Ajker Patrika

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে অস্ট্রেলীয়রা, অপচয়ও করে বেশি

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে অস্ট্রেলীয়রা, অপচয়ও করে বেশি

ফাস্ট ফ্যাশনের বাজারে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা। পাশাপাশি, দেশটির নাগরিকেরা প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পোশাক অপচয়ও করে। তারা প্রতিবছর গড়ে ২৩ কেজি পরিমাণ পোশাক ফেলে দেয়। এ ছাড়া, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৯২ হাজার টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক খ্রিষ্টান দাতব্য সংস্থা ব্যাপটিস্ট ওয়ার্ল্ড এইডের ১০ম ইথিকাল ফ্যাশন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাপটিস্ট ওয়ার্ল্ড এইডের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৯২ হাজার টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি হয়। অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রায় ২২ হাজার টন পোশাক বর্জ্য খোলা মাঠে ফেলা হয়। এর অর্থ, প্রতি বছর প্রত্যেক অস্ট্রেলিয়ান প্রায় ২৩ কেজি পোশাক ফেলে দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রতিবছর মাথাপিছু গড়ে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া শীর্ষে ছিল। দেশটিতে প্রত্যক ব্যক্তি গড়ে ৫৬টি পোশাক কেনে। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ৫৩টি, চীনে ৩০টি এবং যুক্তরাজ্য ৩৩ টির মতো।

ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো গ্রুপের ইভেন্ট ডিরেক্টর এবং গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপোর আয়োজক জুলি হোল্ট বলেছেন, ‘এই পদ্ধতিগত সমস্যাটি শিল্পের চলমান সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ, গ্রিনওয়াশিং এবং কিছু বিক্রেতার জবাবদিহির অভাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ানরা প্রায় ৬০০ কিলোগ্রাম পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্য ফেলে দেয়। এর মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বড় পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগও তুলে ধরেছে।’

আফটার নামে পরিবেশ ও টেক্সটাইল খাত নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও আসন্ন গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো সেমিনার সিরিজের বক্তা নেহাল জৈনও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ও টেক্সটাইল ভোক্তা। আমরা সমানে পোশাক ফেলে দিই। গড়ে পোশাকগুলো মাত্র সাতবার পরার পরেই বাতিল করা হয়।’

২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আফটার’ অব্যবহারযোগ্য টেক্সটাইল পণ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। সংস্থাটি সরকার, করপোরেট, স্কুল এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাতে এই বিষয়ে একটি সহজ বিকল্প তৈরি করা হয়। সম্প্রতি তারা নিউজিল্যান্ডেও তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করেছে।

জৈন স্বীকার করেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের সংস্কৃতি থাকলেও, অব্যবহারযোগ্য, ক্ষতিগ্রস্ত, পুরোনো এবং একেবারেই শেষ অবস্থায় থাকা পোশাকের জন্য খুব কম বিকল্পই রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে এই অবহেলিত ক্যাটাগরির ওপর মনোযোগ দিই। আমরা পুরোনো, বিক্রয় অযোগ্য এবং অব্যবহারযোগ্য টেক্সটাইল পণ্য সংগ্রহ করি এবং নিশ্চিত করি যে, এগুলো নৈতিকভাবে ও টেকসই পদ্ধতিতে আপসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহার করে কাঁচামাল—যেমন সুতোয় পরিণত করা হয়। যাতে এগুলো আবার সার্কুলার ইকোনমিতে প্রবেশ করতে পারে।’

হোল্ট উল্লেখ করেন, পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু উন্নতি হলেও, সাপ্লাই চেইনজুড়ে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ খুচরা সরবরাহ চেইনে সম্পূর্ণ ট্র্যাকিংয়ের চাহিদা রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করলে পোশাকের শেষ ফাইবার পর্যন্ত বিক্রেতাদের জবাবদিহি করা যাবে এবং আরও টেকসই সোর্সিং উৎসাহিত হবে।’

জৈন বলেন, ভোক্তাদের মধ্যে আরও সচেতনতা পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘আজকের ভোক্তারা সত্যিই প্রশ্ন করছেন—পণ্যগুলো কীভাবে তৈরি হচ্ছে এবং পরে সেগুলো কী পরিণতি পাচ্ছে। ব্যবসার জন্য এই উদ্বেগগুলো উপেক্ষা করা এখন আর যথেষ্ট নয়। তবে আমরা বিশ্বাস করি না যে দায়িত্ব কেবল একটি গোষ্ঠীর।’

নেহাল জৈন উৎপাদকদের টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও সেগুলোর চূড়ান্ত পরিণতির পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে শুধু বর্জ্য কমানোর জন্য পণ্য ডিজাইন করাই নয়, বরং বর্জ্য তৈরি হলে আফটার-এর মতো পরিষেবা ব্যবহার করাও অন্তর্ভুক্ত। এটি ডিজাইন পর্যায় এবং শেষ ব্যবহারের পর্যায়–উভয় ক্ষেত্রেই লুপ বন্ধ করার বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আপনার ব্যবসায় টেক্সটাইল বর্জ্য কোথা থেকে আসছে, তা ভালোভাবে দেখে শুরু করুন। তারপর প্রশ্ন করুন, যখন এই জিনিসগুলোর আর প্রয়োজন হয় না তখন সেগুলোর কী হয়? কোনো পুনরুদ্ধার সমাধান আছে কি?’

হোল্ট উপসংহারে বলেন, গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপোর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘সাপ্লাই চেইনের অসংখ্য স্বনামধন্য সরবরাহকারীকে এক ছাদের নিচে একত্রিত করা আমাদের খাতের সাফল্য এবং টেকসই—এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্ব থেকে আসা সরবরাহকারীদের সঙ্গে দেখা করা, যারা তাদের সাপ্লাই চেইন বোঝেন এবং নৈতিকভাবে পণ্য সংগ্রহ করেন, তা আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অপরিহার্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত