Ajker Patrika

ইউক্রেন ও গাজা নিয়ে দ্বিচারিতায় আস্থার সংকটে পড়বে পশ্চিম: মাখোঁ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৮: ৩৭
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাংরি-লা ডায়ালগ’ নামে প্রতিরক্ষা বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। ছবি: সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাংরি-লা ডায়ালগ’ নামে প্রতিরক্ষা বৈঠকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের দ্রুত সমাধান না হলে পশ্চিমা দেশগুলো গোটা বিশ্বের কাছে তাদের বিশ্বাস হারাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যদি এই সংঘাত নিরসনে ব্যর্থ হয়, তবে তারা দ্বিচারিতার অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে পারে। ফলে বিশ্বের কাছে আস্থার সংকটে পড়তে পারে পশ্চিম।

তিনি এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা ইউরোপের সঙ্গে একটি নতুন জোট গঠন করে। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে এশিয়ার দেশগুলো যেন ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ না হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘সাংগ্রি-লা ডায়ালগ’ নামে একটি প্রতিরক্ষা বৈঠকে এসব কথা বলেছেন মাখোঁ। সেখানে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথসহ অনেক দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

মাখোঁ বলেন, ‘যদি রাশিয়া কোনো বাধা ছাড়াই ইউক্রেনের জমি দখল করে নেয়, তাহলে তাইওয়ানে কী হবে? ফিলিপাইনে কিছু হলে কী করবেন?’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘ইউক্রেনের ঘটনা আমাদের সবার বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন। আমরা কি এখনো মানুষের স্বাধীনতা ও ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারি? এক মুখে দুই কথা চলবে না।’

এশিয়ার অনেক দেশই চিন্তিত, চীন জোর করে তাইওয়ানকে নিজের অংশ বানাতে পারে, অথবা দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের সঙ্গে ঝামেলা বাড়তে পারে। এগুলোর কারণ মূলত বড় পরাশক্তির দেশগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ যদি চুপ থাকে, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে একটি শক্তিশালী দেশ আরেকটি ছোট দেশ দখলের জন্য আক্রমণ করতে পারে। ইউক্রেন ও গাজায় যা হচ্ছে, তা এই সমস্যার প্রতিফলন বলে মনে করেন মাখোঁ।

মাখোঁ গাজার যুদ্ধ নিয়ে ‘এক মুখে দুই কথা’ বন্ধের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকের ধারণা, পশ্চিমারা ইসরায়েলকে ‘যা খুশি করার’ বৈধতা দিয়েছে। যদি আমরা গাজাকে ছেড়ে দিই, যদি মনে করি ইসরায়েলকে ‘ফ্রি পাস’ দেওয়া হয়েছে, তাহলে বিশ্বের কাছে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা শেষ হয়ে যাবে।’

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের নেতারা গাজায় ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা করেছেন। আগামী মাসে ফ্রান্স সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘের একটি বৈঠক করবেন, যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হবে।

তবে মাখোঁর এমন বক্তব্যের পর ইসরায়েল তাঁর কড়া সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সন্ত্রাসীদের দমনের বিষয়ে কথা না বলে তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করতে চাইছেন।’

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও মাখোঁ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো হামাসের পক্ষ নিচ্ছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে হামাসের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে এবং গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য একটি পদ্ধতি চালু করেছে। তবে ত্রাণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে।

মাখোঁ তাঁর বক্তৃতায় একটি নতুন ধারণার কথাও বলেছেন। এটিকে তিনি বলেছেন ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’। এর মানে হলো, দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে, কিন্তু একই সঙ্গে এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করবে, যেখানে কোনো বড় শক্তি (যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন) ছড়ি ঘোরাবে না। তিনি ফ্রান্সের উদাহরণ দিয়ে বলেন, তারা একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করে। মাখোঁ মনে করেন, এই পদ্ধতি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে একটি নতুন জোটের ভিত্তি হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা চাই, কিন্তু কারও ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না...আমরা প্রতিদিন কারও নির্দেশে চলতে চাই না—কী করা যাবে বা যাবে না।’ ধারণা করা হচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অথবা চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেছেন।

মাখোঁ আরও বলেন, ‘আমরা এভাবে বসে থাকতে পারি না। আমাদের ভাবতে হবে, শুল্ক নিয়ে কী হবে বা আমাদের বর্তমান জোটগুলোর ওপর এর কী প্রভাব পড়বে। শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষা করতে চাইলে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে একটি ‘নতুন জোট’-এর কথা বলেন, যেখানে তারা নিশ্চিত করবে, ‘পরাশক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে যেন আমাদের মিত্রদেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপ ও এশিয়ার সমস্যাগুলো এখন একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করছে।

এ সময় এশিয়ায় ন্যাটো (পশ্চিমা সামরিক জোট) সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেছিলেন মাখোঁ। কারণ, তখন তিনি ‘অন্য কারও কৌশলগত প্রতিযোগিতায় জড়াতে’ চাননি। কিন্তু এখন উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপে জড়িত হওয়ায় তিনি চিন্তিত। মাখোঁ বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা এশিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়ে যদি চীনের আপত্তি থাকে, তাহলে তাদের উচিত উত্তর কোরিয়াকে ইউরোপে যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রাখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত