Ajker Patrika

ক্ষত সারাতে এই প্রথম ‘কবিরাজি চিকিৎসা’ দেখা গেল প্রাণিজগতে

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

ইন্দোনেশিয়ার একটি সুমাত্রান ওরাংওটাং তার গালের একটি বড় ক্ষত সারাতে গাছপালা থেকে তৈরি একটি পেস্ট ব্যবহার করে নিজেই নিজের ওষুধ তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, এই ওষুধ ব্যবহার করে কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষতটি সে পুরোপুরি সারিয়ে তুলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ এই প্রথম দেখা গেছে। 

বৃহস্পতিবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, রাকুস নামের ওই ওরাংওটাংটি তার গালের ক্ষতের চিকিৎসা করতে আকুর কুনিং নামে একটি গাছে আরোহণ করেছিল। পরে ওই গাছের পাতা চিবিয়ে এবং এর থেকে রস বের করে প্রাণীটি তাঁর মুখের আঘাতে প্রয়োগ করেছে। রস ব্যবহারের একপর্যায়ে পাতার ওই পেস্ট দিয়ে ক্ষতটি সে ঢেকেও দিয়েছিল। 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আকুর কুনিং নামের ওই গাছটি মানুষের সমাজেও কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ দিয়ে সাধারণত আমাশয়, ডায়াবেটিস এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় করা হয়। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার গুনং লিউসার ন্যাশনাল পার্কে ওরাংওটাংয়ের ওই স্ব-চিকিৎসার ঘটনাটি বিজ্ঞানীরা প্রত্যক্ষ করেছিলেন ২০২২ সালের জুন মাসে। তাদের ধারণা, প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো পুরুষ ওরাংওটাংয়ের সঙ্গে লড়াই করেই মারাত্মক আহত হয়েছিল রাকুস। 

বিজ্ঞানীরা জানান, বিভিন্ন সময় অন্যান্য বানর প্রজাতিকেও ঔষধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন গাছ গিলে, চিবাতে কিংবা ঘষতে দেখা গেছে। তবে ক্ষত সারানোর জন্য এভাবে ওষুধ তৈরি করে সুচিন্তিত চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার এর আগে কখনোই দেখা যায়নি। 

গবেষক দলটি বিশ্বাস করে, রাকুস জেনেবুঝেই একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে উদ্ভিদটিকে তার ক্ষত চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করেছে। ওষুধটি তৈরি করতে প্রতিবারই তার বেশ সময় লেগেছে। রাকুস নিয়ম করে পাতা থেকে বের করা রস প্রতিবার তার গালে সাত মিনিটের জন্য লাগিয়েছে। পরে চিবানো পাতাগুলো তার ক্ষতস্থানে এমনভাবে ঢেকে দিয়েছে যেন এটি পুরোপুরি ঢেকে যায়। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে প্রতিবারই তার ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো—নিজের তৈরি ওই ওষুধটি রাকুসের ক্ষততে যাদুর মতো কাজ করেছে। গবেষকেরা ওই ক্ষতের মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণই দেখেননি। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে ক্ষতটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর এক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিল রাকুস। 

গবেষক দলটির প্রধান লেখক ইসাবেল লাউমার ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের একজন পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক। তিনি জানান, চিকিৎসার দিনগুলোতে রাকুসকে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে বিশ্রাম নিতে দেখেছেন। বলা যায়, দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় সে বিশ্রাম নিয়েছে এবং সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত