Ajker Patrika

অর্জিত ছুটি নিয়ে কারাগারে

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৬
অর্জিত ছুটি নিয়ে কারাগারে

মাথার ওপর ঝুলছিল টাকা আত্মসাতের মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তৈরি হয়েছিল জেলে যাওয়ার শঙ্কা। তাই অফিসে আবেদন করেন অর্জিত ছুটির (ইএল)। সেদিনই হাজির হন আদালতে। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। ছুটি শেষে জামিন নিয়ে তিনি এখন অফিস করছেন।

এই ব্যক্তি হলেন আব্দুল মোত্তালিব। তিনি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। তিনি আইসিবির রাজশাহীর শাখা প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

ডিজিএম আব্দুল মোত্তালিবের ছুটি নিয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনাটি টেরই পায়নি বলে দাবি করেছে সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘এটি ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো অসুবিধা দেখলে পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা নেবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার কিছু নেই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগমারা উপজেলার কানোপাড়া সাজুরিয়া গ্রামের মৎস্যচাষি আব্দুল বারিক মণ্ডলের নামে ২০১১ সালে আইসিবি থেকে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল। তবে নথিপত্র জাল করে প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে নেন পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া গ্রামের গোলাম মোর্শেদ হক। এ কাজে সহায়তার অভিযোগ ওঠে রাজশাহী শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব ও প্রধান কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তিনজনের নামে মামলা করেন বারিক।

মামলাটি তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পলাতক থাকেন মোত্তালিব। মামলার নির্ধারিত দিন গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেদিন আব্দুল মোত্তালিব কারাগারে যান, সেদিনও তিনি হাজিরা খাতায় সই করেছেন। দিনটি ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। আব্দুল মোত্তালিব রোববার অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর এ আবেদন দিয়েছেন তিনি। ছুটির সময় সহকারী মহাব্যবস্থাপক আকরাম হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন বলেও আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন তিনি।

হাজিরা খাতায় দেখা গেছে, ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আব্দুল মোত্তালিবের স্বাক্ষরের ঘরে লাল কালিতে ‘ইএল’ লেখা আছে। তাঁর ছুটির আবেদনের কপিও পাওয়া গেছে। এতে পৈতৃক জমিজমা ভাগ-বাঁটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। গ্রামে না গিয়ে তিনি আদালতের মাধ্যমে গিয়েছিলেন কারাগারে।

আব্দুল মোত্তালিবের গ্রামের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে। পরিবার নিয়ে তিনি রাজশাহী নগরীর উপশহরে থাকেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ক্যাজুয়াল সুপারভাইজার হিসেবে আইসিবিতে চাকরি পান। ২০১৭ সালে তিনি ডিজিএম হন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। দুদকের তদন্তে গ্রাহকের ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি আইসিবিরও ৬০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

আব্দুল মোত্তালিবের এমন চালাকির বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কিসমাতুল আহসান বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত