Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের কাছে যা চাইলেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আলাস্কায় পুতিনকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
আলাস্কায় পুতিনকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

রাশিয়া ইউক্রেনের কিছু ছোট ছোট দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দেবে, বিনিময়ে কিয়েভ দেশের পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা মস্কোর হাতে তুলে দেবে। আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছে, মস্কোর ভাবনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের একদিন পরই এ খবর সামনে এল। আলাস্কায় মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর এক ঘাঁটিতে এই বৈঠক হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এটি ছিল কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের প্রথম সাক্ষাৎ। পুতিন যখন এই প্রস্তাব দিয়েছেন, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল সোমবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।

যদিও এই সম্মেলনে ট্রাম্প প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারেননি, তবে ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি ও পুতিন ইউক্রেনের ভূখণ্ড হস্তান্তর ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁরা ‘ব্যাপকভাবে একমত’ হয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি। তবে ইউক্রেনকেও এতে সম্মত হতে হবে। ওরা হয়তো না বলবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁদের জানা প্রস্তাবগুলো মূলত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের নেতাদের আলোচনার ভিত্তিতে। তাঁদের তথ্য পূর্ণাঙ্গ নয় বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা। শনিবার ভোরেই ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু শেয়ার করেন।

তবে এটি স্পষ্ট নয় যে পুতিনের এই প্রস্তাবগুলো কেবল আলোচনার শুরু করার উদ্দেশ্যে নাকি চূড়ান্ত প্রস্তাব, যা নিয়ে আর দর-কষাকষি করা যাবে না। প্রথম দর্শনে অন্তত কিছু শর্ত ইউক্রেনের নেতৃত্বের জন্য মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। পুতিনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। এতে জেলেনস্কির মূল দাবি ব্যাহত হচ্ছে, কারণ তাঁর দেশ প্রতিদিন রাশিয়ার ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হচ্ছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, কিয়েভকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। বিনিময়ে রাশিয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্র স্থির রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দেবে। ইউক্রেন আগেই ঘোষণা করেছে, দোনেৎস্কের মতো ভূমি থেকে কোনো অবস্থাতেই তারা পিছু হটবে না। ইউক্রেনের মতে, দোনেৎস্ক প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রাশিয়া যাতে ইউক্রেনের গভীরে হামলা চালাতে না পারে সেই লক্ষ্যে ঢাল হিসেবে কাজ করছে।

সূত্র আরও জানায়, রাশিয়া সুমি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলে দখল করা তুলনামূলক ছোট ছোট এলাকা ফেরত দিতে রাজি হতে পারে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ প্রকল্প ডিপ স্টেটের তথ্য অনুযায়ী, সুমি ও খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার দখল প্রায় ৪৪০ বর্গকিলোমিটার। অপরদিকে দনবাসের (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল) বেশির ভাগ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ৫৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এই এলাকার প্রায় ৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে ইউক্রেন।

আমেরিকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অন্তত ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চান। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের একার স্বীকৃতি নাকি সব পশ্চিমা দেশ ও ইউক্রেনের সম্মিলিত স্বীকৃতি—তা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার কর্তৃত্বকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেয়নি।

সূত্রগুলো আরও জানায়, পুতিন অন্তত কিছু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাচ্ছেন। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নাকি শুধু ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে—তা স্পষ্ট নয়। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলোর (যেমন চীন) বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রয়োজন নেই। তবে ‘দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে’ হয়তো করতে হবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেন ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না। তবে ইউক্রেনের জন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে পুতিন কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে এই নিশ্চয়তা আসলে কীভাবে কার্যকর হবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, শনিবার ট্রাম্প তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এবং ন্যাটোর বাইরে থেকেও ‘আর্টিকেল ৫ ’—এর মতো কোনো নিশ্চয়তার ধারণা তুলেছেন।

ন্যাটোর আর্টিকেল—৫ অনুযায়ী, জোটভুক্ত ৩২ দেশের যেকোনো একটির ওপর হামলা মানে সবার ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হয়। কিয়েভের জন্য ন্যাটোতে যোগ দেওয়া একটি কৌশলগত লক্ষ্য, যা তাদের সংবিধানেও লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া, প্রস্তাবে ইউক্রেনে রুশ ভাষার সরকারি মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি রয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চকে অবাধে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে। তবে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা অভিযোগ করেছে, মস্কো-সমর্থিত চার্চ রাশিয়ার যুদ্ধে সহযোগিতা করছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে এবং গুপ্তচরদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও চার্চ তা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে তারা ইতিমধ্যে মস্কোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ইউক্রেন রাশিয়াসংশ্লিষ্ট ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করেছে। তবে এখনো এ আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত