Ajker Patrika

ডেলটার দাপটে ভেঙে পড়ার মুখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি: গবেষণা

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, ০৩: ৪১
Thumbnail image

করোনার ডেলটা ধরনের দাপট আর সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচির ব্যর্থতায় পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি এখন ভেঙে পড়ার মুখে। এশিয়ার এই অঞ্চলের দেশগুলো যে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, তেমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশগুলির অর্থনীতি আরও বেহাল হওয়ারই আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে করা ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞদের একটি বিশ্লেষণ এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে।

সম্প্রতি  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোভিডের নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া।   বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেলটা রূপের দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা আর সকলকে দ্রুত কোভিড টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারগুলোর অক্ষমতাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ওই দেশগুলোতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। বৈশ্বিক মহামারির গত দেড় বছরে সংক্রমণ ও মৃতের হার বৃদ্ধির এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোনো প্রান্তেই ঘটেনি। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন,  এই পরিস্থিতিতেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মাত্র নয় শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির টিকাকরণের হারের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমেরিকা ও ইউরোপের ওই সব দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে ইতিমধ্যেই টিকা দেওয়া হয়েছে।

তবে ছবিটা একটু আলাদা শুধু সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশেই একমাত্র টিকা প্রয়োগের হার বেশ উঁচুতে রয়েছে। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিঙ্গাপুর অন্য সব দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত এখনো বন্ধ করে রেখেছে।

করোনা মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দ করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই এখন তীব্র রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি। যে সমস্যা খুব শিগগিরই মেটারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে আরও বেশি সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে দেশগুলো। তাদের মুদ্রা-মূল্য উত্তরোত্তর কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা থাইল্যান্ডের মুদ্রা বাত-এর। এই মুদ্রার মূল্য জুনের মাঝামাঝি থেকে কমেছে পাঁচ শতাংশ। ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোর মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৪.২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মহামারির আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মোট অর্থনীতি ছিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম।  আর এখন মহামারির দাপটে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া এ বছরে তাদের জিডিপি-র পূর্বাভাসের সীমা অনেকটাই কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে। একই অবস্থা থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ এই অঞ্চলের বহু দেশের। গত অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ালেও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক অবস্থাও বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে তেমন ভালো নয়।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সমস্যা থেকে খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসার কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। কারণ,  যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূলত ইলেকট্রনিকস পণ্যের রপ্তানিই  ছিল এই দেশগুলির অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু লকডাউনে সেই সব শিল্প, কারখানা দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সেই সব পণ্য রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু একটানা লকডাউন চালিয়ে গেলে কাজ হবে না। বরং টিকাকরণের কাজের গতি অনেক গুণ বাড়াতে হবে। না হলে সংক্রমণে তো রাশ টানা যাবেই না, অর্থনীতিও আরও মুখ থুবড়ে পড়বে।

এ নিয়ে সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজি গ্রোয়েপ এনভির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ক গবেষণা দলের প্রধান রব কার্নেল বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গরিব দেশগুলো করোনা মহামারির শুরুর দিকে লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। যারা মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। আর এ জন্য মূল্য চুকাতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত