Ajker Patrika

সোনার খনি থাকলেও সবার জন্য ‘সোনায় সোহাগা’ নয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: মাইনিংডটকম
ছবি: মাইনিংডটকম

সোনার জন্য ২০২৫ সাল যেন এক স্বর্ণময় বছর। টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার প্রভাবে সোনার দাম রেকর্ড ভেঙেছে বারেবার। শুল্ক-পাল্টা শুল্কের লড়াই ও বিশ্বজুড়ে সংঘাতের এই সময়ে এসে সোনা সবচেয়ে ভরসার সম্পদ হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই এখন টাকা জমানোর থেকে সোনা জমানোতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

সোনা দিয়ে লেনদেন বা সঞ্চয় করছে অনেকেই কিন্তু সোনা আসছে কোথা থেকে বা এর পেছনের দুনিয়ার খবর জানে খুব কম মানুষই। সোনার এই স্বর্ণালী সময় কারও জন্য ‘সোনায় সোহাগা’ আবার কারও জন্য ‘সংঘাতে সোহাগা’।

সোনার গুরুত্ব সাধারণ মানুষের কাছে একটা মূল্যবান সম্পদের হলেও পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এই সোনার মূল্য জীবনের চেয়েও বেশি। জিহাদি বিদ্রোহ, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার শিকার হওয়া দেশ বুরকিনা ফাসো, মালি ও নাইজারের সামরিক সরকারগুলোর জন্য সোনা যেন ‘একমাত্র বাঁচার অবলম্বন’।

গ্লোবাল কনসালটেন্সি ফার্ম কন্ট্রোল রিস্কসের সিনিয়র গবেষক বেভারলি ওচিয়েং বিবিসিকে বলেন, সোনার দাম বাড়তে বাড়তে এখন রেকর্ড অবস্থানে আছে। তাই সামরিক সরকারগুলো আশা করছে, তারা এই দাম থেকে সরাসরি লাভবান হতে পারবে।’

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, সাহেল অঞ্চলের এই তিন দেশ প্রতি বছর প্রায় ২৩০ টন সোনা উৎপাদন করে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এই উৎপাদনের নির্দিষ্ট কোনো হিসাব না থাকায় প্রকৃত উৎপাদন এর চেয়েও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই তিন দেশের সম্মিলিত সোনা উৎপাদন আফ্রিকার যেকোনো দেশের চেয়েও বেশি। যা এই অঞ্চলকে বৈশ্বিক সোনাবাজারে অন্যতম বড় অবদানকারী অঞ্চলে পরিণত করেছে।

সাহেল অঞ্চলের সরকারগুলোর দাবি, সোনা উৎপাদনের মতো এই লাভজনক খাত থেকে প্রাপ্ত আয় দেশের জনগণের ‘স্বায়ত্তশাসন’ বা ‘সার্বভৌমত্ব’ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে এ এলাকাগুলোতে পশ্চিমা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জায়গা দখল করে প্রভাব বিস্তার করছে রুশ প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত মাসে মালির সামরিক নেতা জেনারেল আসিমি গুইতা একটি সোনা পরিশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই পরিশোধনাগারে অংশীদারত্ব রয়েছে রাশিয়ান কনগ্লোমারেট ইয়াদরান গ্রুপের।

বুরকিনা ফাসোও তাদের প্রথম সোনা পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে এবং একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খনন কোম্পানি গঠন করেছে। দেশটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় কার্যক্রমে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ অংশীদারত্ব দিতে বাধ্য করছে। পাশাপাশি দেশটির জনগণকে এ কাজে দক্ষ করে তোলার শর্ত দিয়েছে।

জনগণের স্বার্থে ভিনদেশিদের ওপর শর্ত আরোপ ও কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য দেশটির সামরিক শাসক ৩৭ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরেকে অভিনন্দন জানিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া প্রচারাভিযান পর্যন্ত চালানো হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। কন্ট্রোল রিস্কসের গবেষক বেভারলি ওচিয়েং বলেন, বুরকিনা ফাসো ও আশপাশের দেশগুলোকে বিদ্রোহ দমনের জন্য দ্রুত অর্থের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

মালিতে এই খাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রুশ ভাড়াটে বাহিনীকে, যার মধ্যে রয়েছে কুখ্যাত ওয়াগনার গ্রুপ এবং এর উত্তরসূরি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আফ্রিকা কর্পস।

লন্ডনভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের অ্যালেক্স ভাইনস জানান, ওয়াগনার গ্রুপ এবং এখন আফ্রিকা কর্পসকে তাদের সেবার বিনিময়ে প্রায়ই সোনা কিংবা খনির অনুমোদন দিয়েই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

ভাইনস বিবিসিকে বলেন, ‘এই সোনার আয়ের খুব সামান্যই মালির বা বুরকিনা ফাসোর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে। বরং এগুলো থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা উপকৃত হচ্ছে বলে আশঙ্কাও রয়েছে।’

বিশ্বজুড়ে সোনার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আক্ষরিক অর্থেই লাভবান হচ্ছে।

২০২৩ সালের সাহেল অঞ্চলের সোনার খনি বিষয়ক এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি) জানায়, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের সোনার বড় একটি অংশই আসে ছোট পরিসরের খনি কার্যক্রমগুলো থেকে। যেগুলোর বেশিরভাগই সরকারি অনুমোদনহীন, সোনার খনি হিসেবে ঘোষিত এলাকার বাইরে এবং সরকারের নজরদারির বাইরে চলে।

এসব ছোট খনির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জিহাদি গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সাহেল অঞ্চলের সরকারগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। মালিতে ও বুরকিনা ফাসোতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে। আর তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে এই সোনার খনিগুলো।

ইউএনওডিসির ধারণা, এসব খনি থেকে প্রাপ্ত বেশিরভাগ সোনা শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যেটি বৈশ্বিক সোনা পরিশোধন ও বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র।

বিশ্ববাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি এই অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘ ও জটিল সংঘাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সোনার এই দাম বৃদ্ধির সুফল এই অঞ্চলের খনি শ্রমিকরা কখনোই পাবে না।

মালির উত্তরের কিদাল অঞ্চলের এক সোনার খনির শ্রমিক বিবিসিকে জানান, যেদিন ভাগ্য ভালো থাকে, সেদিন প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার সিএফএ ফ্রাঁ আয় করেন। যা প্রায় ১৮ থেকে ৩৬ মার্কিন ডলার।

হতাশা প্রকাশ করে এই খনি শ্রমিক বলেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়লেও তার মজুরি বাড়েনি। তিনি আরও বলেন, ‘সোনার দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত লাভটা চলে যায় খনির মালিকদের পকেটে। বিপজ্জনক আর অনিশ্চিত জেনেও এই কাজই আমাদের অনেকের জন্য একমাত্র উপার্জনের উপায়।’

বিশ শতকের দিকে, বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশকে আফ্রিকার নানা দেশে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণ ছিল হীরা। যে কারণে এর নাম হয়েছিল ‘ব্লাড ডায়মন্ড’। সে স্মৃতিচারণ করে শঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘের সাবেক ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ (রক্ত হীরা) তদন্তকারী ড. অ্যালেক্স ভাইনস বলেন, ‘সোনা এখন আফ্রিকার নতুন প্রধান সংঘাতের উৎসে পরিণত হয়েছে।’

তবে সোনা এখনো সেই পর্যায়ের সেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ পায়নি বলে মনে করেন ভাইনস।

মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ২০০৩ সালে উন্মুক্ত বাজারে তথাকথিত ‘রক্ত হীরা’ বিক্রি অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু ‘রক্ত সোনা’ বা ‘ব্লাড গোল্ড’ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ততটা সফল হয়নি।

এর অন্যতম একটি কারণ হলো, একটি ঐক্যবদ্ধ নৈতিক মানদণ্ডের অভাব। সোনাবাজারে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) পরিশোধনকারীদের জন্য বৈশ্বিক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) দ্বারা নির্ধারিত নির্দেশিকা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রাখে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত এসব নিয়ম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বরাবরই অনেকটা ঢিলেঢালা। ২০২১ সালে আমিরাত নিজেরাই সোনা উত্তোলনের মানদণ্ড চালু করেছিল। যা বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।

আরেকটি বড় বাধা হলো সোনার উৎস নির্ধারণ করার প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। ড. অ্যালেক্স ভাইনস বলেন, “সোনার জন্য কোনো ‘ডিএনএ টেস্টিং’ নেই। অনেক পরিশ্রম করে হীরা পলিশ ও কাটার আগ পর্যন্ত তার উৎস শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু একটা সোনার ঢেলার উৎস ট্র্যাক করার কোনো কার্যকর পদ্ধতি আমি এখনো দেখিনি। ”

সোনা ব্যবহারের যোগ্য করার শুরুতেই একে গলিয়ে ফেলা হয়, যার ফলে এর উৎস শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন গবেষক ভাইনস। তাঁর মতে, সাহেল অঞ্চলের কিছু অবৈধ বা ব্লাড গোল্ড আরব আমিরাত ছাড়িয়ে যুক্তরাজ্যের বাজারেও পৌঁছে গেছে।

তবে সোনা যে উৎস থেকেই আসুক না কেন, সাহেল অঞ্চলের সরকারগুলোর কাছে সোনার গুরুত্ব ও মানদণ্ড বাস্তবায়নের দুর্বল অবস্থান সোনার হাতবদল বাড়িয়েই চলেছে। আর দুর্ভাগ্যবশত এই ‘ব্লাড গোল্ড’ বাজারের মূল্য নিজেদের জীবন দিয়ে মেটাতে হচ্ছে সাহেল অঞ্চলের কিছু জনগোষ্ঠীকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

ফখরুলের কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে পাত্তাই পাচ্ছে না ইউক্রেনে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্রে নতুন নতুন কৌশল যোগ করা হয়েছে। ফলে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন ভিতুর মতো হার মানছে। এমনকি দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও একে ধরতে পারছে না কার্যকরভাবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য মাত্র ৬ শতাংশ।

আমেরিকান কনজারভেটিভের সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ডে কিয়েভ থেকে ফিরে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এতটাই অনিশ্চিত যে ‘প্রায় নেই বললেই চলে।’ তিনি বলেছেন, রাতের অন্ধকারে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের স্রোত আসলে ন্যাটো প্রদত্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কখনো চালু হয়, কখনো হয় না। এই পর্যবেক্ষণ সামরিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যায়। সেপ্টেম্বরের পর থেকে ইউক্রেনের পশ্চিমা সরবরাহকৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা ৩৪ শতাংশ থেকে নেমেছে প্রায় ৬ শতাংশে, কিংবা তারও নিচে।

বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রুশ ৯কে৭২০ ইস্কান্দার-এম এবং এ জাতীয় অন্যান্য ব্যবস্থাকে ঠেকাতে গিয়ে রীতিমতো কাঁপছে। এখানে অনেক কারিগরি ও কৌশলগত কারণ কাজ করছে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন বিগত বছর খানেক সময় ধরে প্রায় স্থবির। কিন্তু দুই পক্ষই দ্রুত কৌশল ও প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। দুইপক্ষ একে অন্যের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা কাজে লাগাতে চায়। রাশিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন পর্যন্ত বেশি ফল দেওয়ায় তারা সুবিধা পাচ্ছে বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট বা উড্ডয়নরত অবস্থায় এর গতিপথ বদলে দিচ্ছে রাশিয়া। সরল ব্যালিস্টিক ট্রাজেক্টরি না রেখে এখন ‘কোয়াসি-ব্যালিস্টিক’ গতিপথে এগোয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে, দিক পরিবর্তন করতে পারে, খাঁড়া তীব্রভাবে নিচে নামতে পারে বা একদম শেষ পর্যায়ে এসে আচমকা ম্যানুভার করে টার্গেটের দিকে যেতে পারে।

প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এবং অন্য পশ্চিমা সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত কোনো টার্গেটের সম্ভাব্য ফ্লাইট অনুমান করে সেটি লক করে আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো লক্ষ্যবস্তু গতিপথ হঠাৎ পাল্টালে প্রতিরক্ষার সফটওয়্যার ও ইন্টারসেপ্টরগুলোর জন্য তা ধরার সময় এই সিস্টেমের থাকে না। ফলে ইস্কান্দারের মতো হাই-টেক ক্ষেপণাস্ত্র এমন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে লক্ষ্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত

কোনো কোনো প্রতিবেদন বলছে যে, রুশ প্রকৌশলীরা ইস্কান্দার-এম এ এমন রাডার-ডিকয় ডিভাইস বসিয়েছেন যা শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুয়া রাডার সিগন্যাল ফেরত দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে। এতে ভূমিতে থাকা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডার ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যার বিভ্রান্ত হয়। ইন্টারসেপ্টর ভুয়া সংকেতের দিকে রকেট/ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালে বিপক্ষের মূল ক্ষেপণাস্ত্র সহজে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

আরও এক সমস্যা হলো—ইস্কান্দারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ নিচে দ্রুতগতিতে নামতে থাকার বা ম্যানুভার করার কৌশল। এই আচরণ প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির রাডার আর সেন্সরগুলোর ফাঁকফোকরকে কাজে লাগায়। ফলে প্রথমবার শনাক্তকরণের পর থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় অর্থাৎ, টার্গেট ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে রকেট পাঠানোর সময় এত কম হয়ে পড়ে যে সফলভাবে আগত ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

প্রযুক্তিগত বিষয়ের বাইরে রয়েছে পরিমাণগত হিসাব। রাশিয়া ক্রমাগত ইস্কান্দার ও অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে চলেছে। অপরদিকে ইউক্রেন নির্ভরশীল পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন ও ইউরোপের ওপর, যাদের মজুত সীমিত। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও ইন্টারসেপ্টর সীমিত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে কিয়েভকে।

রাশিয়া এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের কৌশল বুঝে নিয়েছে। তারা একবারে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়লে ইউক্রেনের সীমিত প্রতিরক্ষা বেশির ভাগই আটকাতে পারে না। অতিরিক্ত নতুন কোয়াজি-ব্যালিস্টিক পন্থা ও ডিকয় যোগ হলে সমস্যা আরও বাড়ে। ফলত ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।

প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে তাত্ত্বিকভাবে এখনো কিছু ব্যালিস্টিক লক্ষ্যবস্তু ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু রাশিয়ার কৌশল-উন্নয়ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। ইউক্রেন ও তার মিত্রদের প্রয়োজন আরও ব্যাটারি, আরও ইন্টারসেপ্টর, ভালো রাডার কভারেজ এবং প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার আপগ্রেড।

দুর্ভাগ্যবশত, এসব সহজে মিলছে না। পশ্চিমা প্রতিরক্ষা শিল্পশক্তি এখন এত দুর্বল ও ধীর যে প্রয়োজনীয় সরবরাহ দ্রুত করা যাচ্ছে না। অনেক বিশ্লেষক বলছে—মূল্য, সরবরাহ এবং শিল্পক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ইউক্রেনকে কেড়ে নিচ্ছে সময় ও সুযোগ। এই প্রেক্ষাপটে কিয়েভ আমেরিকান টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক পেলে ইউক্রেন দূর থেকে রাশিয়ার ভেতরের টার্গেটে আঘাতের চেষ্টা করবে, যাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ সম্ভব হয়।

তবে এই কৌশলও সমস্যা পুরোপুরি মিটিয়ে দেবে কি না, সন্দেহ আছে। রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রাকৃতিক সুবিধা এবং তাদের সামরিক প্রকৌশল ইউক্রেনের এবং পশ্চিমাদের সীমিত সম্পদকে দ্রুত নির্জীব করে দিচ্ছে। রাশিয়ার এই পরিবর্তনগুলো তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। কিন্তু এগুলো প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে বড় বিনিয়োগ, সময় ও সরবরাহ দরকার, যা মিটছে না।

ফলে সামগ্রিক ব্যাখ্যাটি পরিষ্কার—রাশিয়ার ইস্কান্দার-সংক্রান্ত নতুন উদ্ভাবন ও কৌশল ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যকারিতা তীব্রভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। সংখ্যাগত অসাম্য, রাডার বিভ্রান্তি, কোয়াসি-ব্যালিস্টিক ম্যানুভার ও পশ্চিমা অস্ত্রশিল্পের সীমাবদ্ধতা—সব মিলিয়ে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এখন যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে নিঃশব্দ দর্শকের মতো।

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

ফখরুলের কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে বিদ্রোহী আরএসএফকে চীনা ড্রোন–কামান দিচ্ছে আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ০৪
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি
দারফুর অঞ্চলের এল–ফাশেরে আরএসএফ বাহিনীর কিছু সদস্য। ছবি: এএফপি

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি চীনা ড্রোনসহ নানা ধরনের অস্ত্র সুদানের বিদ্রোহী আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে সরবরাহ বাড়িয়েছে। এমনটাই দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ ছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আরব আমিরাত আরএসএফ–কে বোমা ও হাউইটজার পাঠাচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগ এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধির তথ্য পেয়েছে। এই অস্ত্রগুলো সেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাতের অর্থায়নে কেনা উন্নত মানের চীনা তৈরি ড্রোন, হালকা অস্ত্র, ভারী মেশিনগান, যানবাহন, কামান, মর্টার এবং গোলাবারুদ। আরএসএফের প্রতি আরব আমিরাতের সমর্থনের বিষয়টি আগেও বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই তথ্যের অনেকটাই লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর আগের প্রতিবেদনগুলোর সঙ্গে মিলে গেছে।

মিডল ইস্ট আই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, আরব আমিরাত এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লিবিয়া, চাদ, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হয়ে আরএসএফের কাছে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া, গত মে মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, আরব আমিরাত চীনের তৈরি জিবি–৫০এ গাইডেড বোমা এবং ১৫৫ মিলিমিটার এইচ-৪ হাউইটজার কামান দারফুরে পাঠাচ্ছে। ওই অঞ্চলে আরএসএফ সে সময় অনেকগুলো শহর অবরোধ করে রেখেছিল।

গত সপ্তাহে আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশেরে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে। আরএসএফের এই অভিযানের খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ভেঙে যাওয়ার পরপরই।

গত সপ্তাহে আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশেরে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে। আরএসএফের এই অভিযানের খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ভেঙে যাওয়ার পরপরই।

মিডল ইস্ট আইকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আরএসএফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইউএই এল-ফাশেরের অবরোধ নিয়ে কোনো অবস্থান নেয়নি। শহরটি ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। আলোচনা গত শুক্রবার ভেঙে পড়ে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চের পর আরব আমিরাতের অস্ত্র সহায়তা আরও বাড়ে। তখন ইরান, তুরস্ক ও মিসরের সমর্থনে সুদানি সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেয়।

সংবাদমাধ্যমটি জানায় মে মাসে জানায়, আরএসএফ আরব আমিরাতের কাছ থেকে চীনা ড্রোন ব্যবহার করে সরকার-নিয়ন্ত্রিত বন্দরনগরী পোর্ট সুদানে হামলা চালায়। এতে তুর্কি সেনা বিশেষজ্ঞ দলের কয়েকজন আহত হন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যানুসারে, এখন আরব আমিরাত আরএসএফকে চীনা সরকারি ঠিকাদার ‘চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশন’-এর তৈরি ‘রেইনবো সিরিজ’ ড্রোন সরবরাহ করছে। এর মধ্যে ‘সিএইচ-৯৫’ মডেলের ড্রোন ২৪ ঘণ্টা টানা উড়তে পারে এবং সুনির্দিষ্ট হামলা চালাতে সক্ষম। এটি দূরপাল্লার নজরদারি ও বিমান হামলার জন্য ব্যবহারযোগ্য।

খার্তুমে পরাজয়ের পর আরএসএফ আবার দারফুর অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে। এই অঞ্চলেই আরএসএফের উত্থান—তাদের পূর্বসূরি ছিল ঘোড়সওয়ার ‘জানজাওয়িদ’ মিলিশিয়া। এই বাহিনী ওমর আল বশিরের সরকারের পক্ষে অনারবদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত, আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের কেন্দ্র দুবাইয়ে। হেমেদতি ও তাঁর পরিবার দারফুরের স্বর্ণখনি থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আরব আমিরাত হয়ে পাচার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

ফখরুলের কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশে আটক সোনালীকে নিয়ে এবার বেকায়দায় মোদি সরকার, ভোটার তালিকায় বাবা-মায়ের নাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১৪
সোনালী খাতুন ও তাঁর স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত
সোনালী খাতুন ও তাঁর স্বামী দানিশ। ছবি: সংগৃহীত

অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারকে গত জুনে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করার ঘটনায় নতুন মোড়। সোনালীর বাবা-মা গতকাল শনিবার ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ সালের পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম খুঁজে পেয়েছেন। এই তথ্য সামনে আসার পর সোনালীর পরিবার প্রশ্ন তুলেছে—তাঁদের মেয়ে ও জামাইকে দেশে ফেরাতে আর কী প্রমাণ লাগবে?

বীরভূম জেলার পাইকর গ্রাম থেকে সোনালীর বাবা ভদু শেখ মোবাইল ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এখন আমাদের নাম তালিকায় পাওয়া গেছে। আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে এবং তার পরিবারকে ঘরে ফেরানোর জন্য আর কী লাগবে? কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের একটি আদালতও তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনো কিছুই হয়নি।’

সোনালীর মা জ্যোৎস্না বিবি মেয়ের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওখানে জেলে আমার মেয়ের কী ধরনের যত্ন হচ্ছে, আমরা জানি না। ওকে ফিরে এসে ভারতেই সন্তান প্রসব করতে হবে। আমরা ওর জন্য খুবই চিন্তিত।’

সোনালীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন, সোনালীর বাবা-মায়ের নাম বীরভূম জেলার মুরারাই বিধানসভা কেন্দ্রের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে। পাইকর গ্রামের পাইকর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে তাঁদের ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রঘুনাথ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সোনালী এবং তাঁর পরিবার এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। অন্তঃসত্ত্বা সোনালীর বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ।’ তিনি আরও দাবি করেন, এই নতুন তথ্য সোনালী খাতুন দম্পতির মামলাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাঁর মতে, সোনালীর সন্তান যদি বাংলাদেশেও জন্মগ্রহণ করে, তাহলেও সে ‘বংশগতভাবে’ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।

বর্তমানে সোনালী, তাঁর স্বামী দানিশ এবং আট বছরের ছেলে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে কারাগারে বন্দী আছেন। দিল্লি পুলিশ আটক করার পর গত ২৬ জুন তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারটি প্রায় ২০ বছর ধরে দিল্লিতে আবর্জনা কুড়ানোর কাজ করত।

গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, সোনালী এবং তাঁর পরিবারের পাশাপাশি সুইটি বিবি (৩২) ও তাঁর দুই ছেলে—যাদের একই অভিযোগে একই সময়ে আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল—সবাইকে এক মাসের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। যদিও কেন্দ্র সরকার এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।

এদিকে, সোনালীর বাবা-মা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁদের মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলাও করেছেন। সোনালীসহ ছয়জনকে ফিরিয়ে আনার জন্য হাইকোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা ২৪ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। এর আগে ৩ অক্টোবর বাংলাদেশের একটি আদালতও তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে ভারতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

এই ঘটনা সামনে আসতেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূল দাবি করেছে, সোনালীর বাবা-মা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত ভারতীয় নাগরিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তৃণমূল কংগ্রেস এটিকে নির্বাচনী তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর)-এর নামে ‘বাংলার এবং এর জনগণের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে।

তৃণমূল লিখেছে, ‘যে অন্তঃসত্ত্বা বাঙালি নারীর বাবা-মা ২০০২ সালের নির্বাচনী তালিকায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নথিভুক্ত, তাঁকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে নির্বাসিত করা প্রশাসনিক ভুল নয়; এটি জাতীয়তাবাদের নামে একটি নৈতিক পতন।’

তৃণমূল সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি কেন্দ্রের মুখে আরও একটি চপেটাঘাত।...শুধু দরিদ্র বাংলাভাষী পরিযায়ী হওয়ার কারণে তাঁদের অবৈধ বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দিল্লি থেকে আটক করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

ফখরুলের কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘গ্রে জোনে’ হাজার হাজার রুশ সেনা, কোণঠাসা ইউক্রেনের বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পোকরোভস্ক শহরটি দখলে নিতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
পোকরোভস্ক শহরটি দখলে নিতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কে রুশসেনারা বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি। এই শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আরও জানান, তাঁর সেনারা সেখানে ‘বিরূপ পরিস্থিতি’র মুখোমুখি হয়েছে। হাজার হাজার রুশ সেনা সেখানে অবস্থান নেওয়ায় তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছে।

‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হওয়া পোকরোভস্ক শহর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ও সরবরাহ কেন্দ্র। শহরটি দখল করতে পারলে রাশিয়া পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেতে পারে।

এদিকে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করছে এবং হেলিকপ্টারে নেমে আসার পর তাদের ১১ জন বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। তবে কিয়েভ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

শনিবার টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টগুলোতে জেনারেল সিরস্কি জানান, পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সরাসরি সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে তিনি আবারও ফ্রন্টলাইনে ফিরে গেছেন।

রুশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইনে হামলা করতে থাকায় সেগুলো রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার।

স্বল্পদৈর্ঘ্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরস্কি ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভসহ অন্যান্য কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র পর্যালোচনা করছেন। তবে ভিডিওটি কবে এবং কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পায়নি বিবিসি।

রাশিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দখল করার চেষ্টা করছে। আর বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, কিয়েভ যেকোনো মূল্যে ওই শহরটি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিশেষ বাহিনীর অভিযানের তত্ত্বাবধান করতে ওই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভের অবস্থান নেওয়া সম্পর্কে ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম আগেই জানিয়েছিল।

গতকাল শনিবার ইউক্রেনের ৭ম র‍্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের ‘কৌশলগত অবস্থান উন্নত করেছে’, তবে পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন ও পরিবর্তনশীল’।

এর আগে শুক্রবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, পোকরোভস্কের প্রতিরক্ষা এখন ‘অগ্রাধিকারমূলক’ বিষয়।

রাশিয়া-দখলকৃত আঞ্চলিক রাজধানী দোনেৎস্কের পশ্চিমে অবস্থিত এই কৌশলগত শহরটিতে রুশ অগ্রগতির খবর ক্রমেই বাড়ছে।

শুক্রবার রাতে সংবাদ সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা কিছু ছবিতে দেখা গেছে, একটি ইউক্রেনীয় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার পোকরোভস্কের কাছে প্রায় ১০ জন সেনাকে নামাচ্ছে। যদিও ছবিগুলোর স্থান ও সময় যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা পোকরোভস্ক শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা বিশেষ বাহিনীর অবতরণ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছে এবং হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা ১১ জন সেনাকে হত্যা করেছে।

ইউক্রেনের ওপেন-সোর্স মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট অনুমান করছে, পোকরোভস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন ‘গ্রে জোন’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।

দোনেৎস্কের এক সামরিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী ঘেরাও হয়ে পড়েনি, তবে তাদের সরবরাহ লাইনগুলোতে রুশ সেনারা গোলাবর্ষণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক পাল্টা আক্রমণে পোকরোভস্কের উত্তরে ইউক্রেনীয় বাহিনী সামান্য অগ্রগতি করেছে, তবে শহরটি এখনও মূলত বিতর্কিত ‘ধূসর এলাকা’ হিসেবেই রয়ে গেছে।

মস্কো চাইছে দোনেৎস্ক ও পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চল (যা সম্মিলিতভাবে দনবাস নামে পরিচিত) কিয়েভ শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার হাতে তুলে দিক, এমনকি সেই অংশগুলোও যেগুলো বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেই।

কিয়েভের ধারণা, পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চায় যে তাদের সামরিক অভিযান সফল হচ্ছে এবং সেই যুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলো যেন রাশিয়ার দাবিগুলো মেনে নেয়।

এদিকে ক্রেমলিনের শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে ব্যর্থতার কারণে ওয়াশিংটন ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এর ফলশ্রুতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন।

জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামিয়ে সংঘাতটিকে স্থিতাবস্থায় আনার কথা বলা হয়েছে।

তবে পুতিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এখনো সেই দাবিগুলোতেই অনড় রয়েছেন, যেগুলো কিয়েভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনের বাস্তবিক আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংসদ নির্বাচন: মনোনয়নের সংকেত পেয়ে প্রচারে বিএনপির প্রার্থীরা

নতুন যুগের ১০টি সম্ভাবনাময় পেশা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটবেন না, মুরাদ টাকলার সঙ্গে দেখা হবে

ফখরুলের কণ্ঠ নকলের মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচারের অভিযোগ বিএনপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর: সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় চার কোটির সেতুতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত