Ajker Patrika

ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল রেখে দিতে কেন মরিয়া রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২২: ১৮
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাস। অঞ্চলটি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করেছেন, দনবাস হারালে তা ইউক্রেনের জন্য ‘বিধ্বংসী পরিণতি’ বয়ে আনতে পারে। অঞ্চলটি আগামীকাল শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে আলোচনার অন্যতম মূল বিষয় হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, পুতিন যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দোনেৎস্ক থেকে সরে যেতে বলেছেন। এর অর্থ, পুতিন দনবাসের অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ অঞ্চলও দখল করতে চান। গত সাড়ে তিন বছর এখানেই সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই সংঘটিত হয়েছে। দোনেৎস্ক দখলে নিতে পারলে কার্যত পুরো দনবাসের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে রাশিয়া।

দনবাস নামটি এসেছে ‘দোনেৎস বেসিন’ থেকে। এটি মূলত কয়লাসমৃদ্ধ একটি বিশাল এলাকা। ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ওবলাস্ট নিয়ে গঠিত। ২০১৪ সাল থেকে অঞ্চলটির কিছু অংশ আংশিকভাবে রুশ দখলে ছিল। সে বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপও দখল করে নিয়েছিল।

বর্তমানে রাশিয়া দাবি করে—ক্রিমিয়া, সেভাস্তোপল, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন তাদের অংশ। তবে ইউক্রেন ও জাতিসংঘ এগুলোকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ দখলে নিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে লুহানস্কের পুরো অংশ এবং দোনেৎস্কের ৭৫ শতাংশ অঞ্চল। তবে ইউক্রেন এখনো দনবাসের প্রায় ৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধরে রেখেছে, যার মধ্যে পোকরোভস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরও রয়েছে। রুশ বাহিনী তাই এখন দোনেৎস্ক ফ্রন্টে সবচেয়ে বেশি চাপ দিচ্ছে।

দনবাস অঞ্চলটি মূলত ইউক্রেনের কয়লাখনি ও ধাতুবিদ্যার কেন্দ্র। ২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদ শুরুর পরই ইউক্রেনের কয়লা উৎপাদন ২২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যায়। এ থেকে বোঝা যায়, দনবাসের কয়লার ওপর ইউক্রেন অনেকাংশে নির্ভরশীল। অঞ্চলটি ইউক্রেনের জ্বালানিনির্ভরতার প্রতীক। অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রে দনবাস যেন একটি ‘দুর্গ বলয়’। দোনেৎস্ক থেকে শুরু হওয়া এই অঞ্চলের প্রতিরক্ষা লাইনের বিস্তৃতি স্লোভিয়ানস্ক, ক্রামাতোর্স্ক, দুরুশকিভকা ও কস্তিয়ানতিনিভকা ছাড়িয়ে গেছে।

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের ফেলো এলিনা বেকেতোভা জানান, দনবাসে স্থাপন করা হয়েছে বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। বছরের পর বছর ধরে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাংকার, অ্যান্টি-ট্যাংক খাদ, মাইনফিল্ড ও শিল্প এলাকা।

বেকেতোভা সতর্ক করেন—ইউক্রেন এই প্রতিরক্ষা লাইন হারালে রুশ বাহিনী আর মাত্র ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই সমতলভূমি পাবে। ফলে ভবিষ্যতে রুশ বাহিনী সহজেই ইউক্রেনের খারকিভ, পোলতাভা ও দিনিপ্রোর দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অবশ্য স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেন কখনোই দনবাস ছেড়ে যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা দনবাস ছাড়ব না। এটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে।’

বলা যায়, দনবাসের নিয়ন্ত্রণ তাই শুধু একটি ভূখণ্ডের লড়াই নয়, বরং ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য এটি একটি নির্ণায়ক যুদ্ধক্ষেত্র। রাশিয়ার এটি দখল করা মানে অনির্দিষ্টকালের নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়ে যাবে ইউক্রেন, হয়ে যাবে রুশ খেলার পুতুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ: ভাতা দ্বিগুণ হয়ে ১২০০, ঘণ্টায় সম্মানী ২৫০০ থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকা

আন্দোলনকারীদের মারধর, থমথমে শেবাচিম হাসপাতাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত