Ajker Patrika

থাইরয়েড রোগীর খাবার কেমন হবে

মো. ইকবাল হোসেন 
থাইরয়েড রোগীর খাবার কেমন হবে

আমাদের শরীরে অনেকগুলো হরমোনাল গ্রন্থি আছে। সেগুলো থেকে বিভিন্ন রকমের হরমোন নিঃসৃত হয়। এমন একটি গ্রন্থি হচ্ছে থাইরয়েড গ্রন্থি। এটি আমাদের গলার সামনের দিকে থাকে। এই থাইরয়েড গ্রন্থি দেখতে কিছুটা প্রজাপতির মতো। তাই একে প্রজাপতি গ্রন্থিও বলা হয়। এখান থেকে থাইরয়েড নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। বিভিন্ন কারণে এই থাইরয়েড গ্রন্থিতে কিছু ত্রুটি দেখা যায়। যার ফলে গ্রন্থির কার্যক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়ে। দেশের প্রায় ৫ ভাগ মানুষ এই থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায় ভুগছে।

থাইরয়েড হরমোন আমাদের বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের তাপমাত্রা, চর্ম, চুল, হৃৎস্পন্দন, পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম, প্রজননস্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের গঠন, কোষের গঠন, ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের ভূমিকা অনেক বেশি। এ কারণে হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব জরুরি।  

থাইরয়েড গ্রন্থিতে দুই ধরনের সমস্যা 
দেখা যায়—হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে হয় হাইপোথাইরয়েডিজম আর বেড়ে গেলে হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। এই থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ মূলত আয়োডিনের প্রভাবে হয়ে থাকে। গ্রেভস রোগ, বহু প্রকোষ্ঠের গলগণ্ড, বিষাক্ত এডিনোমা, থাইরয়েডের প্রদাহ, অতিরিক্ত পরিমাণে আয়োডিন গ্রহণ হাইপারথাইরয়েডিজমের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে আয়োডিনের অভাব ছাড়াও অন্যান্য কারণে এ রোগ হতে পারে।

কেমন হবে খাবার ব্যবস্থাপনা
কিছু খাবার আছে যেগুলোকে গয়ট্রোজেনিক ফুড বলা হয়। এগুলো হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম—উভয় ক্ষেত্রেই বর্জন করতে হবে। এই খাবারগুলোতে উপস্থিত গয়ট্রোজেন নামের উপাদান আয়োডিনের শোষণকে প্রভাবিত করে। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, সরিষার শাক, মুলা, শজিনা ইত্যাদি। তবে এসব খাবার খুব ভালো করে রান্না করে খেলে তা নিরাপদ। এ ছাড়া চা-কফির ক্যাফেইন থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

আবার গ্লুটিনসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডকে প্রভাবিত করে। তাই আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে বা কম খেতে হবে। সয়াবিনজাত খাবারও খুবই কম পরিমাণে খেতে বা বাদ দিতে হবে। বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্যাকেটজাত খাবার বন্ধ করতে হবে।

হাইপারথাইরয়েডিজমে কী খাবেন না
আয়োডিন বেশি হলে হাইপারথাইরয়েডিজম দেখা দেয়। এই রোগ হলে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে দুধ, ছানা, পনির, দই, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনা, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে সাধারণ লবণের বদলে পিংক সল্ট খাওয়া ভালো। 
হাইপোথাইরয়েডিজম প্রতিরোধে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে।হাইপোথাইরয়েডিজমে কী খাবেন
আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়। তাই এ ক্ষেত্রে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, স্পিরুলিনাসহ সব সামুদ্রিক খাবার বেশি করে খেতে হবে। 

থাইরয়েড গ্রন্থির যত্নে কী খাবেন
» আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার: থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনা ইত্যাদি।

» সেলেনিয়াম: থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় 
করতে সেলেনিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেলেনিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ জন্য ডিম, মুরগি, ওট, বাদাম, টুনা মাছ ইত্যাদি খেতে হবে।

» জিংক: থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় রাখতে জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি টিএসএইচ নামের হরমোন নিঃসরণ প্রভাবিত করার মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ নিশ্চিত করে। তাই জিংকের অভাবে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। চিংড়ি, গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, কাঁকড়া, ঝিনুক, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ জিংকের ভালো উৎস। জিংক ও সেলেনিয়াম একত্রে থাইরয়েড গ্রন্থিকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।

চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে খাবার খেলে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

ডা. পূজা সাহা
দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

দাঁতের সমস্যা এখন আর শুধু বয়স্কদের নয়, সব বয়সে দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়লে দাঁত দুর্বল হয়। আসলে তা নয়। তবে দাঁতের সমস্যায় বেশির ভাগ কারণই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত যত্ন নিলে আর সঠিক অভ্যাসেই দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।

দাঁতে ব্যথা হলে আগে কারণ জানা

দাঁতে ব্যথা মানেই শুধু ক্যাভিটি নয়। দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে যাওয়া, স্নায়ুতে প্রদাহ, মাড়ির সংক্রমণ কিংবা দাঁতের ক্ষয়—এসব কারণেও ব্যথা হতে পারে। তাই দাতে ব্যথা হলে প্রথমে কারণটা জানা জরুরি। অস্থায়ী স্বস্তির জন্য দিনে কয়েকবার কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে। দাঁতের সেনসিটিভিটি কমানোর টুথপেস্টও কিছুটা সহায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবশ্যই দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্ন মানেই সার্বিক সুস্থতা

দাঁতের যত্ন শুধু সুন্দর হাসির জন্য নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশও। দাঁতের ক্ষয় বা সংক্রমণ অবহেলা করলে তা মাড়ি, হাড় এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিক যত্নে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।

টক খাবারে দাঁতের ক্ষয়

অতিরিক্ত টক বা অ্যাসিডযুক্ত খাবার দাঁতের এনামেল দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, লেবু, টমেটো বা টক স্যুপ নিয়মিত খেলে দাঁতের বাইরের স্তর ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এতে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, ব্যথা বা ঝাঁজালো অনুভূতি দেখা দেয়। যাদের পারিবারিকভাবে দাঁত দুর্বল, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। দাঁতের ক্ষয় পুরোপুরি বন্ধ না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে তা মেরামত করা অনেকটা সম্ভব। ক্ষয়ের পরিমাণ অনুযায়ী ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় টক খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর দাঁত ব্রাশ করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিন। অ্যাসিডজাতীয় খাবার খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করলে এনামেল আরও নরম হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়।

স্কেলিং নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকের ধারণা, দাঁতের স্কেলিং করালে দাঁত নরম বা আলগা হয়ে যায়। বাস্তবে এ তথ্য ভুল। স্কেলিংয়ের সময় দাঁতের পাথর বা ক্যালকুলাস সরানো হয়। স্কেলিংয়ের পর কিছু সময়ের জন্য দাঁত আলগা মনে হতে পারে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। দাঁতে দাগ বা পাথর দেখা দিলে স্কেলিং করানো উচিত। তবে দাঁত সাদা করতে চাইলে আলাদা ব্লিচিং বা হোয়াইটেনিং চিকিৎসা লাগে।

দাঁত আঁকাবাঁকা হলে করণীয়

শিশুদের ক্ষেত্রে দুধদাঁত সময়ের আগে কিংবা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত সোজাভাবে ওঠে না। ফলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। এতে শুধু চেহারার সৌন্দর্য নয়, উচ্চারণেও প্রভাব পড়তে পারে। এ সমস্যা থাকলে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা (ব্রেস অথবা অ্যালাইনার) নেওয়া যায়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশুর বয়স, দাঁতের অবস্থা এবং মুখের গঠন বিবেচনা করা জরুরি।

কিছু সাধারণ পরামর্শ

  • দিনে অন্তত দুবার নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন।
  • প্রতি তিন মাসে একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন।
  • আঁশযুক্ত ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • চিনি বা টক খাবার খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করান।
  • দাঁতের ব্যথা, ক্ষয় অথবা সেনসিটিভিটি দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কারণ, দাঁত হারানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলা। নিয়মিত যত্ন নিলে দাঁত থাকবে মজবুত, আর হাসিও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

ডা. মো. নূর আলম
স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

স্পন্ডিলাইটিস হলো মেরুদণ্ডের বাত অথবা আর্থ্রাইটিস। এতে কশেরুকা (মেরুদণ্ড গঠন করে এমন হাড়) ও মেরুদণ্ড ও শ্রোণি চক্রের মাঝের সন্ধিতে প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের রগ, লিগামেন্ট বা সন্ধি বন্ধনীতে ব্যথা শুরু হয়।

কশেরুকা কী

মানবদেহের মেরুদণ্ড অনেক কশেরুকা দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কশেরুকা অস্থি ও তরুণাস্থির সমন্বয়ে তৈরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স কিংবা ক্ষয়ের কারণে কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে। এতে দুই কশেরুকা একে অপরের সঙ্গে ঘষা খায় এবং হাড়ে ধারালো দানা তৈরি হয়, যা এক্স-রেতে দেখা যায়। এ দানাগুলো স্নায়ুতে চাপ দিলে হাত বা পায়ে তীব্র ব্যথা ও অসাড়তা দেখা দিতে পারে।

ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায়, সেটাকে বলে ‘স্লিপড ডিস্ক’। সাধারণত দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া কিংবা ঘাড়ে আঘাতের কারণে এটি হয়। ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে মেরুদণ্ডের নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

কেন বাড়ছে এই রোগ

আগের তুলনায় এখন স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে; বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন; যেমন আইটি কিংবা বিপিও খাতের কর্মীরা—তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। এখন প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭ জন কোনো না কোনোভাবে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথায় ভুগছেন।

স্পন্ডিলাইটিসের প্রধান ধরন

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলাইটিস: ঘাড়ের অংশে এই ব্যথা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কাঁধ, কলারবোন ও ঘাড়সংলগ্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হয়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে।

লাম্বার স্পন্ডিলাইটিস: এতে কোমরের নিচের অংশে ব্যথা হয়, যা পিঠ ও পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এটি একধরনের প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস, যা মেরুদণ্ড এবং শ্রোণির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টকে প্রভাবিত করে। এতে নিতম্ব, কোমর এবং পিঠে ক্রমাগত

ব্যথা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একত্রে মিশে যেতে পারে, যাকে বলে ‘Bamboo Spine’। এতে রোগী ধীরে ধীরে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

সাধারণ লক্ষণ

  • ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • স্নায়ুর চাপে ব্লাডার কিংবা বাওয়েলের নিয়ন্ত্রণ হারানো।
  • আঙুল অবশ হয়ে যাওয়া অথবা ঝিনঝিন ভাব।
  • কোমর থেকে পা পর্যন্ত দুর্বলতা ও শক্ত ভাব।
  • বুকে ব্যথা ও মাংসপেশির সমস্যা।
  • ঘাড় থেকে পিঠের ওপরের অংশ পর্যন্ত টান ধরা ব্যথা।

সম্ভাব্য কারণ

  • ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি।
  • ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো।
  • বয়সজনিত হাড়ের দুর্বলতা।
  • নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব।
  • দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা অথবা অলস জীবনযাপন।
  • অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার।

পরামর্শ

যদি ঘাড়, পিঠ অথবা কোমরে দীর্ঘদিন ব্যথা থাকে, আঙুল অবশ হয় বা চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা নিলে স্পন্ডিলাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়।

লেখক: জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে করণীয়

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে করণীয়

পিরিয়ডের সময় কী পরিমাণ রক্তপাত হলে তাকে অতিরিক্ত ধরা হবে, তার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয়তো অনেকের জানা নেই। এমন সমস্যা এক দিনে তৈরি হয় না। আপনার শরীরের ভেতরকার কোনো সমস্যাই এর জন্য দায়ী। তাই এমন সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তার দেখানোর কথা ভাবতে হবে।

কখন বলবেন বেশি রক্ত যাচ্ছে

পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে তাকে বলা হয় ম্যানোরেজিয়া। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো

সাত দিনের বেশি সময় ধরে রক্তপাত হলে, সংখ্যায় বেশি প্যাড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এবং ব্লিডিংয়ের সঙ্গে চাকা চাকা রক্তপাত হলে।

কেন বেশি ব্লিডিং হতে পারে

  • হরমোনাল ইমব্যালেন্স, হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে
  • পলিসিস্টিক ওভারেন্সি থাকলে। এর কারণে অনেক সময় বেশি দিন ধরে রক্তপাত হয় অথবা অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে।
  • জরায়ুতে টিউমার বা পলিপ থাকলে।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা স্ট্রেস হলে।
  • হঠাৎ ওজন কমে গেলে কিংবা বেড়ে গেলে।

করণীয়

হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত মাসিকের রক্তপাতের ক্ষেত্রে, রক্তপ্রবাহ এবং পেটের খিঁচুনি আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। যদি অতিরিক্ত মাসিকের রক্তপাতের কারণে পিরিয়ডকে ভয় পান, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। এর অনেক চিকিৎসা রয়েছে, যা সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দরকার হয়। যেমন হরমোনের সমস্যা আছে কি না বা প্লিসটিক ওভারেসি সিনড্রোম আছে কি না অথবা থাইরো হরমোনের সমস্যা আছে কি না। আলট্রাসনো করেও অনেক সময় দেখা হয়, জরায়ুতে কোনো টিউমার আছে কি না। ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে, যাদের হরমনাল ইমব্যালেন্স থাকে, তাদের ক্ষেত্রে হরমোন ব্যালেন্স করার জন্য প্রজেস্টেরন-জাতীয় হরমোন দিয়ে থাকি। আবার থাইরো হরমোনের তারতম্য থাকলে থাইরো হরমোনের রিপ্লেসমেন্ট বা যে কারণে হচ্ছে, সেটার ওষুধ দিয়ে থাকি। টিউমার থাকলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই অপারেশন সব সময় যে দরকার হয় এমন নয়; বা অতিরিক্ত ব্লিডিং হলেই যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে, তা কিন্তু নয়।

লেখক: হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে যে সমস্যা হয়

নাহিদা আহমেদ 
অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে যে সমস্যা হয়

মাংসপেশি মজবুত করতে এবং শরীর বেড়ে ওঠার জন্য প্রোটিন জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরের উপকারের চেয়ে উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রতিদিন একজন সুস্থ ব্যক্তি কতটুকু প্রোটিন গ্রহণ করবেন, সেটা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির আদর্শ ওজনের ওপর। কোনো ব্যক্তির আদর্শ ওজন ৬০ কেজি হলে, তিনি প্রতিদিন ৬০ গ্রামের মতো প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবেন। কিডনির সমস্যাসহ বিশেষ কিছু রোগের ক্ষেত্রে আবার পরিমাণ কমাতে হবে। আবার মেয়েদের মাসিকের সময় এবং গর্ভকালে এই প্রোটিনের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়ে থাকে।

অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে শরীরে যেসব সমস্যা হতে পারে—

নিশ্বাসে দুর্গন্ধ

মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের ফলে নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে শরীর কিটোসিস নামক একটি বিপাকীয় অবস্থায় চলে যায়। এই অবস্থায় বিভিন্ন রাসায়নিক তৈরি হয় বলে শরীরে অপ্রীতিকর গন্ধ তৈরি হয়।

কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে প্রোটিন ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়।

এ থেকে তৈরি হয় নাইট্রোজেন বা বর্জ্য পদার্থ। যেসব রোগীর কিডনির বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে দুর্বল কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য আরও বেশি শক্তি ক্ষয় করে। এর ফলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে

অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করার জন্য শরীরে বিভিন্ন তরল ও পানির নিষ্কাশন বেড়ে যায়। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত না করেও এটি আপনাকে পানিশূন্য করে দিতে পারে।

ডায়রিয়া হতে পারে

অত্যধিক দুগ্ধজাত অথবা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে আঁশের অভাব দেখা দিতে পারে। এতে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি বিশেষভাবে সত্য হবে, যদি আপনার দুধজাতীয় খাবার খাওয়ায় সমস্যা থাকে কিংবা ভাজা মাংস, মাছ এবং হাঁস-মুরগির মতো উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে

অনেকে শর্করা কমিয়ে দিয়ে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। তাঁদের ক্ষেত্রে শরীরে আঁশের ঘাটতি হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় প্রতিদিন একটানা ১০০ গ্রামের বেশি লাল মাংস খেলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি, বৃহদন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া বেশি প্রোটিন গ্রহণ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া, কোলন ও স্তন ক্যানসারে ভূমিকা রাখে। এমনকি অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণে আর্থ্রাইটিস, গাউট, পেপটিক আলসার, পিত্তথলিতে পাথর, প্যানক্রিয়াস প্রদাহ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।

লেখক: পুষ্টিবিদ, ফরাজি হসপিটাল, বারিধারা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত