Ajker Patrika

কালের সাক্ষী মুসা খান মসজিদ

কালের সাক্ষী মুসা খান মসজিদ

অবস্থান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসা খান মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগ, উত্তরে বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কার্যালয় ও অগ্রণী ব্যাংকের শাখা, দক্ষিণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এবং ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কার্যালয় অবস্থিত। মসজিদের পশ্চিম পাশে রয়েছে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবর এবং পূর্ব পাশে মুসা খানের সমাধি। পাকা সমাধিটি নাম-পরিচয়হীন অনাদরে পড়ে আছে।

ইতিহাস: বাবা ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর মুসা খান সোনারগাঁর সিংহাসনে বসেন। রাজধানী সোনারগাঁকে কেন্দ্র করে এক যুগের বেশি সময় ধরে মুঘল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিরোধ করেছিলেন। ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খানের হাতে পরাজিত হয়ে তিনি মুঘলদের আনুগত্য মেনে নেন এবং ত্রিপুরা বিজয় ও কামরূপে বিদ্রোহ-দমনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৬২৩ সালে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিকদের দেওয়া তথ্যমতে, রমনার বিশাল এলাকাজুড়ে একসময় মুসা খানের বাগানবাড়ি ছিল; যা ‘বাগে মুসা’ নামে সমধিক পরিচিত ছিল। সেই বাগানবাড়িতেই তাঁকে দাফন করা হয় এবং তাঁর সমাধির পাশে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। 

নির্মাতা: জনশ্রুতি আছে, এই মসজিদ মুসা খানই নির্মাণ করেন। তবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রধান প্রবেশ পথের ওপরে যে শিলালিপি ছিল, তা কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, মসজিদের স্থাপত্যরীতি এই ঐতিহ্যগত ধারণাকে সঠিক বলে গ্রহণ করে না। খোপ নকশাকৃত সম্মুখ ভাগ, গম্বুজের নিচের উন্মুক্ত প্রবেশপথ, স্কন্দাকৃতির গম্বুজ এবং অতিরিক্ত মিনার ইত্যাদির কারণে মসজিদটিকে ১৬৭৯ সালের দিকে নির্মিত মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদ এ এইচ দানী মনে করেন, এটি শায়েস্তা খানের আমলে নির্মিত অথবা পরবর্তী সময়ে মুসা খানের নাতি মুনওয়ার খান কর্তৃক নির্মিত। তিনিই দাদার স্মরণে এ মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদের ভেতরের অংশস্থাপত্যশৈলী: মসজিদটি মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে অবস্থিত। সমতল থেকে ৩.০৫ মিটার উঁচু খিলান ছাদবিশিষ্ট ভিতের ওপর স্থাপিত মসজিদটি বাইরের দিকে উত্তর-দক্ষিণে এর পরিমাপ ১৭.৬৪ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৪.০২ মিটার। এ উঁচু ভিতের তলদেশে কয়েক সারি কক্ষ রয়েছে; বর্তমানে যা অরক্ষিত ও পরিত্যক্ত। এসব কক্ষে দেয়ালের মাঝখানে একটি করে বুকশেলফ আছে। কক্ষগুলোর গঠনশৈলী প্রমাণ করে, এখানে একটি মাদ্রাসা ছিল। মুঘল আমলের অন্যান্য মসজিদের মতো একসময় এখানেও ধর্মীয় শিক্ষার কার্যক্রম চালু ছিল। ইতিহাস গবেষক মিন্টু আলী বিশ্বাস তা-ই মনে করেন।

এই ভিতের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সিঁড়ি বেয়েই ওপরের মূল অংশে উঠতে হয়। পশ্চিমাংশে মসজিদকাঠামো, পূর্বাংশে খালি বারান্দা এবং 
বারান্দার দক্ষিণাংশে অজুখানা। পূর্ব দিকের তিনটি দরজার মধ্যে মাঝের দরজাটি নান্দনিক কারুকার্য শোভিত হয়ে প্রধান দরজার প্রতিনিধিত্ব করছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালেও রয়েছে একটি করে দরজা; যা বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়। মসজিদের ওপরের অংশে তিনটি গম্বুজ অষ্ট কোণাকার ড্রামের ওপর স্থাপিত; মধ্যবর্তী গম্বুজটি তুলনামূলক বড়। গম্বুজগুলোর ভেতরের অংশ সম্পূর্ণ খালি হওয়ায় মসজিদের ছাদ অনেক উঁচু ও সুদৃশ্য মনে হয়। মসজিদের ভেতরে সামনের দেয়ালে তিনটি খিলানবিশিষ্ট অর্ধ অষ্টভুজাকৃতির মিহরাব। মধ্যখানের মিহরাবটি তুলনামূলক বড় এবং সেটিতেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে ইমামতি করেন।

মসজিদের উত্তর পাশে ভিতের সঙ্গে লাগোয়া একটি কক্ষে নারীদের জন্য নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি মসজিদটির আংশিক সংস্কার করা হয়। তবে তা এই পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে পুরো মসজিদের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন; নাহয় ৩০০ বছরের পুরোনো এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত