Ajker Patrika

তালেবানের দক্ষ স্নাইপার থেকে যেভাবে মেয়র হলেন দামুল্লাহ মহিবুল্লাহ মোয়াফফাক

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ৫১
তালেবানের দক্ষ স্নাইপার থেকে যেভাবে মেয়র হলেন দামুল্লাহ মহিবুল্লাহ মোয়াফফাক

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তালেবানের দক্ষ স্নাইপার ছিলেন দামুল্লাহ মহিবুল্লাহ মোয়াফফাক। তবে এখন তিনি আফগানিস্তানের ফারিয়াব প্রদেশের রাজধানী মায়মানা শহরের মেয়র।

পশ্চিমা দেশগুলোর সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার তিন মাস পরেই গত নভেম্বরে ২৫ বছর বয়সী মহিবুল্লাহ মায়মানা শহরের মেয়রের দায়িত্ব নেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

যুদ্ধে মহিবুল্লাহর হাতে বা কাঁধে থাকত স্নাইপার। প্রাণঘাতী এই অস্ত্র নিয়ে তালেবানের ‘শত্রু’ নিধনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। তবে এখন দেশের উন্নতি নিজের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মহিবুল্লাহ।

এএফপিকে মহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন যুদ্ধে ছিলাম, তখন আমার লক্ষ্য ছিল খুবই স্পষ্ট—বিদেশি দখলদারি, বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটানো। এখন আমার লক্ষ্য স্পষ্ট—দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং দেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা।’ 

মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর মহিবুল্লাহকে পায়ে হেঁটে চষে বেড়াতে হয় শহরের অলিগলি। এখন মহিবুল্লাহর দৈনন্দিন কাজের তালিকায় রয়েছে বন্ধ হয়ে থাকা নর্দমা সচল করা, সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যকার বিবাদ-বিরোধ নিরসনের মতো অনেক বিষয়।

মায়মানা শহরে প্রায় ১ লাখ মানুষের বাস। তাদের অভিযোগ এবং পরামর্শে দৈনিক করণীয় তালিকা তৈরি করেন মহিবুল্লাহ। 

সাইয়েদ আহমদ শাহ গিয়াসি মহিবুল্লাহর সহযোগী। তবে তিনি তালেবানের সদস্য ছিলেন না। গিয়াসি বলেন, ‘নতুন মেয়র তরুণ, সুশিক্ষিত। সে জানে কীভাবে মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়।’

মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর মহিবুল্লাহকে পায়ে হেঁটে চষে বেড়াতে হয় শহরের অলিগলিতালেবানের বেশির ভাগ সদস্য সাধারণত গরিব ও মাদ্রাসাপড়ুয়া। কিন্তু মহিবুল্লাহ তাদের থেকে ভিন্ন। ধনী বণিক পরিবারের সদস্য মহিবুল্লাহ। তিনি মায়মানাতেই বেড়ে উঠেছেন। স্কুলে ভালো ছাত্র হিসেবে তাঁর নাম ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায়ও তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন। 

শৈশব-কৈশোরে মহিবুল্লাহর নানান অর্জন আছে। এসব অর্জনের নানা স্মারক ও সনদ তাঁর কার্যালয়ে সজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে হাইস্কুলে পড়ালেখার সময় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পাওয়া কৃতিত্বের সনদও রয়েছে। 

১৯ বছর বয়সে তালেবানে যোগ দেন মহিবুল্লাহ। পরে তাঁকে ফারিয়াব প্রদেশের একটি ছোট তালেবান ইউনিটের প্রধান করা হয়। 

অনেকে মহিবুল্লাহকে তালেবানের অন্যতম দক্ষ স্নাইপার যোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। যদিও যুদ্ধসংক্রান্ত গল্প বলতে এএফপির কাছে অনীহা প্রকাশ করেন মহিবুল্লাহ। 

এএফপির প্রতিনিধির সঙ্গে মায়মানার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটি বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে যান মেয়র মহিবুল্লাহ। বাড়িটিতে এখনো যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মহিবুল্লাহ জানান, এই বাড়িতে থেকেই একসময় তিনি তাঁর তালেবান ইউনিট চালাতেন। 

সাইফুদ্দিন নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, এই বাড়ি থেকেই মহিবুল্লাহ গুলি করে এক মার্কিন সেনাকে হত্যা করেন। পরে একটি যুদ্ধবিমান এসে বাড়িটি লক্ষ্যবস্তু করে তাঁর ওপর বোমা হামলা করে। 

তবে এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি মহিবুল্লাহ ওই হামলার জন্য দায়ী কি না। তবে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তাদের বিশেষ বাহিনীর একজন সদস্য ফারিয়াবে মারা গেছেন। 

গত আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আফগানিস্তানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। দেশটির সাবেক সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে হত্যার জন্য তালেবানকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া নারী অধিকারকর্মীদের আটকের পাশাপাশি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগও আছে তালেবানের বিরুদ্ধে। 

পোশাক-পরিচ্ছদের দিক দিয়ে তালেবানের অন্যান্য সদস্য থেকে মহিবুল্লাহর কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু তিনি নানাভাবে কট্টরপন্থী নীতিতে বিশ্বাসী অন্য সব তালেবান থেকে ব্যতিক্রম। 

তালেবান ক্ষমতায় এসে আফগান নারীদের জনপরিসর থেকে ঘরে ঠেলে দিয়েছে। তরুণ নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্র অনেকাংশে নারী কর্মীকে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। 

এই বাড়ি থেকেই তালেবানের কার্যক্রম চালাতেন মহিবুল্লাহতবে মেয়র মহিবুল্লাহর কার্যালয়ের দৃশ্য ভিন্ন। তাঁর কার্যালয়ে নারী কর্মীদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। শহরের একটি পার্ক নারীদের জন্য সংরক্ষিত করেও দিয়েছেন তিনি। 

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম শাসনামলে আফগান নারীদের বোরকা পরে মুখমণ্ডলসহ পুরো শরীর ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এবার ক্ষমতায় এসে আগেরবারের মতো তালেবান এই ব্যাপারটিতে ততটা কঠোর অবস্থানে নেই। তবে রাজধানী কাবুলে নারীরা যাতে বাইরে তাঁদের মুখ ঢেকে চলাচল করেন, সেই আদেশ জারি করা হয়েছে। 

মেয়র মহিবুল্লাহর কার্যালয়ে মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন কাহেরা নামের ২৬ বছর বয়সী এক নারী। বিদ্যমান পোশাকবিধি মেনে তিনি হিজাব পরে অফিস করেন। তবে পোশাকের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

কাহেরা বলেন, ‘অফিসে কেউ আমাদের বলে না যে কীভাবে বা কোন ধরনের পোশাক পরতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত