Ajker Patrika

আলাস্কা বৈঠক নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব ইউক্রেনে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ২২: ০২
রাজধানী কিয়েভের সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের স্লোভিয়ানস্ক শহরের রেল যোগাযোগ রয়েছে। ছবি: সিএনএন
রাজধানী কিয়েভের সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের স্লোভিয়ানস্ক শহরের রেল যোগাযোগ রয়েছে। ছবি: সিএনএন

পূর্ব ইউক্রেনের স্লোভিয়ানস্ক শহরের এক ছোট লবণাক্ত হ্রদের তীরে সাময়িক স্বস্তির জন্য যায় মানুষ। যুদ্ধের নিকটবর্তী ফ্রন্টলাইন থেকে কয়েক মাইল দূরের এই শান্ত তীরের দৃশ্য হঠাৎই বদলে গেছে আলাস্কা বৈঠকের খবরে।

আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সিএনএন জানিয়েছে, আসন্ন ওই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলোচনায় ইউক্রেনের দোনবাসের (দোনেস্ক ও লুহানস্ক) কিছু অংশ রাশিয়াকে দিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠেছে। ক্রেমলিনের এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে দেওয়া হয়েছে। তবে কিয়েভ তথা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তারপরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দোনেস্কের স্লোভিয়ানস্কে।

স্থানীয় সাংবাদিক মিখাইলো বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু এখানেই থাকতে চায়। কিন্তু এই প্রস্তাব কার্যকর হলে আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। তবে আমি মনে করি, এটা বাস্তবে ঘটবে না।’

মিখাইলোর মতে, ট্রাম্প ভুল করেছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প পুতিনকে কাদা থেকে তুলে বলেছেন, ‘‘ভ্লাদিমির, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই, কারণ তোমাকে আমার ভালো লাগে।’’ অথচ প্রতিদিন ইউক্রেনীয়রা মারা যাচ্ছে, সেটি তাঁর মাথায়ই ছিল না।’

দুই বছর আগে পুঁতে রাখা স্থলমাইনে পা হারিয়েছেন ওই শহরের লুদমিলা নামের এক নারী। তিনি বলেন, তারা সবাই মিথ্যা বলে। ভাবে এক, বলে আরেক, আর করে অন্য কিছু—রাজনীতি সব সময়ই এমন।

২০১৪ সালে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখল থেকে স্লোভিয়ানস্ক মুক্ত করেছিল ইউক্রেন। এখন শহরটির পশ্চিম দিকে নতুন খাল খোঁড়া হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাশিয়ার চলমান আক্রমণে শহরটি আবারও হুমকির মুখে পড়তে পারে। তবে এই হুমকি যে যুক্তরাষ্ট্রের কলকাঠিতে আসতে পারে, এমনটি কল্পনায়ও ছিল না স্থানীয় বাসিন্দাদের।

শহরের একমাত্র মাতৃসদনে সদ্য মা হওয়া তাইসিয়া বলেন, ‘খবরটা খুব খারাপ। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারব না। হয়তো হঠাৎ করে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।’

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্লোভিয়ানস্ক শহরের অনেক মানুষ। এই শহরের বাসিন্দা নাতালিয়া ও সিয়াতোস্লাভের কন্যা সোফিয়া। যুদ্ধ বাড়ির কাছাকাছি চলে আসায় সোফিয়া তাঁর স্বামী মিকিতা ও শিশুপুত্র লেভকে নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য কিয়েভে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৩১ জুলাই সেই কিয়েভেই এক বিমান হামলায় তাঁরা তিনজনই নিহত হয়েছে। মৃত্যুর সময় সোফিয়া তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং স্লোভিয়ানস্কে বাবা-মায়ের কাছে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। কন্যার স্মৃতিচারণ করে নাতালিয়া বলেন, তারা যুদ্ধের কাছ থেকে দূরে গিয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ তাদের খুঁজে নিয়েছে।

স্লোভিয়ানস্ক শহরেরই এক সৈনিক সেরহি। যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিন থেকে তিনি সম্মুখ সমরে আছেন। দুই দিনের ছুটি পেয়ে জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে বাড়ি এসেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী তেতিয়ানার কোনো আগ্রহই নেই আলাস্কা বৈঠক নিয়ে। তেতিয়ানা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একটাই—আমার স্বামী যেন জীবিত ফিরে আসে। আমি ঘরবাড়ি নিয়ে কিছু ভাবি না।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প-পুতিনের সম্ভাব্য চুক্তি শুধুই রাজনৈতিক কূটচাল নাকি বাস্তব হুমকি—তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু স্লোভিয়ানস্ক শহর ও এর আশপাশের মানুষের কাছে সম্ভাব্য ওই চুক্তি ইতিমধ্যেই গভীর প্রভাব ফেলেছে। কারণ, এখানে প্রতিটি দিনই যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

রিটার্ন না দিলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

উত্তরায় বকশীগঞ্জের সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

ফজলুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে: বিএনপিকে সারজিস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত