Ajker Patrika

লবণাক্ততা ও বাল্যবিবাহ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৪৪
লবণাক্ততা ও বাল্যবিবাহ

সাতক্ষীরা জেলার পানিতে লবণের মাত্রা বেশি হওয়ায় সেখানে বাল্যবিবাহ বেড়েছে! পাঠকের কাছে তথ্যটা অদ্ভুত ঠেকতে পারে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, লবণাক্ত পানির সঙ্গে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক কী? এর উত্তর ও ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ছাপা হয় ‘নকল ভলিউমে বাল্যবিয়ে’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি, যেখানে সাতক্ষীরার বাল্যবিবাহ পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদনে প্রথমে উল্লেখ করা হয় একটি অভিযোগ। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় কাজির সহকারীরা নকল ভলিউম বই রাখেন। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া ফির চেয়ে বেশি টাকা নিয়ে সেই বইতে তাঁরা বাল্যবিবাহ লিপিবদ্ধ করেন। বর বা কনে বিয়ের আইনসম্মত বয়সে পৌঁছালে প্রকৃত নিকাহ রেজিস্ট্রি খাতায় বিয়ের তথ্য টুকে রাখা হয়। এদিকে বিয়ের সময় দুই পরিবারের কেউই জানতে পারে না যে বিয়েটি আইনসম্মতভাবে রেজিস্ট্রি করা হয়নি। অবশ্য এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকলে বাল্যবিবাহের আয়োজনই করত না।

ইউনিসেফ গত বছর বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় বাংলাদেশে। আর এ দেশে যেসব জেলায় বাল্যবিবাহ বেশি হয়, তার মধ্যে সাতক্ষীরা অন্যতম। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির দাপ্তরিক তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ৭০ শতাংশের বেশি। এখানে বাল্যবিবাহের হার বেশি হওয়ার কারণটাও খুব অদ্ভুত। এখানকার অতিমাত্রায় লবণাক্ত পানি ব্যবহার করার কারণে মেয়েদের চেহারার রং ‘নষ্ট’ হয়ে যায়, গায়ের রং ‘কালো’ হয়ে যায়। তাই ১২-১৩ বছর বয়স হলেই পাত্র দেখা শুরু হয়ে যায় মেয়েদের জন্য। এসব কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরে পা দেওয়ার আগেই। ষষ্ঠ শ্রেণিতে কক্ষভর্তি মেয়ে শিক্ষার্থী থাকলেও দশম শ্রেণিতে উঠতে উঠতে বাকি শ্রেণিকক্ষগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। কেননা, স্কুল-মাদ্রাসার গণ্ডি পার হওয়ার আগেই তাদের বাবার বাড়ির গণ্ডি পার হতে হয়।

বাল্যবিবাহ একটি জাতীয় সমস্যা তো বটেই। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় মেয়েদের গায়ের রং! বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া মানুষদের কাছে তাই লবণাক্ত পানির কারণে কন্যাশিশুদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অদ্ভুতই লাগবে। তবে আমাদের দেশে সৌন্দর্যের যে প্রচলিত ধারণা—গায়ের রং ‘ফরসা’ মানেই ‘সুন্দর’ আর ‘কালো’ মানে ‘কুৎসিত’—তা থেকে বের হয়ে আসাটা খুব জরুরি। গায়ের রং দিয়ে কখনো মানুষের সৌন্দর্য মাপা যায় না, মাপতে হয় মনের রং দিয়ে। খুব ‘ফরসা’ রংধারী মানুষও যে অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি করতে পারে, তা তো প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলেই বোঝা যায়।

শুধু সাতক্ষীরা নয়, পুরো দেশেই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভালো জানেন। তবে তা করে দেখাতে হবে। নইলে বিয়ে হয়ে যাওয়া কিশোরীরা বলতেই থাকবে—‘স্বামী কিছু হইলেই শুধু মারত। এখনো আমার সারা গায়ে মাইরের দাগ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত