Ajker Patrika

ট্রাম্পের গাজা ‘দখল’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রকল্পে কাজ করছে টনি ব্লেয়ারের প্রতিষ্ঠান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২: ১৮
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ছবি: এএফপি
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার ‘দখল’ নিয়ে অঞ্চলটিকে ‘রিভেরায়’ পরিণত করার কথা বলেছিলেন। সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি)। ট্রাম্পের গাজা রিভেরা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করছে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের একটি প্রতিষ্ঠান।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, টনি ব্লেয়ার প্রতিষ্ঠিত টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ (টিবিআই) বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের সঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরিতে কাজ করছে। এই পরিকল্পনার আওতায় গাজায় ‘ট্রাম্প রিভেরা’ নামে একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট গড়ে তোলা এবং ইলন মাস্কের নামে একটি শিল্পাঞ্চল নির্মাণের কথা।

এই প্রকল্প ইসরায়েলি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে পরিচালিত এবং বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের অর্থনৈতিক মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ দাবি করেছে, তারা এই পরিকল্পনার মূল অংশে জড়িত ছিল না। তবে ইনস্টিটিউটের দুই কর্মী প্রকল্পটি শুরুর দিকের বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

ওই দুই কর্মী একটি মেসেজ গ্রুপেও যুক্ত ছিলেন, যেখানে বিসিজি এবং ইসরায়েলি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখতেন। ওই গ্রুপে ‘গাজা ইকোনমিক ব্লুপ্রিন্ট’ নামে টিবিআইয়ের একটি নথিও শেয়ার করা হয়েছিল।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটটি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার পর এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বর্তমানে এতে ৪৫ টিরও বেশি দেশে ৯০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করেন।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক আলোচনায় ব্লেয়ারের জড়িত থাকার ইতিহাস রয়েছে। তিনি প্রায় আট বছর ধরে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তির প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক জোট কোয়ার্টেটের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ব্যবসায়ীরা বিসিজির অর্থনৈতিক মডেল ব্যবহার করে একটি প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরি করেছিলেন। সেখানে গাজার অর্ধমিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে এলাকা ছেড়ে যেতে টাকা দিয়ে রাজি করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে টিবিআই এই স্লাইড তৈরিতে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

স্লাইডে ‘গ্রেট ট্রাস্ট’ নামক একটি পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়। পরে এই পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনেও পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বহু বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে যেতে রাজি করানো গেলে গাজায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য—ট্রাম্প এবং ধনী উপসাগরীয় শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ওই নথিতে মোট ১০টি ‘মেগা প্রকল্প’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ছিল ‘এমবিএস রিং’ এবং ‘এমবিজেড সেন্ট্রাল’ হাইওয়ে, যা যথাক্রমে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসকদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া ছিল ‘ইলন মাস্ক স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জোনের’ কথাও।

ব্লেয়ারের প্রতিষ্ঠান বলেছে, ওই স্লাইড তৈরিতে তারা কোনোভাবেই যুক্ত ছিল না। তারা বলেছে, ‘ওটা ছিল বিসিজির তৈরি একটি স্লাইড’ এবং এতে তাদের কোনো অবদান ছিল না। প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র বলেন, ‘টনি ব্লেয়ার নিজেও ওই স্লাইড তৈরিকারীদের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি বা ওই সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। ওই পরিকল্পনা রচনায় আমরা কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না।

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে গাজাবাসীকে গাজা থেকে বিতাড়নের যে কোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করি। আমাদের লক্ষ্য গাজাবাসীকে গাজায় টিকে থাকা এবং সেখানে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়া।’ তিনি বলেন, ‘টিবিআইয়ের যে নথির কথা বলা হয়েছে, সেটি ছিল একটি অভ্যন্তরীণ দলিল, যা বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে আসা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছিল। এটি ছিল বহু অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণাত্মক নথিগুলোর মধ্যে একটি।’

তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে টিবিআইয়ের কাজ সব সময়ই গাজাবাসীদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণে নিবেদিত। টনি ব্লেয়ারও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর থেকে এ লক্ষ্যেই কাজ করে আসছেন। এটি কখনোই গাজাবাসীকে অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যাপারে ছিল না। এ ধরনের প্রস্তাব টিবিআই কখনো তৈরি করেনি, গ্রহণ করেনি কিংবা সমর্থন করেনি।’

এদিকে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি বিতর্কিত ইসরায়েলও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ত্রাণ সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বিজিসি নিয়েও বিতর্ক আছে। গত মাসে বিসিজি জানায়, তারা ত্রাণ সংস্থাটির সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত