Ajker Patrika

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম

রকিব হাসান নয়ন, মেলান্দহ (জামালপুর)
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১৫: ১০
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম

জামালপুরের মেলান্দহ সরকারি কলেজের তিনটি ভবনের মধ্যে দুটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনতলা বিজ্ঞান ভবনটি ২০০৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেখানে এখনো পাঠদান চলছে। আর দোতলা প্রশাসনিক ভবনটি ২০১৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। দুই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে এখনো সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জামালপুর শিক্ষা প্রকৌশল অফিস থেকে বলা হয়েছে, কলেজের দুটি ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুটি ভবনই ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পে ভবন করার জন্য একটি প্রস্তাব প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলান্দহ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনে শেওলা জমে রয়েছে। বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলার বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের রড। পিলারে ফাটল ধরেছে। দরজা-জানালাগুলো ভেঙে পড়েছে। ভবনে প্রবেশপথের প্রথম গেট ভেঙে পড়ে আছে। প্রশাসনিক ভবনের একটি রুমে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, পলেস্তারা যেন খসে না পড়ে তার জন্য কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিনা আক্তার বলে, ‘ক্লাসে ঢুকলে ভয় লাগে, কখন যে ভেঙে পড়ে। আতঙ্ক নিয়ে কি ক্লাস করা সম্ভব? যদি কোনো সময় ভূমিকম্প হয় সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়বে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করে যাচ্ছি। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আল্লাহ না করুক, আমরাও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।’

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলে, ‘আমার যেদিন প্রথম ক্লাস হয়, ওই দিন চোখের সামনে শ্রেণিকক্ষের জানালা ভেঙে পড়ে। কিছুদিন আগে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি রুমে পড়তে শুরু করে। পরে ওই রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সব ক্লাসরুমের একই অবস্থা। পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে।’

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. লিটন বলে, ‘ভেঙে পড়ার ভয়ে বাড়ি থেকে কলেজে আসতে দেয় না মা। কখন যে ভেঙে পড়ে, এই আতঙ্ক সব সময়। কলেজের সব ক্লাসরুমে একই অবস্থা। সিঁড়ির ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভেঙে পড়ার ভয় নিয়েই মাঝেমধ্যে ক্লাস করি। কলেজে শিক্ষকও কম। শিক্ষকেরা আসার কিছুদিন পরেই কলেজের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ দেখে অন্য কলেজে চলে যান।’

আমিনুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমি একদিন কলেজে গিয়েছিলাম এক দরকারে। গিয়ে দেখি ছাদ থেকে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে রড দেখা যাচ্ছে। তার পর থেকে আমার ছেলেকে আর কলেজে যেতে দেইনি। টিসি নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি করিয়ে দেব এখন।’

পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সব সময় আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করাতে হয়। কখন যে কী ঘটনা ঘটে। আমাদের সব সময় আতঙ্কে দিন কাটে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

মেলান্দহ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাসান তৌফিক মো. আলী নূর বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি কলেজের অবকাঠামো অত্যন্ত নাজুক। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের একাংশ ও বিজ্ঞান ভবন মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ও আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। কলেজে কর্মকর্তার সংখ্যাও কম। কলেজে অধ্যক্ষসহ ৬২টি পদ থাকা দরকার। রয়েছে মাত্র ১৬ জন কর্মকর্তা।’

জামালপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কলেজের ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটি ভবন ২০০৯ সালে ও ২০১৮ সালে আরেকটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ নামে একটি প্রকল্প আছে। সেই প্রকল্পে সংসদ সদস্যের ডিও লেটারসহ ছয়তলা ভবন করার জন্য প্রস্তাব প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত