Ajker Patrika

শিক্ষার্থীদের মুখেও আতঙ্কের ছাপ

সি এস এম তপন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) 
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৮
শিক্ষার্থীদের মুখেও আতঙ্কের ছাপ

চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে স্কুলে আসছে পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে ‘হোম ভিজিট’ শুরু করেছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন।

তিনি বলেন, ‘গুমোট একটা অবস্থা ছিল। ভোটের সহিংসতার পর থেকে বলা যায়, পুরো এলাকা মানুষশূন্য। এখন এলাকায় মানুষজন ফিরতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে, তবে সন্তোষজনক নয়। আমরা তাদের স্কুলে আসতে বলছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি তারা না আসে, তাহলে পিছিয়ে পড়বে। করোনায় দীর্ঘদিন গেল। এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়। পড়াশোনা নিয়ে মূল্যায়ন চলছে। সে কারণে তাদের উপস্থিতি দরকার।’

এর আগে ২৮ নভেম্বর উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রটিতে সহিংসতায় নিহত হন বিজিবির ল্যান্স নায়েক রুবেল মণ্ডল। এ ঘটনায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ললিত চন্দ্র রায়। ঘটনার পর থেকে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান গ্রেপ্তার-আতঙ্কে। তবে মামলায় যাতে নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান। তিনি জানান, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তকাজ চলছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রকৃতপক্ষে সহিংসতায় যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সরেজমিনে পশ্চিম দলিরাম, মাঝাপাড়া, বানিয়াপাড়া, দালালপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, সহিংসতার ২০ দিনেও খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি এলাকাটিতে। এখনো তেমন খোলেনি দোকানপাট। লোকজনের জটলা নেই আশপাশ কিংবা বাজারঘাটে। এ ছাড়া কিছু মহিলা এলাকায় এলেও সন্ধ্যা নামার আগে তাঁরা অন্যত্র চলে যান। সঙ্গে সন্তানদেরও নিয়ে যান। সকাল হলে আসেন আবার সন্ধ্যার আগে কাজ সেরে চলে যান।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক সৌদি আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৯ নভেম্বর থেকে চার দিন আমরা একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করায় স্কুলের মাঠে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। এই কয়েক দিন তো ছিলই না, পরে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেমন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর থেকে কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে আসা শুরু করে, যা অব্যাহত রয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার প্রবণতা দেখা গেছে মামলার প্রধান আসামি মারুফ হোসেন অন্তিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে।’ মাঝাপাড়া এলাকার মৌসুমী বেগম বলেন, ‘আয় উপার্জন করি, সংসার চালায় পুরুষ মানুষেরা। ওমরায় বাড়িছাড়া। অনেক দিন হয়া গেল ভয়ে বাড়ি আইসেছে না। পুলিশ বলি ধরি যাইবে এই জন্যে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা অপরাধী তাদের ধরুক, আর যারা দোষ করে নাই, ওইলা মানুষোক যেন না ধরে। ভয়ে আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ি পালাইছে মানুষগুলা। অনেক মহিলাও চলি গেছে। সঙ্গে ছাওয়ালাক নিয়া গেছে ওই জন্যে স্কুলে যাবার পায়ছে না ওমরা।’ এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আসাদুর রহমান বলেন, ‘এলাকা স্বাভাবিক হয়নি এখনো। পাড়াগুলো পুরুষ এমনকি মহিলারাও নাই। অনেকে আবার গরু ছাগল ধরি পালে গেছে। কিছু মহিলা মানুষ আছে, তারাও আতঙ্কে দিন কাটায়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরপরাধ যাতে কেউ গ্রেপ্তার না হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করলে অনেকটা ভীতি কেটে যাবে।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতার পর কিছুদিন আলামত হিসেবে বিদ্যালয়টি আয়ত্তে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনী। এখন তাদের আয়ত্তে নেই।  বিদ্যালয় খোলা হয়েছে এবং  শিক্ষকেরা নিয়মিত যাচ্ছেন, তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ঘাটতি রয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে হোম ভিজিট করার জন্য।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

মহিলা মাদ্রাসা থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত