Ajker Patrika

মৃৎশিল্পনির্ভর পালপাড়া

মোমেনুর রশিদ সাগর, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) 
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৩৩
মৃৎশিল্পনির্ভর পালপাড়া

একটা সময় মানুষের ব্যবহার্য পণ্যের প্রায় সবটাই ছিল মৃৎশিল্পনির্ভর। সময়ের ব্যবধানে সে স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের দ্রব্য। তারপরেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পলাশবাড়ীর পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা।

সরেজমিনে পৌরশহরের হিজলগাড়ী গ্রামে দেখা যায়, পৈত্রিক পেশা-ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে দিন-রাত লড়াই করে যাচ্ছেন পালপাড়ার প্রতিটি বাড়ির মৃৎশিল্পী নারী-পুরুষেরা। কেউ ব্লেড দিয়ে মাটি কেটে পানি মিশে ছানছেন, কেউবা সেই মাটি দিয়ে যান্ত্রিক মেশিনে তৈরি করছেন বিভিন্ন পণ্য, কেউবা সেগুলো রোদে শুকাতে ব্যস্ত, কেউ রঙে রাঙিয়ে তোলার কাজ করছেন, আবার কেউ সেগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী রূপান্তরের লক্ষ্যে আগুনে পুড়ছেন।

এদেরই একজন ষাটোর্ধ্ব পুলিন চন্দ্র পাল। এ বয়সে বিদ্যুৎচালিত মেশিনে বসে তৈরি করছেন ফুলদানিসহ পূজাকেন্দ্রিক বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী। পাশেই রঙের কাজে ব্যস্ত তাঁর স্ত্রী মধু রানী। অন্যদিকে স্ত্রী ঝর্ণা রানীকে নিয়ে রং করা পণ্যগুলো আগুনে পোড়াচ্ছেন ওই দম্পতির ছেলে খোকন চন্দ্র পাল। শেবেন চন্দ্র পাল নামে এ দম্পতির আরও এক ছেলেসহ পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১০ জন। এ পেশাতেই মিটছে পরিবারটির মৌলিক চাহিদা।

পুলিন চন্দ্র বলেন, ‘আগে ভাঁড়ে মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে গ্রামে-গ্রামে বিক্রি করতাম। এর মধ্যে ছিল মাটির হাঁড়ি, কলসি, বাসন, সানকি, পাতিল, মিষ্টি-দইয়ের পাতিল, বাটি, মাটির ব্যাংক, ফুলদানি, ছাইদনি, কলমদানি, ধুপদানি ও পুতুলসহ নানা খেলনাসামগ্রী। বর্তমানে এসব সামগ্রীর পুরোটাই দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যাদি।’

ছেলে খোকন চন্দ্র পাল জানান, ‘প্রথমে পণ্য তৈরির উপযুক্ত মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ভালোভাবে কেটে ও ছানার পর তা দিয়ে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এসব পণ্য তৈরি করতে হয়। এরপর আকাশ মেঘলা না থাকলে শুকানোর জন্য দুদিনের রোদ যথেষ্ট। এরপর শুরু হয় রং করার পালা। শেষে টানা তিন ঘণ্টা আগুনে পুড়িয়ে তা ব্যবহারের উপযুক্ত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ফুলের টব আকার ভেদে ৬ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে নার্সারি মালিকদের ক্ষেত্রে হাজার প্রতি দাম কম রাখা হয়। এ ছাড়া দইয়ের খুঁটি প্রতি হাজার ১৬শ টাকা এবং দইয়ের প্রতিটি সরা (বড় খুঁটি) ৮ টাকা দরে বিক্রি হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নয়ন জানান, মৃৎশিল্পীরা চাইলে তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া করোনার সময় তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত