Ajker Patrika

‘মহাবিদ্যা’

সম্পাদকীয়
‘মহাবিদ্যা’

মাত্র ১৪ বছর বয়সে মোবাইল ফোন চুরি করে ‘ক্যারিয়ার’ শুরু। ধীরে ধীরে মামা তাকে মোটরসাইকেল চুরির বিদ্যাটাও শিখিয়ে দেন। একটি মোটরসাইকেল চুরিতে সময় লাগে মাত্র ৯-১০ সেকেন্ড! ১৯ বছর বয়সে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল চুরির ‘ক্যারিশমা’ দেখিয়েছেন। জেল খেটেছেন, বেরিয়ে আবার চুরি করেছেন এবং আবারও ধরা পড়েছেন। এরপর কী?

ভাববেন না এটি হিন্দি ‘ধুম’ সিনেমার পরবর্তী কিস্তির গল্প। আজকের পত্রিকার সোমবারের শেষ পাতায় চোখ রাখলেই দেখতে পাবেন বাইক চুরির খবরটি। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরের কসমোপলিটন এলাকার আবিদ হোসেন শ্রাবণের কথা। শ্রাবণ তাঁর মামা শাহ আমানত শিশিরের কাছ থেকে চুরিবিদ্যা শিখেছেন। অল্প বয়সেই মোবাইল ফোন ও সাইকেল চুরি করা শুরু করেন। এরপর মামা তাঁকে নামিয়ে দেন মোটরসাইকেল চুরিতে। শ্রাবণ জুড়ে যান মামার মোটরসাইকেল চুরির চক্রের সঙ্গে। তিনি মোটরসাইকেল চুরিতে এতটাই পারদর্শী হয়ে ওঠেন যে মাত্র ৯-১০ সেকেন্ডের মধ্যে মোটরসাইকেলের লক খুলে দ্রুত পালিয়ে যেতে পারেন।

দুই বছর আগে চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শ্রাবণ। সবশেষ ৬ জুন একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর নামে বর্তমানে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মোটরসাইকেল চুরির মামলা আছে।

তবে এবার ধরা পড়ার আগে জেলহাজতে বসেই চুরির পরিকল্পনা এঁটেছিলেন, যেমনটা সচরাচর সিনেমাতেই দেখি আমরা! কেমন? ৮ মাস আগে চট্টগ্রাম কারাগারে আজিজ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় শ্রাবণের। তাঁদের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। শ্রাবণের মোটরসাইকেল চুরির গল্প শুনে তাঁকে জামিনের ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় দায়ভার নিয়েছিলেন আজিজ।

তবে শর্ত ছিল—শ্রাবণ জামিনে মুক্ত হয়ে যত মোটরসাইকেল চুরি করবেন, সব কটি আজিজকে দিয়ে দিতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজিজ দুই মাস আগে আর শ্রাবণ গ্রেপ্তারের ১০-১২ দিন আগে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন এবং ১০-১২ দিনে শ্রাবণ বিভিন্ন এলাকা থেকে চারটি মোটরসাইকেল চুরি করে আজিজকে সরবরাহ করেন। সেগুলো পরে চোর চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি করা হয়। পরে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে শ্রাবণকে শনাক্ত করে তাঁকেসহ চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর শ্রাবণ কিংবা চোর চক্রের অন্য সদস্যদের জীবন কেমন হবে, তা আমরা জানি না। স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁদের শাস্তি হবে হয়তো। কিন্তু তাঁদের ‘মামারা’ যত দিন এই সমাজে খুল্লাম-খুল্লা ঘুরে বেড়াবেন আর পরবর্তী প্রজন্মকে চুরিবিদ্যা শেখাতে থাকবেন, তত দিন এই বিদ্যাটা তরুণদের কাছে ‘মহাবিদ্যা’ হিসেবেই পরিচিতি পাবে। তাঁরা ধরা না পড়লে জানতে পারবে না নিজের জ্ঞান আর মেধাকে জনকল্যাণে ব্যবহার করলেই সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, চুরিকে ‘মহাবিদ্যা’ ভেবে ক্যারিয়ার এগিয়ে নিলে নয়।

আর যেকোনো অপরাধীর শাস্তি শেষ হওয়ার আগে এটুকু নিশ্চিত করা জরুরি যে তিনি পুনরায় কোনো অপরাধ করবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত