Ajker Patrika

সচেতনতাই মুক্তি দেবে

ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ১৮
সচেতনতাই মুক্তি দেবে

পনেরোতলায় অফিস হওয়ার কারণে প্রীতিকে লিফটেই ওঠানামা করতে হয়। তবে লিফটে যদি তিনি একা থাকেন, তাহলে তাঁর বুক ধড়ফড় করে ওঠে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। মাথার ভেতরে দপদপ করতে থাকে। হাঁটু কাঁপতে থাকে। গল‍া ক্রমশ শুকিয়ে আসে। কখনো ঘাম ঝরে। এক দিন-দুই দিন নয়, যখনই একা লিফটে ওঠেন, তখনই এমন হয়। অফিসে ঢোকার পর হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক হতেও সময় লাগে। এর নাম প্যানিক অ্যাটাক। জানাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া।

যখন হতে পারে
কেউ একটি ঘরের মধ্যে বসে অতীতের কিছু ভাবছেন, তখনো প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। কোনো ভাবনা থেকে, গন্ধ থেকে, এমনকি রাস্তায় যেতে যেতে কিছু দেখলে, যা অতীতের কোনো উত্তেজক ঘটনা মনে করিয়ে দিতে পারে, সেটা থেকেও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।

অতীতের কোনো ঘটনা থেকে যদি প্রচণ্ড খারাপ লাগা বা ভয় তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে ওই রকম ঘটনা ঘটার পূর্বাভাস যদি পরবর্তী সময়েও পাওয়া যায়, তাহলেও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। নার্ভাসনেস, ঘাম, হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি প্যানিক অ্যাটাকের স্বাভাবিক লক্ষণ। আর এই অ্যাটাক বারবার হলে একধরনের ভীতি কাজ করে, যা পরে ডিসঅর্ডারে রূপান্তরিত হয়।

লক্ষণ
কোনো ঘটনা বা চিন্তা থেকে প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎই শুরু হতে পারে এবং ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে–অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, বুকে ব্যথা, আতঙ্ক, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরানো, ঝাঁকুনি, ঘাম, পেটে ব্যথা ও বমিভাব, শরীরে উত্তাপ অনুভব করা, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।

করণীয়
লক্ষণ দেখা দিলে তা প্যানিক ডিসঅর্ডারের দিকে যাচ্ছে কি না, সেটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ প্রচণ্ড বুক ধড়ফড় করছে এটা প্যানিক ডিসঅর্ডার নাকি হার্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে, তা একজন চিকিৎসকই পরীক্ষা করে বলতে পারবেন। প্যানিক অ্যাটাকের সময় যে হরমোন নিঃসৃত হয়, তার নাম কর্টিসল। এই হরমোন অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস অংশকে উদ্দীপিত করে।

এটি শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের দুটো অংশ থাকে। একটা সিমপ্যাথেটিক, আরেকটা প্যারাসিমপ্যাথেটিক। পরীক্ষা করার পর ব্যক্তি ও লক্ষণভেদে সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি, শিথিলায়ন আরও অনেক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্যানিক অ্যাটাক থেকে তাৎক্ষণিকভাবে শান্ত হতে নিশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। এটা সচেতনভাবে ব্যক্তিকেই করতে হবে। লম্বা দম নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।

জেনে রাখা ভালো
প্যানিক অ্যাটাকের ফলে আমাদের সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার কারণে যে অস্থিরতা কাজ করে, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করতে হবে।

প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম আমাদের রিল্যাক্স করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন আমরা আরাম করে ঘুমাই, তখন আমাদের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়। যখন আমরা নিশ্বাসের ব্যায়াম করি, তখন একই প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় থাকে। এটি সক্রিয় করার জন্য ব্যায়াম, ম্যাসাজ, মেডিটেশন খুব ভালো কাজ করে। তবে সবার আগে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। 

লেখক: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত