। 

কিয়েভের তোউখা ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজের উপ মহাপরিচালক ওলেকসান্দর হ্লাদুন বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত নারীদের অনেকেই এ বছর সন্তান নিতেন। কিন্তু এখন আর নেবেন না। যুদ্ধ শেষে তাঁরা ফিরতেও পারেন, নাও ফিরতে পারেন। হয়তো তাঁদের স্বামী বিদেশে তাঁদের কাছে চলে যাবেন। কিছু পরিবার হয়তো ভেঙে যাবে।’ 

শিশু মিয়ার চিকিৎসক নাতালিয়া স্তোলিনেৎস বলেন, রাশিয়া হামলার আগে তিনি বুচায় প্রতি মাসে ১০টি নবজাতক নথিভুক্ত করতেন। এখন প্রতি মাসে একটা বা দুটো নবজাতক পাচ্ছেন। তবে জন্মহার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আর কোনো আশা তিনি দেখছেন না। 

বুচা রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী একটি শহর। রুশ সেনারা টানা পাঁচ সপ্তাহ তুমুল লড়াইয়ের পর যখন বুচা ছাড়ে তখন শত শত বেসামরিক নাগরিককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। 

নাতালিয়া বলেন, ‘জীবন থেমে থাকা উচিত নয়। এমনকি এখনো আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়েই ভাবা উচিত। ইউক্রেনীয় মায়েরা বোঝেন, যুদ্ধের সময় সন্তান জন্ম দেওয়া মানে হলো রাতের পর রাত বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকা। কিন্তু অনেকে তবুও এসব কেয়ার করতে নারাজ। এই আগ্রাসনে জীবন চুরি হতে বা মাতৃত্বের সুযোগ হাতছাড়া হতে দিতে চান না তাঁরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত