Ajker Patrika

১ লাখ বই বাঁচাতে পোকার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে প্রাচীন এক পাঠাগার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ২১: ২৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

হাঙ্গেরির অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ‘পাননহালমা আর্চঅ্যাবি’ গ্রন্থাগার প্রায় হাজার বছরের পুরোনো। মধ্যযুগীয় এই বেনেডিক্টাইন আশ্রমটিকে জাতিসংঘের ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু পোকার আক্রমণে এখন এই গ্রন্থাগারের প্রায় এক লাখ বই বিপন্ন। বর্তমানে এটি একটি ছোট আকৃতির মারাত্মক গোবরে পোকার সংক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। এই পরিস্থিতি শত শত বছরের ইতিহাসবাহী বইগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

সিএনএন জানিয়েছে, পোকা দমন কার্যক্রমের আওতায় গ্রন্থাগারটির চার লাখ বইয়ের মধ্যে প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত এক লাখ বইকে আলাদা করে বিশেষ বাক্সে রাখা হচ্ছে। এরপর এগুলোকে অক্সিজেনশূন্য নাইট্রোজেনভর্তি প্লাস্টিক ব্যাগে ছয় সপ্তাহ ধরে রাখা হবে, যেন সব পোকা ধ্বংস হয়।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, পোকাটির নাম ‘ড্রাগস্টোর বিটল’ বা ‘ব্রেড বিটল’। সাধারণত শুকনো খাদ্যপণ্যে এটি দেখা যায়। কিন্তু বইয়ের পাতায় ব্যবহৃত জেলাটিন ও স্টার্চভিত্তিক আঠার প্রতিও এদের আকর্ষণ রয়েছে। গ্রন্থাগারের ৪ ভাগের ১ ভাগ বইয়ে এই পোকা পাওয়া গেছে।

গ্রন্থাগারটির প্রধান সংরক্ষক জসোফিয়া এডিট হাজদু বলেছেন, এই মাত্রার সংক্রমণ আগে কখনো দেখা যায়নি। পুরো সংগ্রহকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে একসঙ্গে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এই সংক্রমণের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। উষ্ণ আবহাওয়া পোকার বিকাশে সহায়ক।

পোকা আক্রমণের প্রথম আলামত পাওয়া যায় সম্প্রতি রুটিন পরিচ্ছন্নতা কাজের সময়। কর্মীরা প্রথমে বইয়ের খাপে অস্বাভাবিক ধুলোর স্তর এবং বইয়ের মলাটে গর্ত দেখতে পেয়েছিলেন। এরপর বই খোলার পর দেখা যায়, পাতার মাঝেও ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে।

আশ্রমটি ৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই হিসাবে এটি হাঙ্গেরির রাজ্য প্রতিষ্ঠারও চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশটির সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে রয়েছে তেরো শতকের একটি পূর্ণাঙ্গ বাইবেল, প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারের আগের শত শত পাণ্ডুলিপি ও ষোলো শতকের হাজার হাজার বই।

গ্রন্থাগারটির পরিচালক ইলোনা আশভানি বলেন, ‘প্রতিবার এই জায়গায় পা রাখলে আমি অবাক হয়ে ভাবি—হাজার বছর আগে এখানে একটি গ্রন্থাগার ছিল। এই জ্ঞানের ভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের ওপর এক বিশাল দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি একটি বইও পোকায় খেয়ে যায়, তবু সংস্কৃতির একটা অংশ হারিয়ে যায়। যত প্রতিলিপিই থাকুক না কেন, মূলটিই একমাত্র ঐতিহ্য।’

আশ্রমটি আশাবাদী, আগামী বছরের শুরুতে গ্রন্থাগার আবার দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে ইতিহাস ও সংস্কৃতির এই অমূল্য সম্পদ রক্ষার লড়াই এখনো চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত