Ajker Patrika

এবার কি ভোটেই সভাপতি?

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৩: ২৯
Thumbnail image

প্রায় ১০ বছর পর রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে ২৪ মে। সম্মেলনে দলের বর্তমান সহসভাপতি ও পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা নিজেকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এতে ওই পদে ২৬ বছর পর ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হতে পারে বর্তমান সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে।

এদিকে এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক মুছা মাতব্বরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন। সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা বাড়ছে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে ৮ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। ১৯৯৬ সালের সম্মেলনের পর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে আসছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।

এদিকে সম্মেলন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। জেলা কমিটির একটি অংশের কাউন্সিলর নিখিল চাকমার পক্ষে কাজ করছে। তবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকার সুবাদে অনুগত ও জেলা পরিষদের সুবিধাভোগী অপর অংশের কাউন্সিলরেরা দীপংকর তালুকদারের পক্ষে কাজ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গত জেলা পরিষদের সদস্য বলেন, ‘দলটি আর আগের মতো নেই, তা সবাই ধরে নিতে পারেন। পরিবর্তনের ডাক যেহেতু এসেছে, সেহেতু ভাবতে হবে।’

ওই নেতা আরও বলেন, ‘দলের বিভাজন তৈরি হওয়ার পেছনে জেলা পরিষদ গঠন প্রক্রিয়া বড় কারণ। দলে উচ্চশিক্ষিত অনেক ব্যক্তি থাকলেও তাঁদের কোথাও স্থান হচ্ছে না। একক সিদ্ধান্তে এত বড় দল চলতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে এত বছর ধরে দলটি দীপংকর তালুকদারের একক সিদ্ধান্তে চলছে।’

দলের একাংশের নেতারা বলছেন, জেলা পরিষদের তিনবার সদস্য হয়েছেন, এমন লোকও আছেন। অথচ দলেন অনেক নেতার প্রায় দৈন্য অবস্থা। এত বড় দলের সভাপতি হলেও জেলা পরিষদ গঠনে কারও মতামত নেন না দীপংকর। এসব কারণে দলের ভেতর ক্ষোভ জমেছে। নির্বাচন না হলে কোন্দল, ক্ষোভ আরও বাড়বে।

দলের একটি সূত্র জানায়, ১৮ মে বিকেলে রাঙামাটির দশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রুদ্ধতার বৈঠক করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। সেখানে সবাইকে এবার দীপংকরকে বিজয়ী করার অনুরোধ করেন তিনি। বৈঠকে অংসুই প্রু বলেন, বয়সের কারণেই দীপংকর তালুকদার আর বেশি দিন রাজনীতি করতে পারবেন না। এবার সুযোগ দিলে আগামী সম্মেলনে তিনি সসম্মানে সরে দাঁড়াবেন। এজন্য নিখিল চাকমাকেও প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ জানানো হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের এবার সম্মেলনে কাউন্সিলর হয়েছেন ২৪৬ জন। এই কাউন্সিলরেরা সব প্রার্থীকে আশ্বাস দিচ্ছেন। কাপ্তাই উপজেলার এক কাউন্সিলর নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থীকে বুঝতে দিচ্ছি না, কাকে সমর্থন দিচ্ছি। যে প্রার্থী আসছেন, তাঁর সঙ্গে বসছি, ভোটের আশ্বাস দিচ্ছি। কারণ সব প্রার্থী হেভিওয়েট, জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। আপাতত কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আমরা কারও বিদ্বেষভাজন হতে চাচ্ছি না। সম্মেলন হয়ে গেলে তাঁদের কাছে আমাদের যেতেই হবে।’

নিখিল চাকমার প্রার্থী হওয়া বিষয়ে দীপংকর বলেন, ‘আরও কে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে জানা যাবে। আমরা দেখি সম্মেলনে কোনো কোনো জেলায় ২২-২৩ জন প্রার্থী হয়। এভাবে যত প্রার্থিতা আসবে তত দল শক্তিশালী হয়। এটি খারাপ কিছু না।’

নিখিল চাকমা বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলররা আমাকে সভাপতির পদে প্রস্তাব করেছেন। তাঁদের প্রতি সম্মান রেখে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জয় নিয়ে আমি দৃঢ় আশাবাদী। কারণ আমার প্রতি নেতা-কর্মীদের অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি সভাপতি হলে দলের যে আদর্শ লক্ষ্য তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাব। আওয়ামী লীগ সরকারে যে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে তা অব্যাহত রাখতে কাজ করব।’

দলটির সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানায়, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকতে না পারায় তা স্থগিত রয়ে যায়। এরপর করোনার কারণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে ২৪ মে সম্মেলনের দিন ঠিক করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত