শাহ আলম খান, ঢাকা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ চালানোর দায়িত্ব পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের সেই দায়িত্বের এক মাসও পূর্ণ হয়নি এখনো। কিন্তু শুরু থেকে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে একের পর এক রাজপথে নামছে বিভিন্ন পক্ষ। পুলিশ-প্রশাসন-আনসারের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দ্রুত মোটামুটি সামলে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এখন শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ মাথাচাড়া দেওয়ায় শিল্পমালিক ও সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে।
পোশাক খাতের শ্রমিকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছিলেন। কিন্তু গতকাল সোমবার হঠাৎ বেড়ে গেল বিক্ষোভের মাত্রা। শ্রমিকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে গাজীপুর, টঙ্গী, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে। এতে শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শিল্পমালিকেরা। এ সময় তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিল্পকারখানার নিরাপত্তা জোরদার এবং কারখানায় কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
পোশাকশিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে গতকাল রাত থেকেই সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের যৌথ অভিযান শুরুর কথা জানানো হয় বৈঠক শেষে। বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের রাতের মধ্যেই আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার থেকে সব কারখানা চালু রাখতেও মালিকদের অনুরোধ করা হয়।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএর তথ্য বলছে, দেশে গত জুলাই ও আগস্ট—এই দুই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল এবং চলমান অস্থিরতার কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শিপমেন্ট করা যায়নি। ফলে কার্যাদেশ ধরে রাখতে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ পড়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ কারখানার রপ্তানি আদেশ এ সময় বাতিল হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পরিস্থিতি ইস্যুতে শিল্পমালিক ও শ্রমিকনেতাদের মূল্যায়ন, শিল্পাঞ্চল পুলিশের পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় সূত্রের বরাতে তৈরি এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনমতে, চলমান শ্রমিক আন্দোলনের কোনো ন্যায্যতা নেই। মূলত দেশে পটপরিবর্তনের পর সুযোগসন্ধানী স্থানীয় কিছু মহল পাল্টাপাল্টি দখলে মেতে উঠেছে। উদ্দেশ্য, এসব শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলো ঘিরে ঝুট ব্যবসা, খাবার ব্যবসা ও অন্যান্য ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং বর্তমান দখল ও নিয়ন্ত্রণকারীদের বিতাড়ন। এই চক্র শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের আন্দোলনে মাঠে নামিয়েছে।
জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, বেশ কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর অনেক দাবি অযৌক্তিক। এতে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে।
জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী, কোনাবাড়ী বিসিক, কালিয়াকৈর এলাকা ও সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের কারণে অর্ধশত শিল্পকারখানায় গতকাল ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
টঙ্গীর বিসিক এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সকালেই নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত তিন শতাধিক শ্রমিক কয়েক ধাপে ১৫টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। তাঁরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাঁদের (চাকরিচ্যুত) সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় কর্মরত শ্রমিকেরা চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালান। এ সময় নিজ কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া গাজীপুরের টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস এলাকার বিভিন্ন কারখানার পোশাকশ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি জানান তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশুলিয়ার ৩৫-৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
টঙ্গীর তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালান। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।’
আর আশুলিয়ার সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিক রেজাউল করিম বলেন, ‘চাকরিতে বৈষম্য নয়, একটি গোষ্ঠী পোশাকশিল্পে অরাজকতা তৈরি করতে কিছু বিচ্ছিন্ন শ্রমিককে একত্র করে উসকে দিচ্ছে। আজ কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এভাবে অযৌক্তিক আন্দোলন চলতে থাকলে আমাদের বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
তবে চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রমজান হোসেন বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কারখানার চাকরিতে থাকা শ্রমিকদের আমাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও আমাদের সঙ্গে যোগ দেননি। আমরা সড়কে বসে অবস্থান করছি। দাবি না মেনে নিলে কোনো গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকেরা। দুপুরে কাজ বন্ধ করে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক উপজেলার দেওহাটা এলাকায় অবস্থিত মিলের সামনে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে মির্জাপুর সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর সাদিক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক ও মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ও দর্জি ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীদের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িয়ে গেছে। রোববার শ্রমিকেরা ১৩টি দাবি জানান। সবার সামনে মালিকপক্ষ ১০টি দাবি মেনে নিয়েছিল। শ্রমিকেরাও সন্তুষ্ট ছিলেন। তবে আজ (সোমবার) কাদের ইন্ধনে এই আন্দোলন, সেটি ভেবে দেখার বিষয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে দখলদারির রাজনীতি আছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে সরকারের পালাবদল ঘটলে এমনটি ঘটতে। এবারও সেটিই হচ্ছে। যদি স্থানভেদে শ্রমিকের কোনো যৌক্তিক দাবি অপূর্ণ থাকে, সেটি অবশ্যই বিজিএমইএ দেখবে। কিন্তু এই অসময়ের আন্দোলন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
আর পোশাকশিল্পের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং অন্যায়ভাবে এ ধরনের আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিল্পাঞ্চলে পুলিশ এবং যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।
আর বিকেলে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠক করেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা।
পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ‘অনেকে আমাদের গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প সেক্টরের ক্ষতি করতে চায়, আমরা তা হতে দিতে পারি না। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরাই। তাই আন্দোলনের নামে কোনো কারখানার ক্ষতি করা যাবে না।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ চালানোর দায়িত্ব পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের সেই দায়িত্বের এক মাসও পূর্ণ হয়নি এখনো। কিন্তু শুরু থেকে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে একের পর এক রাজপথে নামছে বিভিন্ন পক্ষ। পুলিশ-প্রশাসন-আনসারের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দ্রুত মোটামুটি সামলে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এখন শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ মাথাচাড়া দেওয়ায় শিল্পমালিক ও সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে।
পোশাক খাতের শ্রমিকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছিলেন। কিন্তু গতকাল সোমবার হঠাৎ বেড়ে গেল বিক্ষোভের মাত্রা। শ্রমিকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে গাজীপুর, টঙ্গী, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে। এতে শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শিল্পমালিকেরা। এ সময় তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিল্পকারখানার নিরাপত্তা জোরদার এবং কারখানায় কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
পোশাকশিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে গতকাল রাত থেকেই সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের যৌথ অভিযান শুরুর কথা জানানো হয় বৈঠক শেষে। বিশৃঙ্খলায় জড়িত বহিরাগতদের রাতের মধ্যেই আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার থেকে সব কারখানা চালু রাখতেও মালিকদের অনুরোধ করা হয়।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএর তথ্য বলছে, দেশে গত জুলাই ও আগস্ট—এই দুই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল এবং চলমান অস্থিরতার কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শিপমেন্ট করা যায়নি। ফলে কার্যাদেশ ধরে রাখতে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ পড়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ কারখানার রপ্তানি আদেশ এ সময় বাতিল হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পরিস্থিতি ইস্যুতে শিল্পমালিক ও শ্রমিকনেতাদের মূল্যায়ন, শিল্পাঞ্চল পুলিশের পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় সূত্রের বরাতে তৈরি এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনমতে, চলমান শ্রমিক আন্দোলনের কোনো ন্যায্যতা নেই। মূলত দেশে পটপরিবর্তনের পর সুযোগসন্ধানী স্থানীয় কিছু মহল পাল্টাপাল্টি দখলে মেতে উঠেছে। উদ্দেশ্য, এসব শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলো ঘিরে ঝুট ব্যবসা, খাবার ব্যবসা ও অন্যান্য ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং বর্তমান দখল ও নিয়ন্ত্রণকারীদের বিতাড়ন। এই চক্র শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের আন্দোলনে মাঠে নামিয়েছে।
জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, বেশ কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর অনেক দাবি অযৌক্তিক। এতে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে।
জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী, কোনাবাড়ী বিসিক, কালিয়াকৈর এলাকা ও সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের কারণে অর্ধশত শিল্পকারখানায় গতকাল ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
টঙ্গীর বিসিক এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সকালেই নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত তিন শতাধিক শ্রমিক কয়েক ধাপে ১৫টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। তাঁরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাঁদের (চাকরিচ্যুত) সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় কর্মরত শ্রমিকেরা চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালান। এ সময় নিজ কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া গাজীপুরের টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস এলাকার বিভিন্ন কারখানার পোশাকশ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি জানান তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশুলিয়ার ৩৫-৪০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
টঙ্গীর তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালান। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।’
আর আশুলিয়ার সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিক রেজাউল করিম বলেন, ‘চাকরিতে বৈষম্য নয়, একটি গোষ্ঠী পোশাকশিল্পে অরাজকতা তৈরি করতে কিছু বিচ্ছিন্ন শ্রমিককে একত্র করে উসকে দিচ্ছে। আজ কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এভাবে অযৌক্তিক আন্দোলন চলতে থাকলে আমাদের বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
তবে চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রমজান হোসেন বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কারখানার চাকরিতে থাকা শ্রমিকদের আমাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও আমাদের সঙ্গে যোগ দেননি। আমরা সড়কে বসে অবস্থান করছি। দাবি না মেনে নিলে কোনো গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকেরা। দুপুরে কাজ বন্ধ করে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক উপজেলার দেওহাটা এলাকায় অবস্থিত মিলের সামনে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে মির্জাপুর সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর সাদিক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক ও মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ও দর্জি ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গার্মেন্টসকর্মীদের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িয়ে গেছে। রোববার শ্রমিকেরা ১৩টি দাবি জানান। সবার সামনে মালিকপক্ষ ১০টি দাবি মেনে নিয়েছিল। শ্রমিকেরাও সন্তুষ্ট ছিলেন। তবে আজ (সোমবার) কাদের ইন্ধনে এই আন্দোলন, সেটি ভেবে দেখার বিষয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে দখলদারির রাজনীতি আছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে সরকারের পালাবদল ঘটলে এমনটি ঘটতে। এবারও সেটিই হচ্ছে। যদি স্থানভেদে শ্রমিকের কোনো যৌক্তিক দাবি অপূর্ণ থাকে, সেটি অবশ্যই বিজিএমইএ দেখবে। কিন্তু এই অসময়ের আন্দোলন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
আর পোশাকশিল্পের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং অন্যায়ভাবে এ ধরনের আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিল্পাঞ্চলে পুলিশ এবং যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।
আর বিকেলে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গেও বৈঠক করেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা।
পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ‘অনেকে আমাদের গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প সেক্টরের ক্ষতি করতে চায়, আমরা তা হতে দিতে পারি না। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরাই। তাই আন্দোলনের নামে কোনো কারখানার ক্ষতি করা যাবে না।’
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৮ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪