আব্দুর রহমান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়রের সাম্প্রতিক বক্তব্য যুদ্ধবিরতির আশা জাগাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো, যুদ্ধবিরতি আসলে কত দূর? কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব তোড়জোড় করলেও তাঁর ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের বেশি পেরিয়ে যাওয়ার পরও যুদ্ধবিরতি এখনো আসেনি ইউক্রেনে।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে হয়তো জমি ছাড়তে হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। ক্লিৎসকো বলেন, একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো...ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া। এটি ন্যায্য নয়। তবে শান্তির জন্য, সাময়িক শান্তির জন্য হয়তো এটি একটি সমাধান হবে। সাময়িকভাবে।
মূলত রাশিয়ার যে দাবি, রণক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা অনুসারে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সেটির পক্ষেই যেন সম্মতি ক্লিৎসকোর এই মন্তব্য। তবে ক্লিৎসকোর এই মন্তব্যই কেবল রাশিয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির একমাত্র শর্ত নয়। কারণ, তাঁর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড ছাড়বে না। এ ছাড়া ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া নিয়েও রাশিয়ার আপত্তি রয়েছে।
তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশা জাগাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনকে সত্যিকার অর্থেই রণক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া লাগতে পারে। কারণ, ট্রাম্প কোনো চালবাজি না করে উভয় পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলেনস্কি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, জেলেনস্কির এই প্রত্যাখ্যান ‘হত্যার ক্ষেত্রকে’ দীর্ঘায়িত করা ছাড়া আর কিছুই করবে না। কেউ তা চায় না। ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। কিন্তু যার কাছে খেলার জন্য কোনো তাস নেই, সেই লোকটিই তাহলে এটি সম্পন্ন করুক।’
এদিকে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে। তিনি বলেন, ‘ক্রিমিয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ বরং তিনি দাবি করেন, এই বিতর্কিত বিষয় তাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দিয়ে গেছেন।
মনে রাখা দরকার, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ। ২০১৪ সালে রাশিয়া এটিকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার এই অঞ্চলকে রুশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সপ্তাহে ট্রাম্প জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যদি তিনি ক্রিমিয়া চান, তাহলে ১১ বছর আগে এর জন্য লড়াই করেননি কেন?’
একই সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণ ছিল যখন তারা ন্যাটোতে যোগদানের কথা বলতে শুরু করেছিল।’ ট্রাম্পের কথা থেকে এটি স্পষ্ট, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত মানতেই হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছে। ১৭ এপ্রিল ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেন। জবাবে ইউরোপীয় দেশগুলো ও ইউক্রেন একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে। দুই পক্ষের প্রস্তাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত ‘আগ্রহীদের জোট।’ এই জোটে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা চায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। ন্যাটোর মতো একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি তারা চাইছে, যেখানে আক্রান্ত হলে ইউক্রেনকে সহায়তা করা হবে।
ইউরোপ ও ইউক্রেনের পাল্টা প্রস্তাবে ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে বাদ রাখার যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মানা হয়নি। এ বিষয়ে তারা সরাসরি কিছু বলতে চায়নি। একই সঙ্গে ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনার উপস্থিতি সীমিত করার চেষ্টাও তারা মেনে নেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয়রা দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করতে চায় যুদ্ধবিরতির পর।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিষয়টিকে আইনত মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য দখল করা এলাকা, যেমন পুরো লুহানস্কের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকেও কার্যত স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের।
আরেকটি বড় পার্থক্য রয়েছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এটি ইউক্রেনকে ফেরত দেওয়া হবে, তবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়কেই বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। ইউরোপীয়দের পাল্টা প্রস্তাবে রাশিয়াকে বিদ্যুৎ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
১৭ এপ্রিলের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়ার ওপর ১১ বছরের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা প্রস্তাবে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা কমানোর কথা বলা হয়েছে। উইটকফের প্রস্তাবে রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনীয় শিশুদের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে বিষয়টি ইউরোপ ও ইউক্রেনীয়দের পাল্টা প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। আলোচনায় জড়িত পক্ষগুলো এখন এই পার্থক্যগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে ভাবছে।
এদিকে ট্রাম্পের দূত উইটকফ আবার মস্কোয় গেছেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এটি তাঁর চতুর্থ মস্কো সফর। সম্ভবত তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে কিছু বিষয়ে ছাড় আদায় করতে চাইবেন। তবে কোন কোন বিষয়ে ছাড় আদায় করতে চান, সেগুলো নিয়ে এখনো খোলাসা করা কোনো মন্তব্য কোনো তরফ থেকে আসেনি।
অপরদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত। তবে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় এখনো আছে। সেগুলো সূক্ষ্মভাবে ঠিক করা দরকার। আমরা এটি নিয়েই ব্যস্ত আছি।’ তিনি বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতির মূল কারণগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট উপলব্ধি করেছেন। সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র নেতা হিসেবে তিনি এটি বুঝেছেন।’ তবে তিনি আরও বলেছেন, ট্রাম্প চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করেননি।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে যুদ্ধবিরতি খুব শিগগির বাস্তবায়িত হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ বৈঠকে বসছেন। এর ফলে এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ইউরোপ ও স্বয়ং ইউক্রেনকে কার্যকরভাবে এক পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউস মনে করে, তারা নিজেরাই বিষয়টি সমাধান করতে পারবে। রাশিয়া হয়তো কিয়েভ ও অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহর দখল করার এবং পশ্চিমাপন্থী সরকারকে সরিয়ে বেলারুশের মতো মস্কোপন্থী সরকার বসানোর মূল লক্ষ্য অর্জন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূল বিষয় হলো, এই সংকট নিরসনে রাশিয়ার একটি ‘প্ল্যান-বি’ রয়েছে। গার্ডনার মনে করেন, ট্রাম্পের কল্যাণে রাশিয়ার প্ল্যান-বি কাজ করছে।
গার্ডনারের মতে রাশিয়ার প্ল্যান-বি হলো—ট্রান্সআটলান্টিক জোট ন্যাটোর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। শান্তি আলোচনাকে এমনভাবে দীর্ঘায়িত করা, যাতে ইউক্রেনকে বাধা হিসেবে চিত্রিত করা যায় এবং শান্তিচুক্তির পুরস্কার হিসেবে রাশিয়ায় মার্কিন ব্যবসার পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা ঝুলিয়ে রাখা।
এই বিশ্লেষক বলেন, এটি মনে রাখা দরকার যে ১১ মার্চ ইউক্রেন ওয়াশিংটনের তৈরি করা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছিল। কোনো পূর্বশর্ত, কোনো কিন্তু বা কোনো সংযোজন ছাড়াই। রাশিয়া রাজি হয়নি। কিন্তু এর পরিবর্তে আলোচনা এখন যুদ্ধবিরতির বাইরে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির দিকে মোড় নিয়েছে, যা প্রায় পুরোপুরিই মস্কোর পক্ষে।
ফলে এই অবস্থায় এলে যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে কিছু ছাড় দিয়ে ও কিছু ছাড় আদায় করে নিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি করতে চান। কিন্তু সেটি আবার ইউক্রেনের মনঃপূত নয়। ফলে শিগগির যুদ্ধবিরতি হচ্ছে না বলেই অনুমান করা যায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়রের সাম্প্রতিক বক্তব্য যুদ্ধবিরতির আশা জাগাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো, যুদ্ধবিরতি আসলে কত দূর? কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব তোড়জোড় করলেও তাঁর ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের বেশি পেরিয়ে যাওয়ার পরও যুদ্ধবিরতি এখনো আসেনি ইউক্রেনে।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে হয়তো জমি ছাড়তে হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। ক্লিৎসকো বলেন, একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো...ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া। এটি ন্যায্য নয়। তবে শান্তির জন্য, সাময়িক শান্তির জন্য হয়তো এটি একটি সমাধান হবে। সাময়িকভাবে।
মূলত রাশিয়ার যে দাবি, রণক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা অনুসারে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, সেটির পক্ষেই যেন সম্মতি ক্লিৎসকোর এই মন্তব্য। তবে ক্লিৎসকোর এই মন্তব্যই কেবল রাশিয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির একমাত্র শর্ত নয়। কারণ, তাঁর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড ছাড়বে না। এ ছাড়া ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া নিয়েও রাশিয়ার আপত্তি রয়েছে।
তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশা জাগাচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনকে সত্যিকার অর্থেই রণক্ষেত্রের বর্তমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়া লাগতে পারে। কারণ, ট্রাম্প কোনো চালবাজি না করে উভয় পক্ষকে একটি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলেনস্কি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, জেলেনস্কির এই প্রত্যাখ্যান ‘হত্যার ক্ষেত্রকে’ দীর্ঘায়িত করা ছাড়া আর কিছুই করবে না। কেউ তা চায় না। ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। কিন্তু যার কাছে খেলার জন্য কোনো তাস নেই, সেই লোকটিই তাহলে এটি সম্পন্ন করুক।’
এদিকে টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে। তিনি বলেন, ‘ক্রিমিয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ বরং তিনি দাবি করেন, এই বিতর্কিত বিষয় তাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দিয়ে গেছেন।
মনে রাখা দরকার, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের একটি দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ। ২০১৪ সালে রাশিয়া এটিকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বারবার এই অঞ্চলকে রুশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সপ্তাহে ট্রাম্প জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যদি তিনি ক্রিমিয়া চান, তাহলে ১১ বছর আগে এর জন্য লড়াই করেননি কেন?’
একই সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে যুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণ ছিল যখন তারা ন্যাটোতে যোগদানের কথা বলতে শুরু করেছিল।’ ট্রাম্পের কথা থেকে এটি স্পষ্ট, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্ত মানতেই হবে, অন্য কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপক তোড়জোড় চালাচ্ছে। ১৭ এপ্রিল ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেন। জবাবে ইউরোপীয় দেশগুলো ও ইউক্রেন একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে। দুই পক্ষের প্রস্তাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত ‘আগ্রহীদের জোট।’ এই জোটে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। অন্যদিকে ইউরোপীয়রা চায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। ন্যাটোর মতো একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি তারা চাইছে, যেখানে আক্রান্ত হলে ইউক্রেনকে সহায়তা করা হবে।
ইউরোপ ও ইউক্রেনের পাল্টা প্রস্তাবে ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে বাদ রাখার যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মানা হয়নি। এ বিষয়ে তারা সরাসরি কিছু বলতে চায়নি। একই সঙ্গে ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনার উপস্থিতি সীমিত করার চেষ্টাও তারা মেনে নেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয়রা দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা করতে চায় যুদ্ধবিরতির পর।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের বিষয়টিকে আইনত মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য দখল করা এলাকা, যেমন পুরো লুহানস্কের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকেও কার্যত স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের।
আরেকটি বড় পার্থক্য রয়েছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এটি ইউক্রেনকে ফেরত দেওয়া হবে, তবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়কেই বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। ইউরোপীয়দের পাল্টা প্রস্তাবে রাশিয়াকে বিদ্যুৎ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
১৭ এপ্রিলের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাশিয়ার ওপর ১১ বছরের নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা প্রস্তাবে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা কমানোর কথা বলা হয়েছে। উইটকফের প্রস্তাবে রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনীয় শিশুদের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে বিষয়টি ইউরোপ ও ইউক্রেনীয়দের পাল্টা প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। আলোচনায় জড়িত পক্ষগুলো এখন এই পার্থক্যগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে ভাবছে।
এদিকে ট্রাম্পের দূত উইটকফ আবার মস্কোয় গেছেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এটি তাঁর চতুর্থ মস্কো সফর। সম্ভবত তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে কিছু বিষয়ে ছাড় আদায় করতে চাইবেন। তবে কোন কোন বিষয়ে ছাড় আদায় করতে চান, সেগুলো নিয়ে এখনো খোলাসা করা কোনো মন্তব্য কোনো তরফ থেকে আসেনি।
অপরদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত। তবে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় এখনো আছে। সেগুলো সূক্ষ্মভাবে ঠিক করা দরকার। আমরা এটি নিয়েই ব্যস্ত আছি।’ তিনি বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতির মূল কারণগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট উপলব্ধি করেছেন। সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র নেতা হিসেবে তিনি এটি বুঝেছেন।’ তবে তিনি আরও বলেছেন, ট্রাম্প চুক্তির বিস্তারিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করেননি।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে যুদ্ধবিরতি খুব শিগগির বাস্তবায়িত হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর চতুর্থ বৈঠকে বসছেন। এর ফলে এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ইউরোপ ও স্বয়ং ইউক্রেনকে কার্যকরভাবে এক পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউস মনে করে, তারা নিজেরাই বিষয়টি সমাধান করতে পারবে। রাশিয়া হয়তো কিয়েভ ও অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহর দখল করার এবং পশ্চিমাপন্থী সরকারকে সরিয়ে বেলারুশের মতো মস্কোপন্থী সরকার বসানোর মূল লক্ষ্য অর্জন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূল বিষয় হলো, এই সংকট নিরসনে রাশিয়ার একটি ‘প্ল্যান-বি’ রয়েছে। গার্ডনার মনে করেন, ট্রাম্পের কল্যাণে রাশিয়ার প্ল্যান-বি কাজ করছে।
গার্ডনারের মতে রাশিয়ার প্ল্যান-বি হলো—ট্রান্সআটলান্টিক জোট ন্যাটোর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া। শান্তি আলোচনাকে এমনভাবে দীর্ঘায়িত করা, যাতে ইউক্রেনকে বাধা হিসেবে চিত্রিত করা যায় এবং শান্তিচুক্তির পুরস্কার হিসেবে রাশিয়ায় মার্কিন ব্যবসার পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা ঝুলিয়ে রাখা।
এই বিশ্লেষক বলেন, এটি মনে রাখা দরকার যে ১১ মার্চ ইউক্রেন ওয়াশিংটনের তৈরি করা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছিল। কোনো পূর্বশর্ত, কোনো কিন্তু বা কোনো সংযোজন ছাড়াই। রাশিয়া রাজি হয়নি। কিন্তু এর পরিবর্তে আলোচনা এখন যুদ্ধবিরতির বাইরে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির দিকে মোড় নিয়েছে, যা প্রায় পুরোপুরিই মস্কোর পক্ষে।
ফলে এই অবস্থায় এলে যুদ্ধবিরতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে কিছু ছাড় দিয়ে ও কিছু ছাড় আদায় করে নিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি করতে চান। কিন্তু সেটি আবার ইউক্রেনের মনঃপূত নয়। ফলে শিগগির যুদ্ধবিরতি হচ্ছে না বলেই অনুমান করা যায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের মিলওয়াকি কাউন্টি সার্কিট কোর্টের বিচারক হান্না ডুগানকে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার থেকে বাঁচাতে সহায়তা করায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
৩৪ মিনিট আগেফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, বেসামরিক বহু মানুষ ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রসফায়ারে পড়ে নিহত হয়েছে। হামাসের হামলার পর থেকে নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৮২ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। ইসরায়েল বলছে, এদের কেউ কেউ পাথর নিক্ষেপ ও ‘জঙ্গি’ কার্যক্রমে জড়িত ছিল। অধিকার গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে...
২ ঘণ্টা আগেএক দশকের বেশি সময় ধরে চীনে পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বের সর্বোচ্চ অসমাপ্ত গগনচুম্বী ভবনের নির্মাণকাজ আবার শুরু হতে যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহেই এই কাজ শুরু হতে পারে।
২ ঘণ্টা আগেআগামীকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খ্রিষ্টানদের সদ্যপ্রয়াত ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান। এরপর তাঁর মরদেহ ইতালির রোম শহরের অপর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সান্তা মারিয়া মাজারে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।
৪ ঘণ্টা আগে