Ajker Patrika

দুর্নীতির ‘মডেল’

সম্পাদকীয়
দুর্নীতির ‘মডেল’

শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ বা ‘রোল মডেল’ হতে পারেন একজন সুশিক্ষক। সুশিক্ষক বলতে সৎ, আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ এবং অবশ্যই পাঠদানে দক্ষতাকে বোঝানো যায়। গুণাবলির এই তালিকা আরও দীর্ঘ হওয়া অসম্ভব নয়। আবার অনেকে এর বিপরীত গুণ ধারণ করেও কারও কারও জন্য ‘রোল মডেল’ হতে পারেন, যা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার!

পাঠক হয়তো গত শনিবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের খবরটি পড়ে থাকবেন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। জানা যায়, কেরানি থেকে প্রথমে সহকারী শিক্ষক এবং পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছেন জসিম উদ্দিন। যদি তাঁর নিজের যোগ্যতাবলে এই অর্জন হয়, তবে তিনি হতে পারেন যে কারও ‘রোল মডেল’। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতিতে ‘রোল মডেল’ হওয়ার!

১১২ বছর বয়স হলেও ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় ২০১৮ সালে সরকারি হয়। ২০২৩ সালে জসিম উদ্দিন স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর ১৮ মাসে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড় গড়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে তাঁকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও এখনো এই ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

২২ দফায় চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে জসিম উদ্দিন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪০০ টাকা তছরুপ করেন। তবে অধিকাংশ যাতায়াতের তারিখে স্কুলের হাজিরা খাতায় রয়েছে তাঁর স্বাক্ষর। ঢাকায় অবস্থান করেও চট্টগ্রামের স্কুলে উপস্থিতি—তাহলে কি জসিম উদ্দিনের নামে কোনো ‘ভূত’ এসে সেই দিনগুলোতে খাতায় সই করে দিল! অন্য শিক্ষকেরা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, তিনি বাসায় বসেই ভুয়া ভাউচার বানিয়ে টাকা তুলে নিতেন বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে।

এই ফান্ডের টাকা বাগিয়েই নাকি তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনের প্রায় তিন গুণ ডায়েরি ছাপিয়ে খরচ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯১০ টাকার। স্কুলের খাতা থাকা সত্ত্বেও ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫০ টাকার খাতা কিনেছেন। স্কুলের জন্য ফ্যান কেনার ২৫ হাজার টাকার ভাউচার দেখিয়েছেন। আর নিজ বাসভবনের টয়লেট নির্মাণে খরচ দেখিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৬০ টাকা।

যেখানে সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের বেতন ১০ টাকা, অষ্টম শ্রেণিতে ১২ টাকা এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ১৫ টাকা, সেখানে জসিম উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণ করে দেন ২০০ টাকা! এটি ঘোরতর অন্যায় নয় তো কী?

জসিম উদ্দিনের কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের কারও কারও মনে প্রভাব ফেলেছে কি না কে জানে? হয়তো অপরিণত বয়সে কেউ ভাবতে পারে—জসিম স্যারের মতো এভাবে অর্থ উপার্জন করা সহজ! দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ‘জসিম স্যারদের’ পাওয়া যায় বলে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হয়। এই ‘স্যারদের’ শাস্তিটা ‘কড়া’ না হলে তাঁদেরকেই ‘রোল মডেল’ মানবে শিক্ষার্থীরা। আর তাতে নষ্ট সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত