Ajker Patrika

পা সচল রেখে সুস্থ থাকুন

আলমগীর আলম
পা সচল রেখে সুস্থ থাকুন

বয়স কিন্তু বাড়ছে, ধীরে ধীরে হাঁটার গতিও কমে আসছে, মন চাইছে না হাঁটতে। এমন অবস্থা যদি হয়, তাহলে আপনি বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। কথায় আছে, ‘পা অচল হলে মৃত্যু শুরু হয়’। কথাটি বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে। নিয়মিত হাঁটাচলা কিংবা ব্যায়াম পেশিশক্তি, রক্তসঞ্চালন, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতা উন্নত করে। এগুলো দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অপরিহার্য। তাই পা সচল রাখা কিংবা নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকা মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

‘পা অচল হলে মৃত্যু শুরু হয়’—কথাটি রূপক কিংবা প্রবাদবাক্য হিসেবে বেশি প্রযোজ্য। তবে এর পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়। পা অচল হওয়া অথবা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে, যা দীর্ঘ মেয়াদে মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা সরাসরি মৃত্যুর কারণ না হলেও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেগুলো মানুষের জীবনকাল কমিয়ে দিতে পারে।

পা অচল হলে যা ঘটতে পারে

  • পা অচল হওয়া বা নিয়মিত হাঁটাচলা না করা শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতা কমায়। দীর্ঘ সময় বসে থাকা অথবা নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি নিষ্ক্রিয়তা মৃত্যুহার ২৮ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • পা অচল হলে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এটি সারকোপেনিয়া (বয়সজনিত পেশি হ্রাস) ও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে পতনজনিত আঘাত মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এ কারণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে পেশির শক্তি ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি দশকে ১৫ শতাংশ কমে যায়।
  • পা অচল থাকলে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়, যা ভেনাস থ্রমবোইম্বোলিজম বা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
  • শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি নিষ্ক্রিয়তা বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো পরোক্ষভাবে জীবনমান ও আয়ু কমাতে পারে।

এমন বিপদে কী করবেন

খুব স্বাভাবিক নিয়মে সুস্থ থাকতে পারেন।

এ জন্য বসে না থেকে প্রতিদিন হাঁটার চেষ্টা করতে পারেন। যাঁরা অনেকটা পথ হাঁটতে পারছেন না, পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে, গতি পাচ্ছেন না কিংবা হাঁটতে গেলে ঢলে পড়ছেন, তাঁরা আকুপ্রেশার ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। আর আকুপ্রেশার করার ক্ষেত্রে ১০ মিনিট সকালে ফুট রোলার দিয়ে পায়ের তলায় রোল করুন।

আকুপ্রেশার ফুট রোলার কিনে নিন। চেয়ারে বসে ফুট রোলারে ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে রোল করুন। প্রথমে পায়ের তলায় একটু সুড়সুড়ি দেবে। ধীরে ধীরে চাপ বাড়ালে ঠিক হয়ে যাবে। ১০ মিনিট রোল করলে শরীর সতেজ হয়ে উঠবে। এতে রক্তসঞ্চালন বেড়ে আপনি হাঁটার উপযোগী হয়ে উঠবেন। সপ্তাহে ৬ দিন সকালে খালি পেটে এটি করতে হবে। এতে এক সপ্তাহে আপনার শারীরিক উন্নতি হওয়া শুরু করবে।

ফুট রোলারের উপকারিতা

  • বিভিন্ন গবেষণা ফলাফল জানিয়েছে, কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁরা নিয়মিত ফুট রোলার দিয়ে আকুপ্রেশার করেন, তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৮ শতাংশ কম। পায়ের নড়াচড়া ক্যানসার রোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
  • এটি করলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
  • প্রতি সপ্তাহে ৬০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ফুট রোলার দিয়ে আকুপ্রেশার করলে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
  • নিয়মিত আকুপ্রেশার করায় বিষণ্ণতার ঝুঁকি কমে ৩০ শতাংশ এবং মানসিক সুস্থতা বাড়ে।
  • শারীরিক কার্যকলাপ এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমায়। তাই নিজেকে আর গুটিয়ে না রেখে সুস্থতার জন্য আজই শুরু করুন।

লেখক: আলমগীর আলম, খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত