Ajker Patrika

রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে ন্যাটোভুক্ত ৩ দেশ

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

স্থানীয় সময় অনুযায়ী আজ ৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে তিনটি ন্যাটো সদস্য দেশ। এই দেশগুলো হলো—এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া।

শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, বাল্টিক দেশগুলো ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তারা নতুন বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করেছে।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করবে। ৯ ফেব্রুয়ারি তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

এ বিষয়ে এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভুটেলে পাই বলেছেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে করি। তবে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এদিকে লিথুনিয়ার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কর্তৃপক্ষ ‘লিটগ্রিড’ ইতিমধ্যেই পুরোনো সোভিয়েত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়া ও বেলারুশের সঙ্গে থাকা তার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য কিছু অংশ পাঠিয়েছে। লিটগ্রিডের প্রধান নির্বাহী রোকাস মাসিউলিস বলেন, ‘রাশিয়ার গ্রিডে যুক্ত থাকার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’

এই উদ্যোগ রাশিয়ার জন্য এক বিরাট কূটনৈতিক পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে। লিথুনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোভিলে শাকালিয়েনি বলেন, ‘রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখালেও, আমরা জানি তাদের কথার সঙ্গে কাজ সব সময় মিলবে না।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই দেশগুলোতে রাশিয়া সাইবার হামলা, গুজব ছড়ানো বা বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন রাশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই রাশিয়া দেশটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছিল।

এ ক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হলো কালিনিনগ্রাদ। লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের মাঝখানে অবস্থিত রাশিয়ার এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ড বিদ্যুৎ সরবরাহে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞ সুজান নিস মনে করেন, ‘রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে কালিনিনগ্রাদে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটিয়ে বাল্টিক দেশগুলোকে দোষারোপ করতে পারে।’

রাশিয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাল্টিক দেশগুলোর এই উদ্যোগের পেছনে মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন রয়েছে। প্রকল্পটি ইউরোপের বিদ্যুৎ স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া বড় উদ্যোগগুলোর একটি।

ন্যাটো ইতোমধ্যেই বাল্টিক সাগরের তলদেশে থাকা বৈদ্যুতিক তার ও অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নতুন মিশন শুরু করেছে। গত ক্রিসমাসের দিন ইস্টলিংক-২ তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যা এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফিনল্যান্ডের তদন্তে দেখা গেছে, একটি রুশ জাহাজের নোঙ্গর এই তারের ওপর পড়ে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বলা হচ্ছে, এবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণ বাল্টিক দেশগুলোর জন্য শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং এক ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত বিজয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত