Ajker Patrika

এবার তাসকিনের মনে শান্তি

রানা আব্বাস, হোবার্ট থেকে
Thumbnail image

রাতে কেমন উদ্‌যাপন হলো? তাসকিন আহমেদের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘দলের সবাই ডিনার করেছি এক সঙ্গে।’ ব্যস, এতটুকুই। হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়টা অবশ্যই স্বস্তির, তাতে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কিছু নেই বাংলাদেশ দলের। তবে তাসকিন আহমেদের মনে যে একটা শান্তির হওয়া বইছে, সেটি খোলাখুলি বলেছেন।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একেবারে খারাপ যায়নি তাসকিনের। নিজে ভালো করলে কী, বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। তাসকিনের মুখে তাই তৃপ্তির হাসিটা দেখা যায়নি মরুর দেশে।

গতকাল হোবার্টে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন, দলও জিতেছে। সেটিও আবার টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে। এবার তাসকিন মন খুলে বলতে পারছেন, ‘জিততে পেরেছি, এটাই সবচেয়ে বড় শান্তির বিষয়। কারণ অনেক দিন ধরে জিততেই পারছিলাম না।

মানসিকভাবে এটার একটা চাপ ছিল। উদ্‌যাপন আর কী, মনের খুশি সবচেয়ে বড় বিষয়। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জিততে পেরেছি। এটাই বড় বিষয়।’ স্বস্তির হলেও তাসকিন মনে করেন, উদ্‌যাপন করার মতোই এক জয় পেয়েছেন তাঁরা, ‘এটা স্বস্তির চেয়ে বেশি হচ্ছে (জয়টা) উদ্‌যাপনের করা। কারণ, এর আগে আমরা সুপার টুয়েলভে কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। এটা আমাদের জন্য বড় জয়। আর টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলকে ছোট করার উপায় নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাদ পড়ে গেছে।’

ম্যাচে ২৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট পেয়েছেন। ইনিংসের প্রথম ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগ। হ্যাটট্রিক না হলেও তিনি খুশি দলে অবদান রেখে। তবে ২৭ বছর বয়সী পেসার জানালেন তিনি হ্যাটট্রিক করার সব চেষ্টাই করেছেন, ‘একই প্রক্রিয়া মেনে বোলিং করেছিলাম। আসলে হ্যাটট্রিক, ৫ উইকেট পেতে ভাগ্যেরও সহায়তা পেতে হয়। কিন্তু দিনশেষে আমরা জিতেছি, আমি কিছু অবদান রাখতে পেরেছি, এতেই খুশি।’

অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে তাসকিন নিজেকে চিনিয়েছিলেন অন্যভাবে। সাত বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি আইসিসির টুর্নামেন্টের শুরুটাও হলো তাঁর দুর্দান্ত। ফাস্ট বোলিংসহায়ক কন্ডিশন বলেই এখানে ভালো করেন, তাসকিন তা মনে করেন না। তিনি মনে করেন, তাঁদের উন্নতির আরও অনেক বাকি, ‘আমাদের জন্য কোনো কন্ডিশনই সহজ না। আমরা সব জায়গায় মানিয়ে নিচ্ছি, উন্নতি করছি। আমরা যদি বিশ্বকাপে সব ম্যাচও জিতি, তখনো বলব, আমরা উন্নতির খোঁজে আছি। সামনের ম্যাচগুলোয় চেষ্টা করব, আমরা যেন আরও কম ভুল করি আরও ভালো করতে পারি।’

 গত দুই বছরে দেখা মিলেছে অন্য তাসকিনের। আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা তাঁর আরও উজ্জ্বল হতে পারত, যদি লম্বা সময়ে চোটের সঙ্গে না লড়তে হতো। পারফরম্যান্সও ওঠানামা করেছে অনেকবার। কিন্তু ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে নিজেকে একেবারেই বদলে ফেলেছেন তাসকিন। খোলস বদলে আবির্ভূত হয়েছেন নতুনভাবে। ‘তাসকিন ২.০’ দেখে এখন সবাই মুগ্ধ। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদেরই মাঠে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়কও তাসকিন।

শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ঝলক নয়, তাসকিন এখন নিজেকে ম্যাচ জেতানো বোলার হিসেবেও দাবি করতে পারেন। শুধু নিজের নয়, তাঁর চোখে বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণটাই উন্নতি করছে, ‘আমরা সবাই উন্নতি করছি। শুধু উন্নতি নয়, আমাদের সবার স্বপ্ন, একদিন বিশ্বমানের পেস বোলিং ইউনিট হব। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বলে বলে ভালো করা কঠিন। একদিন একটুবার বের হবে, আরেক দিন ম্যাচ জেতাব। সবারই সাফল্যের ক্ষুধা আছে। খারাপ সময়ে একে অপরের পাশে থাকছি। একই প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি। প্রক্রিয়াটা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’

পাশে থাকার একটা উদাহরণ দেখা গেল সংবাদ সম্মেলনে। তাসকিনকে বলতে হলো সতীর্থ মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েও। ফিজ গতকাল উইকেট না পেলেও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত বোলিংই করেছে, ৪ ওভারে দিয়েছে ২০ রান। ফিজের পারফরম্যান্স যতই ওঠানামা হোক, তাসকিন তাঁর পাশে থাকছেন, ‘একজন ক্রিকেটারের খারাপ সময় যেতেই পারে। আমি যা দেখছি, মোস্তাফিজ ভালো বোলিং করছে। ও অনেক কঠোর পরিশ্রম করছে। প্রক্রিয়াটা খুব ভালোভাবেই মেনে চলছে। দ্রুতই দেখবেন যে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সে আমাদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। সে চ্যাম্পিয়ন বোলার। দুই-একটি ম্যাচ ভালো যায়নি। তবে সে সামনে ভালো করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত