আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় দেশই দাবি করছে—তারা একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এর ঠিক দুই দিন আগেই কাবুল ও পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছেন। তবে পাল্টা হামলায় ২০০ জন তালেবান ও সহযোগী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান বাহিনীর হামলাকে ‘অযৌক্তিক গোলাগুলি’ বলে অভিহিত করেছেন।
তালেবান সরকার পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করেছে। তবে ইসলামাবাদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্পর্কের টানাপোড়েন
পাকিস্তান অতীতে তালেবানদের সমর্থন দিয়েছিল এবং ১৯৯৬–২০০১ সালে প্রথম তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের একটি ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর হামলা বেড়ে গেলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তান টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুল বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সংঘর্ষে কী ঘটছে
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে আফগান বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তচৌকিতে হামলা চালায়। সংঘর্ষের স্থানগুলোর মধ্যে ছিল আঙুর আদা, বাজৌর, খুররম, দির, চিত্রাল (খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ) ও বাহরাম চাহ (বেলুচিস্তান) অঞ্চল।
তালেবান মুখপাত্র মুজাহিদ জানান, আফগান বাহিনী ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। ২৫টি সেনা ফাঁড়ি দখল করেছে এবং ৩০ জন সেনাকে আহত করেছে। কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের সব সীমান্ত ও ডি ফ্যাক্টো লাইনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবৈধ কার্যক্রম বহুলাংশে প্রতিরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার আফগানিস্তানের টোলোনিউজ চ্যানেল জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কুনার প্রদেশের ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার (১,৬৪০ মাইল) সীমান্তে (যা ঔপনিবেশিক আমলের ডুরান্ড লাইন নামেও পরিচিত) বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি সীমান্ত অস্থিতিশীল করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা।
ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানিয়েছে, তারা আত্মরক্ষার স্বার্থে পাল্টা হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি তালেবান ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এর পাশাপাশি তারা আফগান সীমান্তের অন্তত ২১টি সেনাচৌকি অস্থায়ীভাবে দখল করেছে। এ সংঘর্ষে ২৯ জন পাকিস্তানি সেনা আহত হন।
খুররম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী গোলাবর্ষণ থেমে গেছে। তবে এখনো থেমে থেমে গুলিবিনিময় চলছে।
কীভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত
গত বৃহস্পতিবার কাবুলের দুটি স্থানে ও পাকটিকা প্রদেশের একটি বাজারে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরই তালেবান সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলে। ইসলামাবাদ এ ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা সরাসরি অস্বীকার না করলেও তালেবান প্রশাসনকে টিটিপি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানায়।
পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, কাবুলে এ বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল টিটিপি নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ। তাদের কাছে তথ্য ছিল, নুর ওয়ালি হামলার সময় একটি গাড়িতে ছিলেন। আল-জাজিরা যাচাই করতে পারেনি, ওই হামলার পর টিটিপি নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ বেঁচে আছেন কি না।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে সহিংসতা
ইসলামাবাদভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (সিআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কমপক্ষে ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
গত মাসে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে সিআরএসএস বলেছে, বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২৫ সালটি পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর হতে পারে। গত বছর এ ধরনের হামলায় অন্তত ২ হাজার ৫৪৭ জন নিহত হয়েছিলেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, টিটিপির সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। পেশোয়ারভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেহমুদ জান বাবর বলেন, তালেবান যদি টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে না রাখে, তাহলে পাকিস্তান সরাসরি তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালাবে—এ বার্তাই দেওয়া হয়েছে। তবে তালেবানের ভেতরে টিটিপির প্রতি সহানুভূতি থাকায় কাবুল প্রশাসন সরাসরি পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে এ ধরনের সশস্ত্র হামলা বেড়েছে। ইমরান খানের সরকার টিটিপিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে তালেবানকে যুক্ত করেছিল। যদিও ইমরান খানের মেয়াদেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যায়, তবুও হামলার তীব্রতা কম ছিল।
সম্প্রতি ইসলামাবাদ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা করায় সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, টিটিপি যোদ্ধারা যেসব আস্তানা ব্যবহার করে, তারা সেগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করছে। কিন্তু তালেবান সরকারের দাবি, পাকিস্তানের এমন হামলায় তাদের ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ হয়েছে।
এ ছাড়া পাকিস্তান হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। বহু দশকের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা কমপক্ষে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল রাতে আফগান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সেনারা জবাব দিয়েছে এবং আফগান বাহিনীর একাধিক সীমান্তচৌকি ধ্বংস করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, আফগান বাহিনীর হামলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।’
অন্যদিকে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়াতুল্লাহ খোয়ারাজমি বলেন, ‘আমাদের আক্রমণ ছিল পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং তা মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। পাকিস্তান যদি আবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, আমরা কঠোর জবাব দেব।’
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুই দেশের স্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে কাতার, সৌদি আরব ও চীনও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা দুই দেশকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।’
ভারত এখনো এ সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বর্তমানে ভারতে সফরে আছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই কূটনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাকিস্তানের উত্তেজনা বাড়ানোর একটি কারণ হতে পারে।
পরিস্থিতি কি আরও ভয়াবহ হবে?
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আসিফ দুররানি আল-জাজিরাকে বলেন, সংঘাত আরও বড় আকারে গড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম, কারণ, আফগানিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনীয় নয়।
কাবুলভিত্তিক বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, উভয় দেশই এখন উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। পাকিস্তান ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্যস্ত আর আফগান সরকারও অভ্যন্তরীণ সমর্থন ধরে রাখতে চাইছে।
তবে দুররানি সতর্ক করে বলেন, যত দিন পর্যন্ত তালেবান সরকার টিটিপিকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করবে না, তত দিন দুই দেশের সম্পর্ক উত্তপ্তই থাকবে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। উভয় দেশই দাবি করছে—তারা একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এর ঠিক দুই দিন আগেই কাবুল ও পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছেন। তবে পাল্টা হামলায় ২০০ জন তালেবান ও সহযোগী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান বাহিনীর হামলাকে ‘অযৌক্তিক গোলাগুলি’ বলে অভিহিত করেছেন।
তালেবান সরকার পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করেছে। তবে ইসলামাবাদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্পর্কের টানাপোড়েন
পাকিস্তান অতীতে তালেবানদের সমর্থন দিয়েছিল এবং ১৯৯৬–২০০১ সালে প্রথম তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের একটি ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) গোষ্ঠীর হামলা বেড়ে গেলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তান টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুল বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সংঘর্ষে কী ঘটছে
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে আফগান বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তচৌকিতে হামলা চালায়। সংঘর্ষের স্থানগুলোর মধ্যে ছিল আঙুর আদা, বাজৌর, খুররম, দির, চিত্রাল (খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ) ও বাহরাম চাহ (বেলুচিস্তান) অঞ্চল।
তালেবান মুখপাত্র মুজাহিদ জানান, আফগান বাহিনী ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। ২৫টি সেনা ফাঁড়ি দখল করেছে এবং ৩০ জন সেনাকে আহত করেছে। কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের সব সীমান্ত ও ডি ফ্যাক্টো লাইনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবৈধ কার্যক্রম বহুলাংশে প্রতিরোধ করা হয়েছে।
আজ রোববার আফগানিস্তানের টোলোনিউজ চ্যানেল জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কুনার প্রদেশের ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার (১,৬৪০ মাইল) সীমান্তে (যা ঔপনিবেশিক আমলের ডুরান্ড লাইন নামেও পরিচিত) বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি সীমান্ত অস্থিতিশীল করার নিন্দনীয় প্রচেষ্টা।
ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানিয়েছে, তারা আত্মরক্ষার স্বার্থে পাল্টা হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকটি তালেবান ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এর পাশাপাশি তারা আফগান সীমান্তের অন্তত ২১টি সেনাচৌকি অস্থায়ীভাবে দখল করেছে। এ সংঘর্ষে ২৯ জন পাকিস্তানি সেনা আহত হন।
খুররম এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী গোলাবর্ষণ থেমে গেছে। তবে এখনো থেমে থেমে গুলিবিনিময় চলছে।
কীভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত
গত বৃহস্পতিবার কাবুলের দুটি স্থানে ও পাকটিকা প্রদেশের একটি বাজারে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরই তালেবান সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলে। ইসলামাবাদ এ ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা সরাসরি অস্বীকার না করলেও তালেবান প্রশাসনকে টিটিপি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানায়।
পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, কাবুলে এ বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল টিটিপি নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ। তাদের কাছে তথ্য ছিল, নুর ওয়ালি হামলার সময় একটি গাড়িতে ছিলেন। আল-জাজিরা যাচাই করতে পারেনি, ওই হামলার পর টিটিপি নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ বেঁচে আছেন কি না।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে সহিংসতা
ইসলামাবাদভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (সিআরএসএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কমপক্ষে ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
গত মাসে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে সিআরএসএস বলেছে, বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২৫ সালটি পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর হতে পারে। গত বছর এ ধরনের হামলায় অন্তত ২ হাজার ৫৪৭ জন নিহত হয়েছিলেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, টিটিপির সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। পেশোয়ারভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেহমুদ জান বাবর বলেন, তালেবান যদি টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে না রাখে, তাহলে পাকিস্তান সরাসরি তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালাবে—এ বার্তাই দেওয়া হয়েছে। তবে তালেবানের ভেতরে টিটিপির প্রতি সহানুভূতি থাকায় কাবুল প্রশাসন সরাসরি পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে এ ধরনের সশস্ত্র হামলা বেড়েছে। ইমরান খানের সরকার টিটিপিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে তালেবানকে যুক্ত করেছিল। যদিও ইমরান খানের মেয়াদেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যায়, তবুও হামলার তীব্রতা কম ছিল।
সম্প্রতি ইসলামাবাদ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা করায় সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, টিটিপি যোদ্ধারা যেসব আস্তানা ব্যবহার করে, তারা সেগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করছে। কিন্তু তালেবান সরকারের দাবি, পাকিস্তানের এমন হামলায় তাদের ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ হয়েছে।
এ ছাড়া পাকিস্তান হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। বহু দশকের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা কমপক্ষে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল রাতে আফগান হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সেনারা জবাব দিয়েছে এবং আফগান বাহিনীর একাধিক সীমান্তচৌকি ধ্বংস করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, আফগান বাহিনীর হামলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।’
অন্যদিকে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়াতুল্লাহ খোয়ারাজমি বলেন, ‘আমাদের আক্রমণ ছিল পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং তা মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। পাকিস্তান যদি আবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, আমরা কঠোর জবাব দেব।’
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুই দেশের স্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে কাতার, সৌদি আরব ও চীনও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা দুই দেশকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।’
ভারত এখনো এ সংঘর্ষের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বর্তমানে ভারতে সফরে আছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই কূটনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাকিস্তানের উত্তেজনা বাড়ানোর একটি কারণ হতে পারে।
পরিস্থিতি কি আরও ভয়াবহ হবে?
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আসিফ দুররানি আল-জাজিরাকে বলেন, সংঘাত আরও বড় আকারে গড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম, কারণ, আফগানিস্তানের প্রচলিত যুদ্ধক্ষমতা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনীয় নয়।
কাবুলভিত্তিক বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, উভয় দেশই এখন উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী। পাকিস্তান ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্যস্ত আর আফগান সরকারও অভ্যন্তরীণ সমর্থন ধরে রাখতে চাইছে।
তবে দুররানি সতর্ক করে বলেন, যত দিন পর্যন্ত তালেবান সরকার টিটিপিকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করবে না, তত দিন দুই দেশের সম্পর্ক উত্তপ্তই থাকবে।
সর্বশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি প্রকাশ করেছে টাইম ম্যাগাজিন। কিন্তু এই ছবি পছন্দ না হওয়ায় ম্যাগাজিনটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। দাবি করেছেন—ছবিতে তাঁর চুল ‘গায়েব’ করে দেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেমাদাগাস্কারের সামরিক বাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছেন কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা। জেন-জি আন্দোলনের জেরে প্রেসিডেন্ট অ্যান্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ত্যাগ করার পর এ ঘোষণা এসেছে।
৫ ঘণ্টা আগেগাজা ও মিসরের মধ্যে অবস্থিত রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়েই মূলত গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়। কিন্তু এই ক্রসিং এখনো খুলে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। এর ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তার প্রবাহ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগেমিসরে অনুষ্ঠিত গাজা সম্মেলনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনিকে দেখে ‘বিউটিফুল’ বা ‘সুন্দরী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের মঞ্চে একমাত্র নারী নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেলোনি।
৭ ঘণ্টা আগে