Ajker Patrika

জুতাপেটা

সম্পাদকীয়
জুতাপেটা

শাস্তি হিসেবে জুতাপেটা একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। সে বহুকাল আগের কথা, যখন গ্রাম্য সালিসেই উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা হতো। থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াত না বিষয়টি। যেহেতু মাতব্বরদের ওপর ছিল শাস্তির ভার, তাই তাঁরা বেশির ভাগ সময়ই ন্যায্য বিচার করার চেষ্টা করতেন। তাতে সমাজে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে যদি জুতাপেটার মতো শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবেন মাতব্বরেরা, তখন তাঁরা পরিবর্তিত সময়ের কথা মনে রাখেন কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মুদিদোকানি তাঁর যৌনক্ষুধার পরিচয় দিয়েছেন এলাকার শিশুদের যৌন নির্যাতন করে। তাঁর লালসার শিকার হয়েছে অন্তত আট শিশু। এই শিশুরা কিছু কিনতে তার দোকানে যেত। একলা পেয়ে তিনি শিশুটিকে দোকানের ভেতরে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতেন। ভুক্তভোগী দুই শিশু সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের কথা পরিবারের কাছে ফাঁস করে দিলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। প্রকাশ্যে আসার পর গ্রামের মাতব্বরেরা সালিসে বসেন। এলাকাবাসী বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তাই যখন মাতব্বরেরা মুদিদোকানিকে ৪১ বার জুতাপেটা এবং ১৫ দিনের মধ্যে দোকান বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ার শাস্তি দেন, তখন এলাকাবাসী তা মেনে নিতে পারেননি। আটটি শিশুর জীবনে ট্রমা এনেছেন যে ব্যক্তি, তাঁর এ রকম শাস্তি কেন মেনে নেবেন তাঁরা! এর মানে তো দাঁড়ায় এমন—এ ধরনের লালসার প্রকাশ ঘটালে ভাগ্যে জুটবে শুধুই জুতার বাড়ি! শাস্তি যদি এমন হয়, তাহলে জৈবিক লালসার প্রকাশ ঘটিয়ে আরও কেউ লাম্পট্য করতে আগ্রহী হবে না—এই গ্যারান্টি কে দেবে?

মাতব্বরদের এই শাস্তি মেনে না নিয়ে মুদিদোকানির বাড়ি ভাঙচুর করে গ্রামবাসী এবং ভুক্তভোগী এক শিশুর পিতা মঙ্গলবার রাতে ঘিওর থানায় মামলা করার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

আমাদের দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা সব সময়ই ঘটে থাকে, কিন্তু সব সময় তা প্রকাশ্যে আসে না। সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়ে গেছে, যাদের নৈতিকতার বালাই নেই। এ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবাদে অনেকেই পর্ণো ধরনের  ভিডিও দেখে যৌন অপরাধের পথে ধাবিত হয়। সমাজে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকলে সহজেই এসব যৌন দুর্বৃত্তকে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু এই অপরাধকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার নৈতিক জায়গা এখনো প্রবলভাবে দাঁড়ায়নি। একটি শিশুর শৈশব নিরাপদ রাখার জন্য যে ধরনের কর্মসূচি থাকা দরকার, তার প্রয়োগ কি খুব একটা দেখা যায়? নিজের বলয়ে একটি শিশু নিরাপদ থাকবে না—এর চেয়ে ভয়াবহ আর কী হতে পারে?

পরিবারে যেমন, তেমনি স্কুলেও শিশুদের সতর্ক করে দেওয়ার প্রবণতা গড়ে উঠতে হবে। কোন পরিস্থিতিতে কোথায় যাওয়া যাবে, কোথায় যাওয়া যাবে না, কোন স্পর্শ স্বাভাবিক, কোনটা নয় ইত্যাদির ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হতে হবে শিশুর সঙ্গে। প্রাপ্তবয়স্ক মানেই নৈতিকতাপূর্ণ জীবনযাপন করা মানুষ—এটা সত্য নয়।

যৌনসন্ত্রাসী এই ব্যক্তির কড়া শাস্তি চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত