Ajker Patrika

মানবহির্ভূত ওষুধ

সম্পাদকীয়
মানবহির্ভূত ওষুধ

নকল ও ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সম্প্রতি এই তথ্যটিও নিশ্চয়ই পাঠকের নজর এড়ায়নি—মানবহির্ভূত ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বাজারে! যেসব কোম্পানি নিয়ম মেনে পণ্য উৎপাদন করে না, সেগুলোকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিষিদ্ধ করেছে—এ রকম মানহীন ওষুধ নিয়ে রোববার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজকের পত্রিকায়।

ওষুধ অতিপ্রয়োজনীয় একটি পণ্য। কারণ, এটি জীবন রক্ষাকারী। অত্যন্ত স্পর্শকাতর পণ্য হওয়ায় ওষুধের মান ঠিক না থাকলে রোগীর সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মূলত সঠিক মানের ওষুধের ওপর নির্ভর করে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা। কিন্তু দেশে মানবহির্ভূত ওষুধ বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে প্রায় বাধাহীনভাবে। অথচ যাদের এটি নজরদারি করার কথা, তারা সেটা করছে না।

ওষুধ আসল না নকল, তা যাচাই করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকার কথা নয়। আর ওষুধ যদি জীবন রক্ষার পরিবর্তে জীবন হরণের কারণ হয়, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

কোন কোম্পানির কোন ওষুধটি কীভাবে, কী দিয়ে তৈরি করা হয় আর তা সঠিক পরিমাণে দিয়ে তৈরি করা হয় কি না, সেসব দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তারা বেশ কয়েকটি কোম্পানির কিছু ওষুধ মানবহির্ভূত হিসেবে চিহ্নিত করে বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

সেই তালিকাটি শুধু তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এতটুকু কাজ করেই কি তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? এমনিতেই এ দেশের মানুষ এখনো তথ্য জানতে সেভাবে সচেতন নয়। তাই কোন ওষুধ মানহীন হিসেবে নিষিদ্ধ হয়েছে, সেটা কারও পক্ষেই নিজ আগ্রহে জানার কথা না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচিত ছিল মানবহির্ভূত ওষুধের তালিকাটি দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করা। প্রয়োজনবোধে পোস্টার ছেপেও এসব নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা করে মানুষকে সচেতন করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা এসবের কিছুই করেনি। ফলে চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতা এবং রোগী—কেউই জানতে পারেননি মানবহির্ভূত ওষুধের ব্যাপারে।

মানহীন ওষুধ খেয়ে ১৯৯১ সালে ৭৬টি শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে বছর ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে এত শিশু মারা গিয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ২৮ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে মামলাও হয়েছিল।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ওষুধের সুনাম আছে বলে বিদেশিরা আমাদের প্রতি আস্থা রাখছে। কিন্তু আমরাই যদি এ রকম মানহীন ওষুধ বিদেশে পাঠাই, তাহলে সে সুনাম আর থাকবে না। বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি ও রপ্তানিতে সাফল্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেটা খেয়াল রাখা জরুরি।

মানবহির্ভূত ওষুধ যেন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণন না করা হয়—বিষয়গুলো নজরদারি করতে মাঠপর্যায়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদারকি প্রয়োজন। নতুবা এ অরাজকতা ঠেকানো যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত