Ajker Patrika

মাঝনদীতে আটকে আছে জাহাজগুলো

শহিদুল ইসলাম, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৩৫
মাঝনদীতে আটকে আছে জাহাজগুলো

যমুনায় নাব্যতা-সংকট ও ডুবোচরের কারণে সার, কয়লা, জ্বালানি তেলসহ পণ্যবাহী অর্ধশতাধিক কার্গো জাহাজ মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অন্বয়পুর এলাকায় আটকা পড়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে আটকে থাকা জাহাজগুলো থেকে ট্রলারে করে পণ্য নেওয়া হচ্ছে পাবনার নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে। এতে পরিবহন খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি উত্তরাঞ্চলে সার ও জ্বালানি তেল সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানি প্রয়োজন। কিন্তু মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার বাঘাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে। এ অংশে বর্তমানে পানি রয়েছে ৭-৮ ফুট। সব চেয়ে বেশি নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে পাবনার পেঁচাকোলা ও মোহনগঞ্জের বিভিন্ন অংশে। সেই সঙ্গে আছে অসংখ্য ডুবোচর। কিন্তু মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অন্বয়পুর এলাকায় নাব্যতা-সংকটে জরুরি প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল, সার, কয়লাসহ পণ্যবাহী অর্ধশতাধিক কার্গো জাহাজ আটকা পড়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে আটকে থাকায় জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। তবে নৌপথ সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ স্পর্শকাতর স্থানে তিনটি ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত খনন করছে।

নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের আরিচা অঞ্চলের ড্রেজিং ইউনিটের উপসহকারী প্রকৌশলী আক্কাস আলী জানান, শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই এ রুটে নাব্যতা-সংকটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য চর ও ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। নৌপথ সচল রাখতে গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে স্পর্শকাতর স্থানে পলি অপসারণে তিনটি ড্রেজার নিয়োজিত রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এসব নৌযান থেকে ট্রলারে করে পণ্য নেওয়া হচ্ছে নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে। এতে পরিবহন খরচের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে সার ও জ্বালানি তেল সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়ায় নিয়োজিত এম আর পরিবহনের বাঘাবাড়ী অঞ্চলের সার্ভেয়ার লুৎফর রহমান জানান, পাটুরিয়ার উজান থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত নাব্যতা-সংকটে জাহাজগুলো আরিচার ভাটিতে আটকে আছে। সেখান থেকে বাড়তি শ্রমিক ও ছোট ট্রলারে পণ্য খালাস করার পর তা সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সময়মতো বন্দরে পণ্য না পোঁছায় বাজারে সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইউরিয়া সারবাহী জাহাজ এমভি ইস্ট বেঙ্গলের মাস্টার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ৫ জানুয়ারি রাতে অন্বয়পুর এলাকায় আটকা পড়েছেন। এখন ট্রলারে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে তা-ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওয়াহিদুজ্জানের মতো জান্নাতুল বাকি-২, আরিয়েল-১, ভাগ্যকুল-২, জয়-৩, সানজিদ ওমর, আবরার-২, আবাবিল-৪, নাসির মাহমুদ-২, ফয়েজ-১, বিদ্যুৎ-২, কুইন-১, শিকদার-২, ইয়া মাহমুদ-২সহ অপেক্ষমাণ বিভিন্ন জাহাজের স্টাফরা একই মন্তব্য করেন।

পণ্য খালাসে নিয়োজিত শ্রমিক সর্দার আকবর আলী খাঁ জানান, অপেক্ষমাণ জাহাজগুলো থেকে ২০-৩০ টন পণ্য খালাসে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তাঁরা কম মজুরি পাচ্ছেন।

সিরিয়ালের নামে ২০০ টাকা করে আদায়ের বিষয়ে মেসার্স পরি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহাদ আলী কোনো মন্তব্য না করে আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের আরিচা অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এস এম সানোয়ার হোসেন বলেন, গভীরতা কম থাকায় অর্ধশতাধিক জাহাজ অতিরিক্ত পণ্য বহন করায় আটকা পড়েছে। এ রুটে অতিরিক্ত পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত