Ajker Patrika

চরসোনারামপুরে ভাঙন আতঙ্ক

মো. শফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ১০
চরসোনারামপুরে ভাঙন আতঙ্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরসোনারামপুর গ্রামে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। হঠাৎ ভাঙনে ৩০-৩৫ ফুট এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছে নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ। এতে চরবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। তাৎক্ষণিক ভাঙন থেকে মুক্তি পেতে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় উলুধ্বনি ও পূজা-অর্চনার মাধ্যমে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করছেন চরবাসী।

জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলায় মেঘনার বুকে শত বছর আগে জেগে ওঠা গ্রাম চরসোনারামপুর। এখানে বসবাস করা অধিকাংশই জেলে পরিবার। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে এই চরসোনারামপুরের শত শত একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দিন দিন কমে আসছে এই চরের সীমারেখা। চরের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের অব্যাহত নদীভাঙন বালুর বস্তা ফেলেও ঠেকানো যাচ্ছে না। ঝুঁকির মুখে পড়েছে চরের একমাত্র শ্মশান ও জাতীয় গ্রিডলাইনের টাওয়ার।

সরেজমিনে চরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের পশ্চিম পাশ দিয়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তেই চরের ৩০-৩৫ ফুট এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে ভাঙন এলাকায় প্রায় ৩০ ফুট গভীরতা সৃষ্টি হয়। এ সময় নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ যশোরদ চন্দ্র বর্মণ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশে থাকা তাঁর স্ত্রী হাত টেনে ধরে তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। এ সময় মহিলাদের উলুধ্বনি আর চিৎকারে পুরো চর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিতাই চন্দ্র ভৌমিকসহ একটি প্রতিনিধি দল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে।

প্রত্যক্ষদর্শী তুলনা রানী দাস বলেন, ‘তাৎক্ষণিক আমরা চরবাসী ভাঙন এলাকায় জড়ো হই। উলুধ্বনি দিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুল ও ফল দিয়ে পূজা অর্চনার মাধ্যমে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ভাঙন এলাকায় পূজা দিচ্ছি। আমাদের ভগবানই রক্ষা করবেন।’

চরের বাসিন্দা সুমন দাস বলেন, চরের পশ্চিম পাশের ভাঙন এলাকায় রয়েছে চরের একমাত্র শ্মশান ও বেশ কয়েকটি জেলে পরিবারের বসতবাড়ি। আর চরের দক্ষিণ পাশের ভাঙন এলাকায় রয়েছে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি জাতীয় গ্রিডলাইনের রিভার ক্রসিং টাওয়ার। দুই পাশে অব্যাহত ভাঙনে চরের একমাত্র শ্মশান ও গ্রিডলাইনের বৈদ্যুতিক এই টাওয়ারটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটছে চরবাসীর।

এ ব্যাপারে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিতাই চন্দ্র ভৌমিক বলেন, এই নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে বিভক্ত হয়ে পড়বে চরসোনারামপুর গ্রামটি। মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে পানির প্রবল স্রোতে চরসোনারামপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন এই চরবাসী। এভাবে ভাঙতে থাকলে একদিন পুরো চরই নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আশুগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ জানান, শুধু বস্তা ফেলে এই নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করে চরের চার পাশে ব্লক দিতে পারলে এই চর রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে পানিসম্পদমন্ত্রী ও সচিবের পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছি। ইতিমধ্যে ভাঙন এলাকাকে জরুরি ঘোষণা করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ২০ লাখ টাকা করে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই পাশে প্রায় ৯ হাজার বালির বস্তা ফেলে আপাতত ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

বিকৃত লাশ দুটি ৩০ ঘণ্টা ধরে গাড়িতে, একজনের মুখ ছিল থ্যাঁতলানো

৫০ হাজার বিদেশির নাগরিকত্ব বাতিল করল কুয়েত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত