Ajker Patrika

কালনী নদী শুকিয়ে ফসলি জমি

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৫৩
কালনী নদী শুকিয়ে ফসলি জমি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আদমপুর ইউনিয়নের কালনী নদী এখন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা কালনীর বুকে এখন বিশাল বিশাল চর। কাটাগাঙ্গ খনন করায় নাব্যহীন হয়ে পরে কালনী নদী। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও চাষ হচ্ছে বোরোধান। বিপন্ন হচ্ছে নৌ যোগাযোগ। ব্যাহত হচ্ছে সেচ। বেকার হয়ে গেছে কয়েক হাজার জেলে। দ্রুত নদী খননের দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদীটি খননের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এটি অনেক সময় সাপেক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কাটাগাঙ্গের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শিবপুর, স্বজনপুর ও মাদনা গ্রামের সীমানা দিয়ে অষ্টগ্রামের আদমপুর ইউনিয়ন ঘিরে ইছাপুর হয়ে আবারও কাটাগাঙ্গের উত্তর প্রান্তে মিলিত হয়েছে এই নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

ভৈরব আজমিরিগঞ্জ থেকে নৌপথের মাধ্যমে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হলো কালনী নদী। এই পথে এক সময় শত শত নৌকা ও কয়েকটি লঞ্চ নিয়মিত মানুষ ও মালামাল পরিবহনে চলাচল করত। ৭-৮ বছর আগে ভৈরব ও আজমিরিগঞ্জ নৌপথের দূরত্ব কমাতে কাটাগাঙ্গ খনন করায় নাব্যহীন হয়ে পরে কালনী নদী। এখন শিবপুর থেকে মাদনা পর্যন্ত নদীতে ছোট ছোট নৌকাও চলাচল করতে সমস্যা হয়। শুষ্ক মৌসুমে মাদনা থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত বন্ধ থাকে নৌকা। কৈরাইল থেকে ইছাপুর পর্যন্ত শুকিয়ে থাকা নদীর বুকে চাষ করা হয় বোরো ধান। নদীর কোন কোন অংশের হাঁটুপানি পেরোতে ব্যবহার করতে হয় বাঁশের সাঁকো। নদীতে পানির অভাবে কমে গেছে মৎস্য সম্পদ। মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা অনেক জেলে বেকার হয়েছেন। অনেক জেলায় পেশা পরিবর্তন করেছেন। তা ছাড়া অনেক জমিতে পানির অভাবে চাষ হয় না ধান। তাই কালনীতীরের লাখো মানুষের মধ্যে পানি, যোগাযোগ, মৎস্য ও কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম উৎকণ্ঠা। দ্রুত কালনী খনন না হলে শত শত কৃষক পরিবারে নেমে আসবে বিপর্যয়। স্থায়ীভাবে বেকার হবে বহু কৃষক ও জেলে। তাই দ্রুত কালনী নদী খননে দাবি করেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খননের পরিকল্পনা করলেও, কবে খনন হবে তা জানা সম্ভব হয়নি।

আদমপুর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, কাটাগাঙ্গ থেকে গুইল্লা ঘাট পর্যন্ত নদী ভরাট হয়ে গেছে। আগামীতে সুজনপুর ঘাট পর্যন্ত ভরাট হয়ে যাবে। পানির অভাবে জমি আবাদ করা যাবে না। নদী খনন না হলে না খেয়ে মরতে হবে এই অঞ্চলের কৃষকদের।

আবদুল জব্বার হৃদয় বলেন, কালনী নাব্যতা হারানোয় কৃষকেরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শুকনো মৌসুমে নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করতে পারে না। ভৈরব, হবিগঞ্জ থেকে পণ্য আনতে খরচ বেশি হয়।

আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবদুল মন্নাফ বলেন, কালনীনদী মরে যাওয়ায় আদমপুরবাসি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচ ও যোগাযোগ সংকটে বিপন্ন হয়েছ মানুষের জীবন ও জীবিকা। কৃষি উৎপাদন ও নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে নদী খননের বিকল্প নেই।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বলেন, পুরোনো কালনী নদীতে পানি নেই। এটি খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে, এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত