Ajker Patrika

কাশ্মীরে মসজিদে মুসল্লিদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করার অভিযোগ ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে

আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৯: ৪৯
কাশ্মীরে মসজিদে মুসল্লিদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করার অভিযোগ ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে

কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা নিপীড়নের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু এবার সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের নিন্দীয় এক ঘটনা আলোড়ন তুলেছে। এক মেজরের নেতৃত্বে একদল সেনা দুটি মসজিদে অনুপ্রবেশ করে মুসল্লিদের ‘জয় শ্রীরাম’ মন্ত্র উচ্চারণে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

গত শনিবার ভোরে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় এ ঘটনা ঘটে বলে ভারতের গণমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে। জাদ্দোরা গ্রামে একটি নাগরিক অধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান আলতাফ আহমাদ ভাট এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলে দাবি করেছেন। 

দ্য টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, গতকাল রোববার ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগের মুখে থাকা মেজরকে এর মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের অবহিত করেন।

ইতিমধ্য়ে জম্মু ও কাশ্মীরের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা এবং গুলাম নবী আজাদ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন টুইট করেছেন। তাঁরা ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেছেন। 

দ্য ওয়্যারের খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার মাঝরাতের পর থেকে ঘটনার সূত্রপাত, যা চলে শনিবার ভোর পর্যন্ত। জাদুরা গ্রামের মানুষ একটি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাত দেড়টা নাগাদ কিছু সেনা তাঁদের গ্রামে আসে। তাঁরা ৫০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্য; তাঁদের সঙ্গে একজন অফিসার ছিলেন।

আলতাফ ভাট বলেন, ‘অফিসার গাড়ির বনেটের ওপর বসেছিলেন। সেনা জওয়ানরা বলে, ওই এলাকায় নতুন দল পোস্ট করা হয়েছে। তারা মক ড্রিল করছেন।’ ভাট বলেন, গভীর রাতে মক ড্রিল কেন করা হচ্ছে। সকাল হলেই তো করতে পারতেন। এত রাতে গ্রামবাসীদের জাগানো ঠিক নয়।

গ্রামবাসীরা জানান, এরপর সেনারা গ্রামে ঢুকে ১০ যুবককে ধরে নিয়ে পাঁচজনকে বেল্ট দিয়ে মারধর করেন। তাঁদের মধ্যে ভাটের ছেলেও আছে। ভোরবেলায় স্থানীয় একজন মসজিদে যান আজান দিতে। সেনা জওয়ানরাও তাঁর পিছু যান।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, তারা মসজিদে ঢুকে স্থানীদের মাইকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করে। যে পাঁচ যুবককে বেল্ট দিয়ে মারা হয়েছিল, তাঁদেরও জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হয়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় মানুষ সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, কিছুদিন আগে ওখানে সেনা ও জঙ্গিদের মধ্যে লড়াই হয়। তাতে সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই সেনার রোষানলে পড়েছেন তাঁরা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা দ্য ওয়্যারকে বলেন, তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। সব তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। এরপর তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, সেনা বা পুলিশের তরফ থেকে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এক টুইটে বলেন, ‘ভয়ংকর ঘটনা, কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমি আশা করব, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন তদন্ত করা হয়।’

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত। যখন অমিত শাহ কাশ্মীরে ছিলেন, তখন এ ঘটনা ঘটেছে। অমরনাথ যাত্রার আগে এ ঘটনা তো উসকানি দেওয়ার শামিল। আমি চাই, অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত হোক।’

অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত