Ajker Patrika

আয়াকে ব্যাগ দেন ইনচার্জ

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৫: ৪৩
Thumbnail image

‘আমি নাইট ডিউটি করি সকালে বাড়ি গেছি। বেলা ১১টার দিকে আমাকে মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ শানু আপা ফোন দিয়ে বলেন, “একটু আয় তো।” আমি হাসপাতালে গিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করলে উনি আমার হাতে একটি ব্যাগ দিয়ে বলেন, “আমার বাসায় এটা রেখে আয়।” এ জন্য আমার হাতে উনি ১০০ টাকাও দেন। ব্যাগের ভেতর কী ছিল আমি দেখি নাই।’ কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সরকারি ইনজেকশন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার সার্জারি ওয়ার্ডের সাবেক আয়া রাশেদা বেগম (৩০)।

এর আগে ৭ এপ্রিল রাশেদা বেগম ওষুধ পাচারের মামলায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ঈদুল ফিতরের আগে জামিনে বের হন রাশেদা।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাশেদার স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা শানুর পুরো নাম শাহানাজ সিদ্দিকা শানু। ওষুধ পাচারের সময় তিনি হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের (পুরুষ) ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রাশেদা বলেন, ‘শানু আপার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে হাসপাতাল চত্বরে আমার গ্রামের বাড়ি এলাকার এক ভাবির দেখা পাই। উনাকে বলি ব্যাগটা একটু ধরি থাক, আমি পান খায়া আসি। হাসপাতাল গেইট থাকি পান নিয়া আসি দেখি ওই ভাবিক পুলিশ আটক করছে। তখন আমি শানু আপাকে বললে তিনি আমাকে মোবাইল ফোন বন্ধ করি পালানোর কথা বলে।’

এর আগে কখনো ওষুধ পাচারে অংশ নিয়েছিলেন কি না—এমন প্রশ্নে রাশেদা বলেন, ‘আমি আগে কখনো এসব কাজ করি নাই।’

প্রথমে পলাতক থাকলেও পরে আত্মসমর্পণের কারণ সম্পর্কে রাশেদা বলেন, ‘আমি জানতাম না ব্যাগের ভেতর কী আছে। শানু আপা আমাকে ডেকে ব্যাগটা তার বাসায় রেখে আসতে বলেছে। আমার ব্যাগ না। আমি কেন দায় নেব। এ জন্য আমি পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দিছি। পুলিশ ও আদালতের বিচারকের কাছে একই জবানবন্দি দিয়েছি।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওষুধ চুরির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে। তবে তদন্তে কাকে দায়ী করা হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ শাহানাজ সিদ্দিকা শানুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ওয়ার্ড ইনচার্জদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে প্রতি ওয়ার্ডে ১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন প্রকারের মেডিসিনের স্টোর অর্ডার দেওয়া হয়। ওই ওষুধগুলোর দায়িত্ব ওয়ার্ড ইনচার্জদের কাছেই থাকে। ১৭ মার্চ উদ্ধার হওয়া মেডিসিন ও ইনজেকশনগুলো ওয়ার্ড ইনচার্জদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া মেডিসিন থেকে পাচার করা হচ্ছিল বলে হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গেলে মেডিসিন ওয়ার্ডের সাবেক ইনচার্জ শানুকে পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে তিনি হাসপাতালে আসছেন না। তাঁর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শহিদুল্লাহ লিংকন বলেন, ‘আয়া রাশেদা কার নাম বলেছে, সেটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার উপপরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘রাশেদা ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হাসপাতালের একজন ইনচার্জ তাঁকে মেডিসিন ভর্তি ব্যাগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তদন্ত শেষে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

এর আগে ১৭ মার্চ ইনজেকশন পাচারের অভিযোগে শাহেদা বেগম নামে এক নারীকে ব্যাগভর্তি তিন শতাধিক সরকারি ইনজেকশনসহ হাতেনাতে আটক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে আটক শাহেদা বেগম ও হাসপাতালের মাস্টাররোলে কাজ করা রাশেদার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত