Ajker Patrika

তালেবানের রোষানলে পেশা ছেড়েছেন ৮০% নারী সাংবাদিক: আরএসএফ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১৯: ২৭
তালেবানের রোষানলে পেশা ছেড়েছেন ৮০% নারী সাংবাদিক: আরএসএফ

তালেবানের রোষানলে আফগান গণমাধ্যম দিনদিন দুর্বল থেকে দুর্বলতম হয়ে পড়ছে। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সাংবাদিকেরা হুমকি-ধমকি ও হয়রানিতে বাধ্য হচ্ছেন পেশা ছাড়তে। অনেকেই জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। 

গত দুই বছরে দেশটির প্রায় ১২ হাজার সাংবাদিকের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আর ৮০ শতাংশ নারী সাংবাদিক কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

রাজধানী কাবুলে তালেবানের রাজ্যভিষেকের দ্বিতীয় বার্ষিকীর সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন আরএসএফের সদস্যরা। এসব সাংবাদিকেরা তালেবান প্রশাসনের নিপীড়ন সত্ত্বেও দেশটির অভ্যন্তরে ও বিদেশে সাংবাদিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করছেন। 

সাক্ষাৎকালে আফগানিস্তানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘আমি নারী হওয়ার কারণে বারবার ঘটনা প্রকাশ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। নারী সাংবাদিক হিসাবে আমার কাজ নিয়ে বারবার ভাবতে হয়। কারণ, নারী সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে আসতে মুখ ঢাকতে হয়। এমনকি তারা পুরুষ সাংবাদিকদের সঙ্গে টকশোতে অংশ নিতে বা তাদের প্রশ্ন করতেও ভাবতে হয় বহুবার। এজন্য অনেকেই কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নিউজরুমে বন্দির মতো থাকার চেয়ে বাড়িতে থাকাটাই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।’ 

আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নের সর্বশেষ নিকৃষ্ট উদাহরণ হলো চলতি আগস্টের শুরুতে নানগারহার প্রদেশের শরিয়াহ আইনের অধীনে সম্প্রচারিত হামিশা বাহার টেলিভিশন ও রেডিও প্রাঙ্গণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

আফগান ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এআইজেএ) অনুসারে, ২০২১ সালে নিবন্ধিত ৫৪৭টি মিডিয়া আউটলেটের অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৫০টি টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে ৭০ টিরও কম চালু আছে। ৩০৭টি রেডিও স্টেশনের মধ্যে মাত্র ১৭০টি থেকে সম্প্রচার কাজ করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থার সংখ্যা ৩১ থেকে ১৮ তে পৌঁছেছে। 

দেশটিতে উন্মুক্ত গণমাধ্যম সমর্থনকারী এনএআইয়ের পরিচালক জারিফ কিরিমি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি রোষানলে পড়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বাকি গণমাধ্যমগুলোও শিগগিরই দরজা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। আফগানিস্তানের সাংবাদিকেরা এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন।’ 

আরএসএফ আফগানিস্তানে একটি নতুন স্বাধীন সাংবাদিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে। সংস্থাটির সাউথ এশিয়া বুরো জানিয়েছে, তালেবান গণমাধ্যমের যেই ক্ষতি করেছে, সেই পরিসংখ্যান দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। এরপরও অনেক আফগান সাংবাদিক দেশে এবং বিদেশে লড়াই জারি রেখেছে। আরএসএফ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের জরুরি সহায়তা দিয়েছে এবং আফগানিস্তানে একটি নতুন স্বাধীন ও স্বাধীন সাংবাদিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।’ 

তালেবানের জুলুমেও হাল ছাড়েননি অনেক সাংবাদিকই। প্রচারণার কাজ জারি রাখতে গড়ে তুলেছেন নিজেদের সংঘ। 

আফগান ন্যাশনাল জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সদস্য মাসরুর লুৎফি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার আইনের অনুপস্থিতিতে মিডিয়ার প্রতিবন্ধকতা বেড়েছে। এমনটি চলতে থাকলে এই সংকট আরও তীব্র হবে।’ 

দ্বারি ভাষায় ‘জান টাইমসের’ প্রকাশক ও কানাডায় বসবাসরত আফগান বংশোদ্ভুত সাংবাদিক জাহারা নাদের বলেন, ‘তালেবানরা সমাজ থেকে বিশেষ করে গণমাধ্যম থেকে নারীদের মুছে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি।’ 

জান টাইমসে যুক্ত রয়েছেন মোট ১৫ জন। যাদের ৫ জন রিপোর্টার দেশের অভ্যন্তরে ও বাকিরা বাইরে থেকে কাজ করেন। নিজেদের নাম আড়াল রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে জাকি দারিয়ারি পালিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকেই চালু করেন অনলাইন মাধ্যম ‘কাবুলনাউ’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত