Ajker Patrika

ভারতীয় নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করার দাবিটি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৩২
Thumbnail image

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজটি সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করে। ওই জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাত ৮টার দিকে সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) দূরে জাহাজটি নোঙর করা ছিল। তবে আজ শনিবার বিকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাহাজটি নিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনীর MARCOS Commandos দল।’

তথ্যটি সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে আব্দুল্লাহ আল জাবের নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর টাইমলাইনে পোস্ট দেন। তাঁর পোস্টটিতে রাত ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার রিয়েকশন পড়েছে। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৪০০–এর বেশি। 

ভারতীয় বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামেও দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করেছে। 

ভারতীয় নৌবাহিনী কি জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধার করেছে?
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামেগুলোতে বলা হয়েছে, ‘ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী’। তবে প্রতিবেদনের ভেতরে উদ্ধার সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, সংস্থাটির এক্স হ্যান্ডলে সবশেষ আজ সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে একটি টুইট করা হয়। টুইটটিতে বলা হয়, ‘জাহাজ এমভি রুয়েন ব্যবহার করে সোমালি জলদস্যুরা জাহাজ ছিনতাই করতে যাচ্ছিল। ভারতীয় নৌবাহিনী সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। জলদস্যুরা জাহাজটি নিয়ে গভীর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে জানতে পেরে ভারতীয় নৌবাহিনী সেটিকে বাধা দেয়।’

গতকাল শুক্রবার ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যুদের অধিকারে থাকা এমভি রুয়েনকে বাধা দেয় উল্লেখ করে টুইটে বলেছে, ‘এই নৌযানকে ভারতীয় নৌবাহিনী ১৫ মার্চ জাহাজটিকে বাধা দেয়। সেই জাহাজের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে গেলে দস্যুরা ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষা ও জলদস্যুতা মোকাবিলায় এবং জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জলদস্যুদের নিষ্ক্রিয় করতে ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করা হয়।’

পরে ভারতীয় নৌবাহিনী এমভি রুয়েনে থাকা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ এবং নৌযানটিতে কোনো বেসামরিক নাগরিক থাকলে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে কি না, কিংবা জাহাজটিতে কোনো বেসামরিক নাগরিক ছিলেন কি না, বা থাকলে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি ভারতীয় নৌবাহিনী।   

এক্স অ্যাকাউন্টটিতে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে নিয়ে সর্বশেষ টুইট করা হয় গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ)। টুইটটিতে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ থেকে তোলা এমভি আবদুল্লাহর মাস্টার ব্রিজের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। 

ছবিতে দেখা যায়, তিন অস্ত্রধারী মাস্টার ব্রিজে আর একজন ব্রিজের ওপরে সতর্ক অবস্থায় পাহারায় রয়েছে। 

ভারতীয় নৌবাহিনী টুইটে বলেছে, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়ার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১২ মার্চ সেটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। জাহাজটির ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জিম্মি জাহাজ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। সামুদ্রিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি যুদ্ধজাহাজের গতিপথ বদলে জিম্মি জাহাজটির দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ থেকে গত বৃহস্পতিবার সকালে এমভি আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এমভি আবদুল্লাহর ক্রুদের সবাই নিরাপদে আছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

ভারতীয় নৌবাহিনীর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারের কোনো তথ্য নেই। জাহাজটির বাংলাদেশি মালিকের পক্ষ থেকেও উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত