Ajker Patrika

‘জনগণ পাশে থাকায় বিজয় সহজ হয়েছে’

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ০০
‘জনগণ পাশে থাকায় বিজয় সহজ হয়েছে’

‘একবার ফয়’স লেকে একটি অপারেশনে বিহারি এলাকায় আমরা ৭০ থেকে ৮০ জন গিয়েছিলাম। ৩০ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করতে হবে। অর্থাৎ বিস্ফোরক ফিট করে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বিস্ফোরকটা ফিট করে যখন আমরা বের হয়ে আসছিলাম, তখন ফজরের নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিরা আমাদের ঘেরাও করে ফেলেন। তাঁরা আমাদের ডাকাত ভেবে ঘেরাও করেন। পরে ওই এলাকার একজন আমাকে দেখে বলেন—কিরে মাহফুজ তুই! এখানে কী করিস? পরে আমি বললাম চাচা, তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে দেন, ফুটবে। এরপর তাঁরা আমাদের স্কট দিয়ে বিহারি এলাকা থেকে নিরাপদে রেললাইনের ওপারে পৌঁছে দেন। রেললাইনের ওপারে আমাদের জন্য নিরাপদ ছিল। কারণ সেখানে ৮টার মতো এলএনজি স্থাপন করা ছিল।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কথা বড় করে তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণা কেন্দ্রটি এখন হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ের বাতিঘর। ১৪টি বইয়ে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছেন তিনি। একইভাবে ডা. মাহফুজুর রহমান হয়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধে জীবন্ত জাদুঘর।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টা ট্রেনিং সেন্টার ছিল জানিয়ে ডা. মাহফুজুর বলেন, ‘শহরের যেসব স্থানে ট্রেনিং সেন্টার ছিল। সাধারণ জনগণ এগুলো জানত। মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় থাকত অনেকটা ওপেন সিক্রেট ছিল। কিন্তু কেউ কখনো এটা পাকিস্তানিদের বলেনি। উল্টো নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করত। জনগণ যদি পাশে না থাকত, আমরা একদিনও চট্টগ্রামে টিকে থাকতে পারতাম না। এই কথাটা বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সত্য। কারণ আমি সারা দেশ ঘুরে মুক্তিযুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কিছু কিছু জায়গায় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণ পাশে ছিল বলেই মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহজ বিজয় হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই জানিয়ে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘জনগণকে বাদ দিয়ে যদি কেউ বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ফেলেছি, এটা কাল্পনিক কথা। এটা অনেকেই বলেন, বিশেষ করে যাঁরা মিলিটারিতে ছিলেন। তাঁরা অনেকে এটা মনে করেন, তাঁদের প্রতিরোধ যুদ্ধের কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তিনি সত্যটা জানেন না। একাত্তর সালে মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠী ছাড়া আর বাকি সবাই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনও ঘটনা আছে, রাজাকারের স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে ছিল।’

স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার কমান্ডার খুরশেদ আলম, এখন মারা গেছে। ও একবার এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ওই বাড়ির বুড়ি বলছেন—তোরা ভালো করে খাওয়া ধাওয়া করে তাড়াতাড়ি চলে যা, আমার স্বামী বদ লোক। হারামজাদা রাজাকার, ও এসে তোদের ধরিয়ে দেবে। এই নারীর মতো দেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ছিলেন।’

অস্ত্র বহনে মানুষের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কাট্টলী এলাকার সরাইপাড়া, ওখানে প্রায় বাড়িতে অস্ত্র রাখা হতো। অস্ত্রগুলো আনার পথে লোকজন দেখত, কিন্তু তারা এটা কাউকে বলত না। উল্টো অস্ত্র বহনে সহযোগিতা করত। এদের কেউ একজন যদি পাকিস্তানিদের বলে দিত। তাহলে ঘটনা অন্য রকম হয়ে যেত পারত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত