Ajker Patrika

স্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক শব্দদূষণ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১৮
স্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক শব্দদূষণ

রাস্তায় বের হলেই গাড়ির হর্ন, নির্মাণস্থলের শব্দ, উচ্চ শব্দে চলা অনুষ্ঠান কিংবা উড়ে যাওয়া বিমানের গর্জন—এসব শব্দ এখন আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী। আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে নীরবতা একরকম বিলাসিতা। এই শব্দই ধীরে ধীরে আমাদের শরীর ও মনের ওপর ফেলে যাচ্ছে ক্ষতিকর প্রভাব; যা আমরা টের পাই অনেক পরে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দদূষণ এখন বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চমাত্রার শব্দ শুধু শ্রবণশক্তিই নষ্ট করে না, এটি দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের হৃদ্‌যন্ত্র, ঘুম, মন এমনকি গর্ভাবস্থার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

শব্দদূষণ কী

শব্দদূষণ বলতে বোঝায় এমন সব শব্দ; যা অনাকাঙ্ক্ষিত, কষ্টদায়ক এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। সাধারণত ৭০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দ যদি দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের আশপাশে থাকে, তাহলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

হয়ে দাঁড়ায়। নির্মাণকাজ, যানবাহন, উড়োজাহাজ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উচ্চ শব্দে গান কিংবা মাইক—সবকিছুই শব্দদূষণের উৎস হতে পারে। শহরের কেন্দ্রস্থলে বসবাসকারী মানুষ প্রতিদিনই এ ধরনের শব্দের মুখোমুখি হচ্ছে।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

শব্দদূষণের প্রভাব শুধু কানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে, ফলে মানসিক চাপ, অস্থিরতা, হতাশা ও রাগ বাড়ে। নিয়মিত উচ্চ শব্দে থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে—ঘুম কম হয় বা গভীর হয় না। ফলে সকালবেলা ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, শব্দদূষণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদে শব্দদূষণের সঙ্গে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ শব্দ শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা দেহের ভেতর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও শব্দদূষণের প্রভাব গুরুতর হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে গর্ভবতী নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বিপজ্জনক

শিশুদের শ্রবণশক্তি বড়দের তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে আট ঘণ্টা উচ্চ শব্দে থাকার ফলে শিশুদের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, শব্দদূষণ শিশুদের মানসিক বিকাশ, একাগ্রতা, কথা শেখা ও শেখার সামর্থ্যে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি শিশুরা আচরণগত সমস্যা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতেও ভুগতে পারে।

ঘরে-বাইরে প্রতিরোধের উপায়

শব্দদূষণ পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না হলেও কিছু সহজ উপায়ে এর প্রভাব কমানো সম্ভব। যেমন—

  • ঘরে মোটা পর্দা এবং কার্পেট ব্যবহার।
  • পুরোনো ও বেশি শব্দ করা যন্ত্রপাতি বদলে আধুনিক, কম শব্দ করা যন্ত্র ব্যবহার করুন।
  • টিভি, মিউজিক প্লেয়ার, ভিডিও গেমস—সবকিছুর শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • নীরবে থাকার জন্য নিয়মিত কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন।
  • শিশুদের ঘরে অতিরিক্ত শব্দ কমানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিন।
  • বেশি শব্দযুক্ত জায়গায় যেতে হলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করুন।
  • অনেকে ঘুমাতে হোয়াইট নয়েজ মেশিন ব্যবহার করেন, যা পরিবেশের অন্যান্য শব্দ থেকে ঘুমে সহায়তা করে।

কখন চিকিৎসা প্রয়োজন

যদি দীর্ঘদিন ধরে শব্দদূষণের কারণে ঘুম না হয়, কানে অস্বস্তি হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় বা শিশুদের আচরণে পরিবর্তন আসে; তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে ইএনটি বিশেষজ্ঞ, স্লিপ থেরাপিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। আপনি যদি বাসার আশপাশে নিয়মিত উচ্চ শব্দের মুখোমুখি হন; যেমন নির্মাণের কাজ, মাইক কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শব্দ, তাহলে স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ জানানোরও অধিকার আপনার রয়েছে।

নীরবতা আমাদের শরীরের জন্য যতটা দরকারি, শহুরে জীবনে সেটি ততটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। শব্দদূষণকে আমরা যতটা অবহেলা করি, তার ক্ষতিগুলো ততটাই গভীর। তাই শব্দকে গুরুত্ব দিয়ে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা এবং প্রতিরোধ।

সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত