Ajker Patrika

জলবসন্ত থেকে শিশুদের সতর্ক রাখুন

অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ১৬: ৫৩
জলবসন্ত  থেকে শিশুদের সতর্ক রাখুন

বসন্ত রোগটি পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল হয়ে গেলেও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত এখনো আছে। এটি বেশ পরিচিত ও ছোঁয়াচে ভাইরাসঘটিত রোগ। এই ভাইরাসের নাম ভ্যারিসেলা জন্টার। যেকোনো বয়সের লোক এতে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগের তীব্রতায় নবজাতক ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলেও রোগটি সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কখনো একে নিজ থেকে ভালো হয়ে যেতে দেখা যায়। তবে এই ভ্যারিসেলা জস্টার জীবাণুটি রোগীর দেহে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পুনরায় সক্রিয় হয়ে হারপিস জাস্টার রোগের সৃষ্টি করে।

যেভাবে ছড়ায়

  • রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে
  • রোগীর থুতু, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে
  • রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে
  • গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে মা আক্রান্ত হলে গর্ভজাত শিশুও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে
  • প্রসবের এক সপ্তাহ আগে ও পরে মা এই রোগে আক্রান্ত হলে নবজাতকেরও রোগটি হতে পারে।

ছড়ানোর সময়
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঠান্ডার সময় এ রোগ বেশি দেখা দিলেও মহামারি আকারে বছরজুড়েই এর বিস্তার দেখা যেতে পারে।

বিস্তারকাল
র‍্যাশ অথবা দানা ওঠার দুদিন আগে থেকে শুরু করে দানাগুলো শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

লক্ষণ 
সাধারণত ২ থেকে ৮ বছরের শিশুদের বেশি হতে দেখা যায় এ রোগ। রোগটির সুপ্তকাল অতিক্রম করে প্রথম দিকে জ্বর ১০০ থেকে ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। ক্লান্ত লাগা, মাথাব্যথা, অরুচি ও বমিভাব হতে দেখা যায়। তবে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের প্রাথমিক এই লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি প্রথম দিনেই চামড়ায় র‍্যাশ অথবা লালচে দাগ দেখা যেতে পারে। দানাগুলো প্রথম দিকে লালচে ভাব, পরে উঁচু হয়ে পানিপূর্ণ হয়ে ৩ থেকে ৪ দিন থাকার পর ঘোলাটে হয়ে যায়। শেষে দানাগুলো শুকিয়ে গিয়ে আলগা আবরণ খসে পড়তে দেখা যায়। চামড়ার এই সংক্রমণ মাথা ও মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে বুক, পেট, হাত, পা, মুখগহ্বর, জিহ্বা, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ছবি: আজকের পত্রিকাপ্রথম দিকের দানাগুলো শুকাতে শুরু করলেও নতুন নতুন দানা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উঠতে দেখা যায়। এগুলোর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে সংখ্যা দেড় হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

চিকেন পক্সের টিকা দেওয়া থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় শতভাগ। তবে টিকা দেওয়া থাকলেও ওয়াইল্ড টাইপের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে রোগটির তীব্রতা কম হয়ে থাকে।

জলবসন্ত থেকে জটিলতা

  • ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
  • শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া
  • স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ বা এনকেফেলাইটিস, সেরেবেলার এটাক্সিয়া 
  • গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হাত, পা ও চামড়ার গঠন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা
  • মৃত শিশু প্রসবের আশঙ্কা।

growing-painরোগের সুপ্তকাল
১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত রোগটি মানবদেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

চিকিৎসাব্যবস্থা

  • খাবার: কুসুম গরম তরল খাবারসহ স্বাভাবিক যেকোনো খাবার পরিমাণে অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে।
  • ব্যথানাশক: প্যারাসিটামল-জাতীয় সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
  • চুলকানি হলে: অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ অথবা ক্যালামাইন লোশন শরীরে ব্যবহার করতে হবে।
  • মুখগহ্বর: সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ: অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে হবে।
  • রোগের তীব্রতায়: চামড়ায় প্রদাহ বেড়ে গেলে বা রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

প্রতিরোধ
চিকেন পক্স ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ শিশুদের কাছ থেকে আলাদা রাখতে হবে। দুর্ভাগ্যের কথা, র‍্যাশগুলো চোখে পড়ার দু-এক দিন আগে থেকে জলবসন্তের জীবাণু ছড়াতে শুরু করে। চিকেন পক্সের টিকা দিয়ে এ রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘকালীন প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। ৯ মাস বয়সের পর থেকে এই টিকা দেওয়া যায়। ১২ বছর পর্যন্ত একটি ডোজ ও ১২ বছরের বেশি হলে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিতে হয়। যেকোনো টিকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া উচিত।

পরামর্শ: শিশু বিভাগ, আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত