Ajker Patrika

পূজার খাবার

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
পূজার খাবার

আর কদিন পরেই শারদীয়া দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে শরতের বাতাসে বইতে শুরু করেছে পূজার হাওয়া। ঢাকের বাদ্য এখনো শোনা যাচ্ছে না বটে, কিন্তু কাশফুলের দ্রুত বর্ধিত ধূসররঙা কেশর জানিয়ে দিচ্ছে, ঢাক বাজতে দেরি নেই।

দেবী দুর্গা বাঙালি হিন্দুর কাছে যতটা না দেবী, তার চেয়ে বেশি ঘরের মেয়ে, যিনি বছরান্তে বাপের বাড়ি আসেন বেড়াতে। ফলে এ পূজায় লৌকিকতা বেশি। সন্তান বাপের বাড়ি এলে আর যা-ই হোক, খাওয়াদাওয়ার কমতি হয় না। এ জন্যই হয়তো, দুর্গাপূজায় খাবারের এত আয়োজন।

ষষ্ঠী থেকে দশমী, প্রতিদিনই খাবার হওয়া চাই জবরদস্ত! দুধ, দই, মুড়ি, মুড়কি, মিষ্টি, মাছ, মাংস, লুচি, লাবড়া—সবই থাকবে পূজার খাবারের তালিকায়। তবে নিরামিষ খাবার বেশি থাকবে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত। প্রতিমা বিসর্জনের পর হবে আমিষ খাওয়া। আবার এসবের মধ্যে অনেক পরিবারে আছে অনেক রকম নিয়ম। কোনো পরিবার পূজার পুরো সময়ই নিরামিষ খাবে আবার কোনো পরিবার প্রতিমা বিসর্জনের পর আমিষ খাবে। যেমন জানা যায়, বিক্রমপুরের জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিবারে পূজার সময় প্রতিদিন খাওয়া হতো ইলিশ মাছ। এটা ছিল তাঁদের পারিবারিক প্রথা।

ষষ্ঠী থেকে নবমী এ সময় নিরামিষ কী খাবেন, তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত এ সময়টাতে খাওয়া হয় নিরামিষ খিচুড়ি, লাবড়া বা ঘন্ট-জাতীয় সবজি, বড়া, পাঁপড় ইত্যাদি ভাজা আর ডাল। এ সময় অনেক মন্দিরে বিশেষ ধরনের ভোগের আয়োজন করা হয় বলে নিরামিষের আয়োজন বেশি থাকে।

রসুন-পেঁয়াজ না দেওয়া নিরামিষ ডালের আলাদা খ্যাতি আছে স্বাদকাহনে—বিশেষ করে বুট বা ছোলার ডাল, মুগ ও অড়হর ডালের। পাঁচফোড়নের বাগার দিয়ে অল্প মসলা আর পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রান্না করা ঘন্ট বা লাবড়া ভাত হোক বা খিচুড়ি, যেকোনো খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় অনায়াসে।

ছবি: তিলোত্তমাএবার আসা যাক মিষ্টির কথায়। পূজার কয়েক দিন সকালের নাশতায় হোক রসগোল্লা বা জিলাপি কিংবা সন্দেশ, কোনো না কোনো মিষ্টি থাকবেই। মিষ্টি আর দই ছাড়া পূজার খাবার কল্পনা করা অসম্ভব! দইয়ের কথা যখন এলই বলে রাখি, পূজার এই সময়টাতে যেকোনো সময় দই খাওয়া যায়। তবে সম্ভবত দশমীর সকাল হলো দই-মিষ্টি খাওয়ার আদর্শ।

দশমী মানেই বিসর্জনের বিষণ্ন সুর। দেবীদুর্গা ফিরে যাবে কৈলাসে, নিজের সংসারে। বছরের শেষ খাবারটা ভালো হওয়া চাই। এ জন্যই মনে হয় বিভিন্ন জায়গায় দশমীর খাবার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রথা ও মিথ প্রচলিত আছে। যেমন বরিশাল বা পাবনা অঞ্চলে দশমীর দিন খাওয়া হয় ইলিশ মাছ। সম্পন্ন গৃহস্থদের বাড়িতে আবার আসে জোড়া ইলিশ। উত্তরবঙ্গে খাওয়া হয় মাংস।

মাছ হোক বা মাংস—দশমীর দুপুরে আয়োজন হবে নিরামিষ এবং স্বাদে-গন্ধে ভরপুর। সকাল থেকে খাওয়া হবে দই, চিড়া, মুড়কি ও মিষ্টি। দুপুরে মাছ কিংবা মাংস দিয়ে জমিয়ে সুগন্ধি চালের ভাত। এখন তো হাতের মুঠোয় ইউটিউব। চাইলে ভোলার চরে বসে আপনি স্প্যানিশ খাবার রান্না করতেই পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত